নড়াইল জেলা সংবাদদাতা : নড়াইল একটি কৃষিপ্রধান জেলা। বরাবরই এ জেলায় উদ্বৃত্ত ফসল উৎপাদিত হয়। স্থানীয় চাহিদা মেটানোসহ বিভিন্ন জেলায় তা সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সা¤প্রতিক সময়ে বসতবাড়ি , মৎস্যঘের, ইটভাটা, বিভিন্নস্থাপনা এবং নদীভাঙ্গনের কারণে কৃষিজমির পরিমান কমছে ২১ হাজার ৩০১ একর। পরিকল্পতিভাবে ভূমি ব্যবহার করা না হলে ভবিষ্যতে কৃষি জমির সংকট দেখা দিতে পারে। স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য উৎপাদন ও বাধাগ্রস্থ হতে পারে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জেলার এখন মোট আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ৭৬ হাজার ৮০৭ হেক্টর। কিন্তু এর মধ্যে পতিত জমির পরিমান কত, সে সম্পর্কে কোন নিভর্রযোগ্য তথ্য নেই। জেলার এখন কৃষিজমির উপর বসতবাড়ি, মাছের ঘের, ইটভাটা এবং বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকারি ভাবে কৃষিজমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। তাছাড়া নদীভাঙনের কারণে কৃষিজমি হ্রাস পাওয়ার ঘটনাও থেমে নেই। সব মিলিয়ে গত এক দশকে জেলায় কৃষিজমি হ্রাস পেয়েছে ২১ হাজার ৩০১ একর। সূত্র আরো জানায় সরকারিভাবে দুটি পিকনিক স্পটের জন্য ২১ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন আরো ৩৮২ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। তাছাড়া গত এক দশকে চার হাজার ৯৬৯ একর কৃষিজমিতে বসতবাড়ি গড়ে উঠেছে। ৬০০ একর কৃষিজমির উপর ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে। ইটের কাঁচামাল হিসেবে আরো সাত হাজার একর উর্ধ্বে কৃষি জমির তফসিলে ব্যবহার করা হচ্ছে। চার হাজার ৩০০ একরে মৎস্য ঘের গড়ে তোলা হয়েছে। আর নদীভাঙনের কবলে পড়ে চার হাজার ৫০ একর জমি বিলীন হয়ে গেছে। জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এক দশক আগে নড়াইলে জনসংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৭০ হাজার ৩২০ জন। এখন জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮০ হাজার ৭৪৫ জন। একই সঙ্গে ছোট পরিবার সংখ্যা বাড়ছে। গড়ে চার সদস্যের একটি পরিবারের জন্য বসতবাড়ি প্রয়োজন হচ্ছে ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে গত এক দশকে জেলায় ২৭ হাজার ৬০৬টি বসতবাড়ি তৈরি হয়েছে। এসব বাড়ির ৯০ শতাংশই আবার গ্রামে। বসতবাড়ি নির্মাণ চার হাজার ৯৬৯ একর কৃষি জমি হ্রাস পেয়েছে। স্থানীয়রা জানান, আট বছর আগে যে জামিতে ধান, পাট ও রবি শস্য উৎপাদন হতো সেখানে এখন বসতবাড়ি। কৃষি জমির উপর বিলপাড়া, নতুন পাড়া, চরপাড়া, হঠাৎ পাড়াসহ নতুন নতুন বসতি অঞ্চল গড়ে উঠেছে। কোনো এলাকায় একটি নতুন বাড়ি নির্মাণ হলেই সেখানে দ্রত আরো নতুন বাড়ি ও বসতি গড়ে উঠছে। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে জমির দাম কম হওয়ায় কৃষিজমিতে বসতি গড়ে ওঠার হার বেড়েছে বলে তারা জানান। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভুমি অধিগ্রহণ শাখা সূত্রে জানাযায়, গত এক দশকে নড়াইলের তিন উপজেলায় বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ৭৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রেললাইন স্থাপনের জন্য প্রায় ৪০০ একর অধিগ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যার প্রধান অংশই ফসলি জমি। এছাড়া গত এক দশকে নড়াইলে চার হাজার ৩০০ একর কৃষিজমির উপর প্রায় দুই হাজার নতুন মৎস্য ঘের তৈরি হয়েছে। গত ১০ বছরে ৬০০ একর জমিতে প্রায় দেড়শ ইটভাটা তৈরি হয়েছে। ভাটার কাঁচামাল হিসেবে প্রতি বছর ৭০০ একর জমির টপসয়েল কাটা হচ্ছে। গত এক দশকে প্রায় সাত হাজার একর কৃষিজমির মাটি কাটা হয়েছে। জেলার লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলায় রয়েছে মধুমতি নদী। তার দুই পাড়ে রয়েছে ৭৬টি গ্রাম। এর মধ্যে ৫৪টি গ্রাম ভাঙনকবলিত। নড়াইল কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক জানান, ফসলি জমির উপর ইটভাটা করা,তার উপরি ভাগের মাটি কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করার হ্রার বেড়েছে। ফলে ওই সব জমিতে এখন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া কৃষিজমি ব্যবহারের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি ও কার্যকর করা দরকার। অপরিকল্পিতভাবে বসতি স্থাপন করার ক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা এবং মধুমতির ভাঙন রোধে ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছাড়া কৃষিজমি আরো হ্রাস পাবে বলে তিনি জানান। জেলা প্রশাসক মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ জানান, ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়ালে কর-সংক্রান্ত নীতিমালা থাকলে ও ভূমি ব্যবহার নীতিমালা নেই। ফলে মালিক তার প্রয়োজনে যে কোনোভাবে জমি ব্যবহার করতে পারেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আইনগতভাবে বাধা দেয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। তবে কৃষিজমিতে বসতি স্থাপনসহ এর অবাধ ব্যবহারের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অভিহিত করবেন। সবার মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করা দরকার বলে তিনি জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন