কক্সবাজারে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ যাতায়াতকারীদের মাধ্যমে। এ পর্যন্ত কক্সবাজারে সনাক্ত ৫ জন রোগীর সকলেই ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ ফেরত। নাইক্ষ্যংছড়িতে সনাক্ত ব্যক্তি ঢাকা থেকে তাবলীগ ফেরত। আর মহেশখালীর তিনজন ও টেকনাফের একজন সবাই নারায়ণগঞ্জ ফেরত। সনাক্ত ব্যক্তিদের কক্সবাজারে যাতায়াত স্থানগুলো স্থানীয় প্রশাসন ইতোমধ্যে লকডাউন করেছেন। তাই ঢাকা ফেরত ও নারায়ণগঞ্জ ফেরত ব্যক্তিদের নিয়ে আতঙ্ক রয়েছে কক্সবাজারে।
কিন্তু এই লকডাউনেও কক্সবাজার-ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ নিয়ম লঙ্ঘন করে যাতায়াত করছে শতশত লবণ ট্রাক। জানা গেছে, গত তিনদিনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের ৩ শতাধিক ট্রাক লবণ নিতে ঢুকেছে শিল্প নগরী ইসলামপুরে। বিসিকের খাতায়ও নিবন্ধিত আছে ২৬৭ টি ট্রাক। কিন্তু নির্দেশনা মতে এসব ট্রাকে সঠিক মাত্রায় জীবাণু নাশক স্প্রে করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত নয়। এতে করে সন্দেহ দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয়দের যে বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে তা হলো- স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দৈনিক এত ট্রাক আসতো না। করোনা আতংকের মাঝেও এতগুলো লবণবাহি ট্রাক কেন আসছে? এত লবণ কোথায় যাচ্ছে, তা খতিয়ে দেখারও দাবি তোলে তারা। তাছাড়া এসব ট্রাকে যাতায়াতকারী শ্রমিকরা করোনা ছড়াচ্ছে কি না এনিয়ে রয়েছে তারা আতঙ্কে।
অনেকের মতে, কক্সবাজারে লবণের দাম কম হওয়ায় নারায়নগঞ্জ-ঢাকাকেন্দ্রিক মজুদ গড়ে তুলছে কয়েকটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। তাই স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যে ট্রাক ২৫-৩০ হাজার টাকা দিয়ে পাওয়া যেত, সেই ট্রাক ৪৫ টাকার চেয়ে বেশি ভাড়া দিয়েও লবণ নিয়ে যাওয়া
হচ্ছে।
বিসিকের হিসেব অনুযায়ী, প্রতি ট্রাকে গড়ে ১৪ মে.টন করে অন্তত ৩লাখ ৭২৪ হাজার মে.টন লবণ (ক্রাশ করা) সরবরাহ করা হয়েছে। যেখানে অধিকাংশ শিল্প লবণ। ইসলামপুরে প্রতি কেজি লবণের দাম রাখা হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৬ টাকা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রতি ট্রাকে চালক-হেলপারসহ অন্তত ৩ জন করে লোক আসে। তারা বটতলী স্টেশনে আসার পরেই জীবাণুনাশক স্প্রে ও গোসল করার কথা থাকলেও কেউ তা মানে না। দোকানপাটে বসে দেদারসে আড্ডা জমিয়ে যাচ্ছে।
জীবাণু নাশক স্প্রে ছাড়া কোন ট্রাক লবণ পরিবহণে না ঢুকানোর কথা থাকলেও সঠিক মাত্রায় স্প্রে করা হয় না বলে জানা গেছে । ওসব ট্রাক যেনতেনভাবে ঢুকে যাচ্ছে ইসলামপুরে। তাছাড়া কক্সবাজারের বাইর থেকে আসা ট্রাক চালকেরা ইসলামপুর প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তার কার্যকারিতা নেই। তবে লবণ মিল মালিকদের দাবি, স্থানীয় ট্রাক চালক সংকটে পড়ে বাধ্য হয়ে অনেক সময় একই চালক ব্যবহার করতে হয়। তবে তারা সতর্ক।
বিসিক কক্সবাজারের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান জানান, গত ১৮ এপ্রিল ৯৬টি, ১৯ এপ্রিল ৭৮ টি এবং ২০ এপ্রিল ৯২টি লবণবাহি ট্রাক ঢুকেছে। যেগুলো তাদের নির্ধারিত খাতায় লেখা হয়েছে। ইসলামপুরে বর্তমানে ৩২ টি মতো লবণ মিল চালু রয়েছে। প্রতি মিল মালিকদের সরকারি নির্দেশনা মতে হাইজেনিক ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
তিনি জানান, অধিকাংশ মিলে শ্রমিকদের মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস নেই। সেখানে মানা হয় না সরকারি আদেশ। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন