শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

ত্রাণ চাওয়ায় যুবককে তুলে নিয়ে পেটালেন চেয়ারম্যান!

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০২০, ৩:১৮ পিএম

গরিবের জন্য ত্রাণ চাওয়ায় কুমিল্লার দেবিদ্বারে আশেকে এলাহী নামের এক যুবককে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়েছেন এক ইউপি চেয়ারম্যান। এসময় ওই যুবককে ৪ ঘণ্টা আটকে রেখে কয়েক দফা নির্যাতনও চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আব্দুল হাকিম খাঁন উপজেলার ১০নং দক্ষিণ ঘুনাইঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এদিকে, এই ঘটনার একটি ভিডিও বোরবার (১২ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। তবে ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (১১ এপ্রিল) ওই ইউপি ভবনের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে। নির্যাতিত যুবক আশেকে এলাহী ঘুনাইঘর এলাকার বাসিন্দা।

আশেকে এলাহী জানান, বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষদের মধ্যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে স্থানীয় ১১০ জনকে ত্রাণ সামগ্রী দিয়েছেন। এরপর স্থানীয় আরও অনেকে তার আছে এলে তিনি তাদের ত্রাণ সামগ্রী দিতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম খাঁনকে অনুরোধ জানান। এজন্য কর্মহীন হয়ে পড়া ৫৯ জনের একটি তালিকা নিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে গেলে চেয়ারম্যান তার সঙ্গে যাচ্ছে তাই ব্যবহার করেন। এরপর চেয়ারম্যান ত্রাণ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি তালিকা নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছেও যান। এদিকে, বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখালেখি করার অভিযোগ এনে চারজন চৌকিদার দিয়ে আশেকে এলাহীকে বাড়ি থেকে তুলে আনতে পাঠান ওই চেয়ারম্যান।

আশেকে এলাহীর অভিযোগ, শনিবার দুপুর ১২টার দিকে চেয়ারম্যান আমার বাসায় চারজন চৌকিদার পাঠান। তারা এসে আমাকে বলে যাদের তালিকা দিয়েছি তাদের ত্রাণ দিবে। চেয়ারম্যান আমাকে ডেকেছেন। আমি তাদেরকে তালিকা নিয়ে যেতে বললে তারা আমাকে যেতে হবে বলে জানায়। পরে আমি চেয়ারম্যানকে ফোন করি। তিনি আমাকে যেতে বলেন। এরপর ফোন চৌকিদারদের দিলে তিনি আমার সামনে চৌকিদারদের বলেন, আমার যেন পা মাটিতে না পড়ে সেভাবে তুলে নিয়ে যেতে। পরিস্থিতি দেখে স্থানীয়রাও আমার সঙ্গে চেয়ারম্যানের কাছে যান। ওই যুবকের অভিযোগ, বাড়ি থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বন্দী করা হয়। এরপর তাকে দফায় দফায় তিনবার মারধর করা হয়েছে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় এবং ফেসবুকে চেয়ারম্যানের পক্ষে ভিডিও বার্তা দেওয়ার পর বিকাল ৪টায় তাকে সেখান থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে কোনো সক্রিয়তা দেখালে তার বিরুদ্ধে পঞ্চাশটির বেশি মামলার হুমকি দেন চেয়ারম্যান। এছাড়া বাড়াবাড়ি করলে তাকে জামায়াত-শিবির বানিয়েও মামলায় জড়ানো হবে বলেও হুমকি দেন তিনি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম বলেন, আমি তাকে মারধর করিনি। সেখানে কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি। আমি তাকে কেন মারব, সে আমার ভাতিজা। আর আমি তার বিরুদ্ধে কেন পঞ্চাশটা মামলা করব?
এদিকে, ওই যুবক যেই তালিকা নিয়ে ত্রাণের জন্য অনুরোধ করেছিলেন, সেসব ব্যক্তি ও পরিবার ত্রাণ পাওয়ার যোগ্য কি না এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, তালিকায় থাকা সবাই ত্রাণ পাওয়ার যোগ্য। তবে এলাহীর করা তালিকার প্রায় অর্ধেক নাম আমার তালিকায় রয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন ধরনের ভাতা পান বলে তাদের নাম তালিকায় রাখা হয়নি। আর সে এক বাড়ি থেকে এতোজনের নাম দিলে হবে নাকি, সবাইকেতো দেওয়া সম্ভব না? আমাদেরকে বলা আছে, যারা বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা পায়, তারা করোনাভাইরাসের চাল পাবে না।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহিরুল আনোয়ার বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে আমি বিষয়টি জানতে পেরেছি। তবে এ ঘটনায় কেউ থানায় অভিযোগ করেনি এখনো। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন