ঝালকাঠির গ্রাম কিংবা শহর, সবখানেই এখন নারায়ণগঞ্জ ফেরতদের নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সদরসহ চার উপজেলায় দুই হাজারেরও বেশি মানুষ প্রবেশের খবর পাওয়া গেছে। তবে জেলা প্রশাসনের কাছে অন্যজেলা থেকে আসা ৩২০ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার তথ্য রয়েছে। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় এদের দেখা মিলছে। বাড়ির বাইরে বের হয়ে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে সবখানে। তারা যেমন করোনা আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন, তেমনি ভয়ে তাদের থেকে দূরে থাকছেন প্রতিবেশীরা। নারায়ণগঞ্জফেরতদের বিষয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও সংবাদকর্মীদের কাছে বিভিন্ন স্থান থেকে ফোনে অভিযোগ আসছে। এদিকে আইইডিসিআরের সংবাদ নিয়মিত অনলাইন প্রেস ব্রিফিংয়ে নতুন করে ঝালকাঠি জেলাকে করোনা ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করায় বিদেশ ও নারায়ণগঞ্জফেরতদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলাবাসী।
জানা যায়, ঝালকাঠি জেলার কয়েক হাজার মানুষ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে চাকরি ও ব্যবসা করেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা লকডাউন ও ঢাকায় ‘অঘোষিত লকডাউন’ চলায় সেখান থেকে পালিয়ে ঝালকাঠির গ্রামের বাড়িতে প্রতিদিনই আসছে মানুষ। কর্মস্থল ছেড়ে যারা আগে আসতে পারেনি, তারা তিন দিন ধরে এ জেলায় প্রবেশ করেছেন। এদের অনেকেই জ্বর ও সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত। শহর থেকে কিছুটা দূরের একটি গ্রামে ঢাকাফেরত তিনজনের করোনা সনাক্ত হয়েছে। গত ৯ এপ্রিল স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠায়। শনিবার বিকেলে পরীক্ষার রিপোর্ট আসে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। এতে তিনজনের করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়। এ অবস্থায় তাদের প্রতিবেশীরা পড়েছেন বিপাকে। অনেকে আবার বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন, যাচ্ছেন বাজারেও। যদিও তাদের বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন। লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে ওই গ্রামটি।
নলছিটির মালিপুর গ্রামের মামুন গাজী বলেন, আমাদের বাড়ির আশেপাশের অনেক লোক নারায়ণগঞ্জ থাকেন। তারা সেখান থেকে পালিয়ে এখন বাড়িতে ফিরেছেন। শুনেছি, অনেকেই অসুস্থ। যারা সুস্থ আছেন, তারা অবাধে ঘোরাফেরা করছেন। তাদের নিয়ে আমরা আতঙ্কিত।
ঝালকাঠি শহরের কৃষ্ণকাঠি এলাকার মশিউর রহমান বলেন, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে অনেকেই শহরে প্রবেশ করেছে। অনেকে বের হচ্ছে না, বেশিরভাগই বাইরে ঘোরাফেরা করছে। তাদের কেউ কিছু বললেও শুনছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের বিকনা এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, অসুস্থ হয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে অনেকে এসে ঘোরাফেরা করছিলো। জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটরা গিয়ে তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলেছেন। কিন্তু তাঁরা চলে যাওয়ার পরেই আবার ঘর থেকে বের হচ্ছেন এসব ব্যক্তিরা।
কাঁঠালিয়া সদরের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট তরিকুল ইসলাম বলেন, অনেক মানুষই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে এলাকায় এসেছে। তাদের মধ্যে অনেকের শরীর খাপার রয়েছে। এ অবস্থায়ও তারা রাস্তাঘাটে বের হচ্ছে। অনেক সময় পরিচিতজনতের স্বজন হওয়ায় তাদের কেউ কিছু বলছে না।
রাজাপুরের পুটিয়াখালী এলাকার সৈয়দ হান্নান বলেন, প্রতিদিনই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে মানুষ আসছে। তারা কারণে অকারণে রাস্তায় ঘুরছেন। এতে আমরা আতঙ্কি হয়ে পড়েছি।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, আমাদের কাছে এ ধরণের খবর আসলেই সংশ্লিষ্ট ইউএনওদের স্পটে পাঠানো হচ্ছে। অন্যজেলা থেকে যারা এসেছেন, তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারা এ আদেশ অমান্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন