শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

হিটলারের আদেশ অমান্য ও অভ্যুত্থান

অ্যাডল্ফ হিটলার-২

দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট | প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০২০, ৮:৫৮ পিএম

২০ এপ্রিল চ্যান্সেরির বাগানের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে তরুণ সদস্যদের হাতে আয়রন ক্রস হস্তান্তর করার জন্য হিটলার তার কারাগারে পরিণত হওয়া ভূগর্ভস্থ অভয়ারণ্য থেকে উপরে উঠে আসেন। অ্যাডল্ফ হিটলার জীবনে শেষবারের মতো জনসমক্ষে উপস্থিত হন। এটি তার ৫৬ তম জন্মদিন ছিল। এ উপলক্ষটি চিহ্নিত করা হয়েছিল রাশিয়ান সৈন্যরা হেরম্যানপ্ল্যাতজে গুলি চালিয়ে এবং কার্স্টডত ডিপার্টমেন্ট স্টোরের বাইরে কয়েকজন লোককে হত্যা করে।
ডগলাস বোটিং ইন দ্য রিইনস অফ দ্য রিইন (১৯৮৫) বইতে সেই বসন্তের কথা লিখেছিলেন, ‘আগুনে কালো হয়ে যাওয়া পরিত্যক্ত উদ্যানগুলো, যেগুলোর মালিক পালিয়ে গেছে বা মারা গেছে, সেগুলোর ধ্বংসাবশেষের মধ্য থেকে লাইলাকের ঘ্রাণ ভেসে আসতো।’
তিনি লিখেছেন, ‘ধ্বংসস্ত‚পের ভেতর থেকে বেড়ে উঠেছিল ক্রোকাসগুলো। বোমা ফাটিয়ে ভেঙে ফেলা গাছগুলোর কান্ড সবুজ পাতায় উপচে পড়ছিল। কেবল পাখিরাই নিখোঁজ ছিল। মগডালে কোনো চড়ুই ছিল না, টিয়ারগার্টেনে কোনো পাখি গাইছিল না।’
যখন হিটলার জানতে পেরেছিলেন যে, ওয়াফেন-এসএস জেনারেল ফেলিক্স স্টাইনার তার সরাসরি আদেশ অমান্য করেছেন, ২২ এপ্রিল শুধুমাত্র শোনানোর জন্য মিত্রজোটের ফাটানো বোমার শব্দে পরাজয়ের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে তিনি পুরোপরি ঘাবড়ে যান। যখন বার্লিন-ড্রেসডেন মহাসড়কে বুসে’র নবম সেনাবাহিনীকে নির্মমভাবে কতল করা হচ্ছিল, ফিইরার বাঙ্কার থেকে দূরে একক শহর পটসডামারপ্লাত্জে পৌঁছে গিয়েছিল রাশিয়ানরা। বোরম্যান একটি টেলিগ্রামে স্বীকার করেছিলেন, ‘রাইখ চ্যান্সেলারি একটি ধ্বংসস্ত‚পের গাদা।’
স্টাইনারের বিচ্ছিন্ন দলটিকে উত্তরদিক থেকে শহর ঘেরাও করে রাখা ঝুকোভের বাহিনীকে আক্রমণ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, যখন থিওডোর বুসে’র অধীনে জার্মান নবম সেনাবাহিনী দক্ষিণ থেকে এক সাড়াশি অক্রমণ চালাচ্ছিল। স্টাইনার তার ইতোমধ্যে নিশ্চিহ্ন হওয়া বাহিনীর মৃত্যুর সম্ভাবনা দেখে হিটলারের অবাস্তব আদেশ প্রত্যাখান করেন।
ফিউরার’র অপ্রকৃতস্থ মনের অবস্থা সম্পর্কে বোটিং লিখেছেন ‘হিটলার ৩ মাস ধরে বাঙ্কারে অবরুদ্ধ ছিলেন এবং বাস্তবতার প্রতি তার উপলব্ধি দ্রুত ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছিল।’ ‘তবুও রাইখ চ্যান্সেলারি বাগানের গভীর মাটির নিচে স্যুপযুক্ত দাগযুক্ত উর্দিপরা অপ্রকৃতস্থ, ক্ষমতাহীন, অল্প বয়সে বৃদ্ধ ব্যক্তিটি নিখুঁত আনুগত্য ও কট্টরতা রক্ষার দাবি এবং তার অস্তিত্বহীন বা অর্ধ-নির্মূলকৃত সেনাবাহিনীকে অবাস্তব আদেশ জারি অব্যাহত রাখে’।
ফিউরার তার চিকিৎসক ডা. ওয়ার্নার হাস’র সাথে দেখা করে যুদ্ধটি প্রথমবারের জন্য হেরে যাওয়ার কথা অশ্রুসিক্তভাবে স্বীকার করেন। পরে একই দিন বিকেলে আত্মহত্যার সর্বোত্তম উপায় নিয়ে পরামর্শ করেছিলেন। ডা. হাস, যিনি নিজেই যক্ষ্মায় মারা যাচ্ছিলেন, তিনিই পিস্তল ও বিষকে একমাত্র সত্যিকারের নিরেট পদ্ধতি হিসাবে সুপারিশ করেন।
লুফওয়াফের সুপ্রিম কমান্ডার হারমান গোয়ারিং যখন বাভারিয়ার বার্খতেসগাদে থেকে হিটলারের উন্মত্ততার কথা শুনলেন, তখন তিনি তাকে টেলিগ্রাম পাঠান। এতে ১৯৪১ সালের অনুশাসন অনুসরণ করে হিটলারকে তার উত্তরসূরি হিসেবে গোয়ারিংয়ের নাম জারি তরে তাকে পদত্যাগ করতে বলেন। সেক্রেটারি মার্টিন বোর্মান দ্বারা প্ররোচিত হয়ে হিটলার ধরে নেন যে, রাইখ্সমারশাল একটি অভ্যুত্থানের পাঁয়তারা করছেন।
তিনি গেরিংকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেন, এসএস দ্বারা তাকে গ্রেফতার করান এবং মৃত্যুদন্ডের হুমকি দেন। ফিল্ড মার্শাল রবার্ট রিটার ভন গ্রাইমকে মিউনিখ থেকে তার বদলে সমন করে আনা হয়। (চলবে)

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Nazmul Huda ৪ মে, ২০২০, ১২:৫০ এএম says : 0
হিটলার ছিলেন সত্তিকারের মহানায়ক দুনিয়া তার বিরুদ্ধে যতই অপপ্রচারণা চালাক না কেন তাতে কিছু যায় আসে না, তিনি জয়ী হলে হয়তো ইসরাইল নামের দখলদারি রাষ্ট্রের উশৃংখল জাতিগোষ্ঠীর নাম নিশানা পৃথিবীর ভিতরে থাকতো না, আমার মতে হিটলার সর্বকালের সর্বযুগের সত্যিকারের মহানায়ক
Total Reply(0)
Nazmul Huda ৪ মে, ২০২০, ১২:৫২ এএম says : 0
১৯৪৪ সাল; জার্মানদের অপরাজেয় খেতাব ম্লান হতে শুরু হয়েছে। স্তালিনগ্রাদে পরাজয়ের পর প্রতিদিনই জার্মানদের ধাওয়া করে আসছে সোভিয়েতরা। পশ্চিমের অবস্থাও খুব সুবিধার না। দুঃসংবাদ আসছে আফ্রিকা থেকেও। সব মিলিয়ে টালমাটাল অবস্থা অক্ষশক্তির। কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা ঠিকই বুঝতে পারলেন, এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন পর বার্লিনে মিত্রবাহিনীর পতাকা উড়বে। সময় থাকতেই রাইখের নীতি নির্ধারণকারীদের নতুন করে ভাবা উচিত। কিন্তু বাস্তবে নির্ধারণকারীদের দিয়ে কোনো নীতি ঠিক হয় না। সমস্ত নীতির মূলেই একজন- অ্যাডলফ হিটলার। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদদের একটি বড় অংশই বিরক্ত মহামান্য ফ্যুয়েরারের উপর। কিন্তু এত সাহস কার! সাহস করে মুখ ফুটে বললেও হিটলার সে কথা শুনলে তো!
Total Reply(0)
মোঃ তোফায়েল হোসেন ৪ মে, ২০২০, ১২:৫২ এএম says : 0
অনেকবারই হিটলারকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে এবং প্রত্যেকবারই তিনি সেটা অগ্রাহ্য করেছেন। বার্লিনে তখন এমন কিছু সামরিক অফিসার এবং রাজনীতিবিদ ছিল, যাদের মনে হয়েছিল, দেশের জনগণকে রক্ষা করতে যুদ্ধের লাগাম টেনে ধরা জরুরি। শাসনতন্ত্রে পরিবর্তন আনা ভীষণ দরকারি। কিন্তু এজন্য ফ্যুয়েরার এবং তার বাধ্যগত কিছু লোকজনকে দৃশ্যপট থেকে সরাতে হবে। নাৎসিদের নজরদারি উপেক্ষা করে খুব গোপনে শুরু হলো এক পরিকল্পনা।
Total Reply(0)
কামাল রাহী ৪ মে, ২০২০, ১২:৫৪ এএম says : 0
বিভিন্ন পদের সামরিক অফিসার থেকে শুরু করে কয়েকজন রাজনৈতিক একটি বিষয়ে একমত ছিলেন। শাসনতন্ত্রে পরিবর্তনের জন্য হিটলারকে সরাতে হবে। আর হিটলারকে ক্ষমতাচ্যুত করার একমাত্র রাস্তা হত্যা।
Total Reply(0)
রিদওয়ান বিবেক ৪ মে, ২০২০, ১২:৫৪ এএম says : 0
অপারেশন ভ্যালকাইরি এমন সময়ে ঘটা এক ঘটনা, যখন বিশ্বের মানুষ জার্মানি বলতে হত্যা, নির্যাতন আর ধর্ষণকেই বুঝতো। কিছু অভ্যুত্থানকারী এর মধ্যেই বিশ্বকে দেখাতে চেয়েছিলেন, সমগ্র জার্মানিই এক নয়। এই অপারেশন সফল হলে ইতিহাসের চেহারা আজকে অন্যরকম হতে পারতো। হয়তো বার্লিনে উড়তো না সোভিয়েতদের পতাকা, হয়তো জার্মানি দুই ভাগও হতো না!
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন