প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে মালয়েশিয়ায় অভিবাসী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। লকডাউন কিছুটা শিথিল করায় ভিসা পারমিট, ইনস্যুরেন্স ও সিআইডিবি কার্ড (নির্মাণ সেক্টরে কাজ করার অনুমতি পত্র) দেখিয়েই অভিবাসী কর্মীরা স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফি স্ব স্ব কর্মীকেই পরিশোধ করতে হবে। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় যারা টিকে যাবে কেবলমাত্র তারাই কাজে যোগদানের সুযোগ পাবে। এক্ষেত্রে দেশটিতে ঘরবন্দি লাখ লাখ অবৈধ অভিবাসী কর্মী স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় দেশটিতে বসবাসকারী দু’লক্ষাধিক অবৈধ বাংলাদেশি কর্মী লকডাউন শিথিল করার পরেও কাজে যোগদানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মালয়েশিয়া থেকে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ ছয় সপ্তাহ পর গতকাল সোমবার থেকে লকডাউন কিছুটা শিথিল করেছে মালয়েশিয়া সরকার। এতে দেশটিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় খুলতে শুরু করেছে। কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য মানুষের চলাচল বেড়েছে। এ অবস্থায় কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ না নেয়া হলে নভেল করোনাভাইরাস পুনরায় আঘাত হানতে পারে। এজন্যই মালয়েশিয়ায় কর্মরত অভিবাসী কর্মীদের জন্য করোনার পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে দেশটির সরকার।
অবশ্য দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার বিধিনিষেধ শিথিল করলেও বেশ কয়েকটি রাজ্য কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে একমত হতে চাইছে না। মালয়েশিয়ার মোট ১৩টি রাজ্যের মধ্যে নয়টির কর্তৃপক্ষ কড়াকড়ি আরো কিছুদিন চালিয়ে নেয়া অথবা বিধিনিষেধ আরো কঠোর করার পক্ষে মত দিয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে গত ১৮ মার্চ লকডাউন আরোপ করে মালয়েশিয়া সরকার। মালয়েশিয়ার জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা মন্ত্রী ইসমাঈল সাবরি ইয়াকুব গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ব্যবসার সব খাতে কর্মরত অভিবাসী কর্মীদের বাধ্যতামূলকভাবে কভিড-১৯ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে পরীক্ষার খরচ তাদেরই বহন করতে হবে।
আজ মঙ্গলবার কুয়ালালামপুরের কোতোয়ারাস্থ রাজধানী রেষ্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী প্রবাসী ব্যবসায়ী কাজী সালাহ উদ্দিন জানান, মালয়েশিয়ায় করোনা ঠেকাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বাধ্যতামূলক করায় দেশটিতে ঘরবন্দি দু’লক্ষাধিক অবৈধ বাংলাদেশি কর্মী সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তারা স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না এবং কাজে যেতে পারবে না। প্রবাসী ব্যবসায়ী বলেন, এসব অবৈধ কর্মী দু’তিন বছর কঠোর পরিশ্রম করে দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট অবদান রেখেছে। তারা বর্তমানে দক্ষ কর্মী হিসেবেই দেশে প্রচুর রেমিট্যান্স পাঠাতো।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কাজী সালাহ উদ্দিন বলেন, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সেক্টরে প্রচুর অভিবাসী কর্মীর ঘাটতি রয়েছে। ভ্রাতৃ-প্রতীম মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশের চমৎকার সর্ম্পক রয়েছে। মালয়েশিয়া সরকার করোনা মহামারীর এ ভয়াবহ সঙ্কটকালে মানবিক দৃষ্টি দিয়ে এসব অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ দিয়ে কাজে যোগদানের ব্যবস্থা করলে তারা দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট অংশিদারের ভূমিকা রাখতে পারবে। তিনি এ ব্যাপারে বাস্তবমুখী উদ্যোগ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামান করেন। মালয়েশিয়ার সিম্বোল চাহায়া(এম) এসডিএন-বিএইচডি’র ডিরেক্টর রাজিবুল হাসান আজ কুয়ালালামপুর থেকে জানান, গত জানুয়ারি থেকে ভিজিট ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে যারা আটকা পড়েছেন তারা লকডাউন ছাড়ার পর পরই কোনো প্রকার জরিমান ব্যতীত বিমানের টিকিট কেটেই দেশে ফেরার সুযোগ পাবেন। তিনি বলেন, দেশটিতে বসবাসকারী অন্যান্য অবৈধ বাংলাদেশিকে এ সুযোগ দেয়া হলে অনেকেই দেশে চলে আসতো।
গত সপ্তাহে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, কুয়ালালামপুরের একটি নির্মাণ প্রকল্পে কর্মরত অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে কভিড-১৯ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। মূলত এরই পরিপ্রেক্ষিতে অভিবাসী কর্মীদের জন্য করোনা পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা আরোপ করল মালয়েশিয়া সরকার।
করোনার কারণে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে কর্মরত অভিবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশ শত শত অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সমালোচনাও করা হয়। তবে ইসমাঈল সাবরি ইয়াকুব গ্রেফতারের পক্ষেই সাফাই গান। অবশ্য তিনি জানান, আটককৃতদের সবারই করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে এবং সবারই ফল নেগেটিভ এসেছে।
মালয়েশিয়ায় প্রায় ২০ লাখ নিবন্ধিত অভিবাসী কর্মী কাজ করেন। তবে তাদের অনেকের কাছেই যথাযথ কাগজপত্র নেই বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করে। মালয়েশিয়ার অভিবাসী কর্মীদের বেশির ভাগই ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও মায়ানমার থেকে আসা।
কুয়ালালামপুর থেকে ভেস্ট মার্কেটিং এসডিএন-বিএইচডি’র ডিরেক্টর মো. রুহুল আমিন আজ জানান, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে অভিবাসী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার উদ্যোগ খুবই ভালো উদ্যোগ। কিন্ত দেশটিতে অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীদের বৈধ ভিসা পারমিট, ইনস্যুরেন্স ও সিআইডিবি কার্ডের না থাকায় তারা স্বাস্থ্য পরীক্ষার মুখোমুখি হতে পারছে না। তিনি বলেন, দেশটির সাধারণ ক্ষমার আওতায় গত ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশি কর্মী দেশে ফিরে গেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব অবৈধ দক্ষ বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়ায় বৈধতা লাভের সুযোগ দিলে উভয় দেশই অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। তিনি এব্যাপারে সরকারের উচ্চ মহলে ব্যাপক কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয়ার ওপরগুরুত্বারোপ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন