শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

করোনা পরবর্তী দুরবস্থা মোকাবেলায় প্রয়োজন সমন্বিত পদক্ষেপ

মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০২০, ১২:০৩ এএম

তথ্য-প্রযুক্তি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে চরম উৎকর্ষতা অর্জন করেছে বর্তমান বিশ্ব। বিজ্ঞানের এ অগ্রযাত্রায় একবিংশ শতাব্দীতে পাতাল থেকে মহাশূন্য পর্যন্ত সর্বত্র সফলভাবে বিচরণ করছেন মানুষ। অথচ, বর্তমান সেই অত্যাধুনিক এ বিশ্বের সবাই এখন অদৃশ্য এক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য শক্তিধর দেশসমূহ যারা সবসময় পারমাণবিক অস্ত্রসহ নানাবিধ মারণাস্ত্র দিয়ে ক্ষমতার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয় এবং সন্ত্রাসবাদের ধোঁয়া তুলে একের পর এক দেশ ধ্বংস করে, লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করে, তারাও আজ এ অদৃশ্য প্রতিপক্ষের নিকট অসহায়। সেই অদৃশ্য শক্তি কোন মহাক্ষমতাধর পরাশক্তি নয়। বরং তা হলো একটি ভাইরাস। নাম করোনা ভাইরাস। এককথায় করোনাভাইরাসের করালগ্রাসে সারাবিশ্ব আজ লন্ডভন্ড। এ ভাইরাসের ফলে পুরো বিশ্বব্যবস্থা একপ্রকার অচল হয়ে পড়েছে। থেমে গেছে মানুষের প্রভাব-প্রতিপত্তি ও কর্মব্যস্ততা। চীন, ইউরোপ-আমেরিকার মত সর্বাধুনিক উন্নত রাষ্ট্রসমূহ ও তাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাও এই করোনা মোকাবেলায় চরম হিমশিম খাচ্ছে। গত ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান প্রদেশে সনাক্ত হওয়া এ নোভেল করোনা ভাইরাস বর্তমানে মহামারি আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের প্রায় দেশ ও অঞ্চলে তা ছড়িয়ে পড়েছে। বিজ্ঞানীরা প্রাণান্তকর চেষ্টার পরও করোনার কার্যকর প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় নি। অদৃশ্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে পৃথিবীবাসী ক্লান্ত। থামছে না একের পর এক লাশের মিছিল। আমাদের দেশেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা রোগের সংক্রমণ ও মৃত্যুহার। চারদিকে বিরাজ করছে আতঙ্ক, উৎকন্ঠা, হতাশা ও মৃত্যু ভয়। করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য এবং সংক্রমণ রোধ করতে লকডাউন করা হয়েছে বিশ্বের প্রায় রাষ্ট্র। পৃথিবীর সব বড় বড় শহর, নগর, বন্দর, ধর্মীয় স্থাপনা বন্ধ। এমনকি ব্যস্ততম বিমান, নৌ ও স্থল বন্দরগুলো একটার পর একটা বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সংস্কৃতিকেন্দ্র, রাজনৈতিক কর্মসূচি, ব্যবসা-বাণিজ্য, খেলাধুলা চর্চা ইত্যাদি বন্ধ। ঘরবন্দী হয়ে গেছে বিশ্ববাসী। এমতাবস্থায় সমগ্র মানবজাতি আজ হুমকির মুখে বলে অভিমত দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। 

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের বেশিরভাগ দেশ অন্য দেশের সাথে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতও লকডাউন ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে সরাসরি লকডাউন ঘোষণা না দিয়ে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। তা ষষ্ঠ দফায় ছুটি আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। সাধারণ ছুটি ঘোষণার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসক ও গবেষক ড. এম এ হাসান এর মতে, ‘সাধারণ ছুটি শব্দগুলোর মধ্যে দিয়ে পরিস্থিতির গুরুত্ব কমিয়ে ফেলা হয়েছে। এটি সাধারণ ছুটি নয় সেটি মানুষকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।’ তবে রোগী শনাক্তের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট এলাকা লকডাউন করা হচ্ছে। এভাবে লকডাউন করে বা জনগণকে ঘরে রাখার জন্য এ সাধারণ ছুটি ঘোষণা ও কার্যকর করার চেষ্টায় পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মাঠে থাকলেও জনগণকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না। ফলে সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের সুফল পাচ্ছে না সরকার ও জনগণ। কিন্তু, সাধারণ ছুটির কারণে তৈরি পোশাক গার্মেন্টস, মিল-কারখানা, অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় দেশের অর্থনীতি দিনদিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। গরিব-দুঃস্থদের পাশেপাশি দিন আনে দিন খায় এমন দরিদ্র, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এদের প্রয়োজনীয় খাদ্যাভাব দূর না করলে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি-লকডাউন কিছুতেই কোন কাজের কাজ হবে না।
আমরা দেখতে পাচ্ছি, কার্যত বিশ্ব অচল হয়ে পড়েছে, অচল হয়ে পড়েছে অর্থনীতি। করোনাভাইরাসের ফলে আমাদের মত উন্নয়নশীল বা নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য অপেক্ষা করছে চরম দুঃসংবাদ। সাধারণত বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, এ রকম একটা দুর্যোগ বা মহামারির মাঝারি আর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক আর্থসামাজিক প্রভাব নিয়ে আগাম আলোচনা খুব একটা হয় না। তাই আগাম প্রস্তুতি না থাকায় মহামারি পরবর্তী দূর্যোগ-দূর্ভিক্ষ বা অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে বেগ পেতে হয়। তাই এখনই সময় করোনা ভাইরাসের সম্ভাব্য নেতিবাচক আর্থসামাজিক প্রভাব মোকাবিলায় আগাম পরিকল্পনা গ্রহণের। অন্যথায় করোনা রোগটির কারণে আমাদের যতটা না ক্ষতি হবে, তার চেয়েও অনেক বেশি ক্ষতি হবে পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দায়। সরাসরি এর শিকার হবে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এমনকি গত দুই দশকে দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসা অনেক পরিবার আবার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। স্বল্প পুঁজির অনেক প্রতিষ্ঠান পুঁজি হারাবে, অনেক মিল-ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে রপ্তানিমুখী তৈরি পোষাক শিল্প। এতে গার্মেন্টস শ্রমিক ও স্বল্প বেতনের চাকুরিজীবীসহ দেশের অধিকাংশ মানুষ কর্মহীন হয়ে যেতে পারে। তাই অনেকে মনে করছেন, যদি এখনই করোনা পরবর্তী অবস্থা মোকাবেলায় উদ্যোগ গ্রহণ করা না হয়, তবে ভাইরাসের কারণে যতজন মানুষ মরবে, তারচেয়ে বেশি মানুষ মরবে খাদ্যাভাবে।
করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতিতে মন্দা আসবে-এটা প্রায় নিশ্চিত। ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষ আবারও গরিব হয়ে যেতে পারেন। বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে গত ২০১৯ সালের অক্টোবরে বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৫৪ শতাংশই দরিদ্র হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। বিশ্বব্যাংক ব্যক্তিগত আয়ের ভিত্তিতে দারিদ্র্য পরিমাপ করে। দৈনিক ১ ডলার ৯০ সেন্টের কম আয় করলে ওই ব্যক্তিকে গরিব হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০১৯ সাল শেষে বাংলাদেশের জাতীয় দারিদ্র্যের হার ছিল সাড়ে ২০ শতাংশ। অতিদারিদ্র্যের হার সাড়ে ১০ শতাংশ। দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫৬ লাখ। সেই হিসাবে দেশে ৩ কোটি ৪০ লাখ গরিব মানুষ আছে। তাদের মধ্যে পৌনে দুই কোটি মানুষ হতদরিদ্র। করোনা মোকাবেলায় সরকারকে এসব বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে ১৮৫টি দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে ৮২টি দেশ পুরোপুরি বা আংশিকভাবে লকডাউন প্রয়োগ করেছে। কিন্তু এই লকডাউনে পুরো অর্থনীতি অচল হয়ে পড়ার কারণে বিশ্বের অনেক দেশ লকডাউন শিথিল করার কথা ভাবতে শুরু করেছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা সতর্ক করেছে যে, অর্থনীতি এভাবে চলতে থাকলে বিশ্বের অন্তত তিন কোটি মানুষ অনাহারে মারা যেতে পারে। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল পূর্বাভাস দিয়েছে যে, করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ায় বিশ্বের প্রবৃদ্ধি তিন শতাংশ কমে যেতে পারে।
অন্যদিকে, করোনাভাইরাসের কারণে সারাবিশ্বের মানুষ বিশুদ্ধ খাবার, ফল আর সবজি সঙ্কটে পড়তে পারেন-এমনই পূর্বাভাস দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও)। সংবাদ মাধ্যম দ্যা গার্ডিয়ানকে দেয়া এক বক্তব্যে ফাওয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জানান, কোভিড নাইনটিনের কারণে বিশ্বব্যাপী তৈরি হওয়া সঙ্কটে কোনো কোনো দেশ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশীয় উৎপাদনে জোর দিচ্ছে। তবে বিপত্তি ঘটতে পারে যখন বিভিন্ন দেশের সরকার খাবারের সরবরাহকে বাধাগ্রস্ত করবে। রাশিয়া ১০ দিনের জন্য গম রফতানি বন্ধ করেছে, কাজাখস্তান গম, সবজি আর চিনি রফতানি বন্ধ করেছে। ফাও বলছে, এসব পদক্ষেপ পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর করে তুলবে। কিছু দেশতো খাদ্য উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত শ্রমিকও পাচ্ছেন না। খুব শিগগিরই ইউরোপের মজুদ শেষ হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছে ফাও। সংস্থাটি বলছে, খাবার মজুদ করে নষ্ট করলে সঙ্কট আরও প্রকট হবে।
বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ও করোনা পরবর্তী সম্ভাব্য দুরবস্থা বা অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় আমাদের দেশে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যাতে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়। অবশ্য ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাস থেকে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এটি একটি ভালো উদ্যোগ হলেও নিম্ন আয়ের মানুষ সরকারের প্রণোদনা পাবেন কিনা সংশয় রয়েছে। যদি কার্যকর নীতিমালা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সম্ভব হয়, তবেই সবাই উপকৃত হবেন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদগণ। তাই এ নীতিমালা প্রণয়নে দুর্ভিক্ষ বা মন্দা মোকাবেলায় ঐতিহাসিক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের তত্ত¡-পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য এখনই সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করে বেশকিছু সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সরকারের প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়-দপ্তরে সাথে পরস্পর সমন্বয় থাকা বাঞ্ছনীয়। একইসাথে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আওতাভুক্ত যেকোন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, সংগঠনের মধ্যেও সমন্বয় থাকতে হবে। ৪ এপ্রিল সাধারণ ছুটির মধ্যেও গার্মেন্টস ও কারখানা খোলার ফলে ঢাকামুখী পোষাকশ্রমিকদের ঢল বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের অব্যবস্থাপনা বা অযোগ্যতা প্রকাশ করে। এ ধরণের ঘটনা যেন আর না ঘটে তা গভীরভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলন করতে যেন আর রাজপথে নামতে না হয়, তাও খেয়াল রাখতে হবে। রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন/ভাতা পরিশোধ করার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি আপদকালীন প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে, তা যথাযথভাবে ব্যবহার করে শ্রমিকদের ৩ মাসের বেতন ঘরে বসে পাওয় নিশ্চিত করতে হবে। লকডাউনের মধ্যেও সীমিত পরিসরে আস্তে আস্তে বিভিন্ন জরুরী কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্তে যেন করোনা ছড়িয়ে না পড়ে, তা সবাইকে সচেতনতার সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে। অবশ্য কর্মস্থলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের পাশিপাশি শ্রমিকদের জন্য সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান, প্রবেশ পথে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধৌত করার ও নির্ধারিত পরিবহণে যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে।
সরকারি ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতে, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা রোধ করতে জাতীয়ভাবে ‘সর্বদলীয় জাতীয় ত্রাণ ব্যবস্থাপনা কমিটি’ গঠন করা যায়। কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে জেলা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও সর্বদলীয় ত্রাণ ব্যবস্থাপনা কমিটিও করা যেতে পারে। ফলে বর্তমানে যেভাবে সরকারি দলের যেসব নেতাকর্মী ও স্থানিয় জনপ্রতিনিধি অসহায়-দুঃস্থদের ত্রাণের চাল চুরি করছে তা প্রায় সম্পূর্ণভাবে রোধ করা সম্ভব হবে।
লকডাউনের মধ্যে দুর্দশায় পড়া অসহায় ও শ্রমজীবী মানুষকে বিশেষ ওএমএসের মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি দরের চাল দিতে রেশন কার্ডের সংখ্যা ৫০ লাখ থেকে বাড়িয়ে এক কোটি করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তা প্রশংসনীয় হলেও পর্যাপ্ত নয়। রেশন কার্ডের সংখ্যা কমপক্ষে ৩ কোটি মানুষের জন্য করা উচিত। এতে গরীব-দুঃখী ও কর্মহীনদের কিছুটা দুর্দশা লাঘব হবে।
বর্তমান করোনাকালে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন মধ্যবিত্তরা। স্বল্প বেতন ও সঞ্চয় সব শেষ হয়ে যাওয়ার পর অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন, অথচ কারো সহায়তা পাচ্ছেন না। নিম্নবিত্তরা বিভিন্ন জন থেকে ত্রাণ পেয়ে থাকেন, কিন্তু মধ্যবিত্তরা মান-সম্মানের ভয়ে কারো নিকট হাত পাততে পারেন না। স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে মধ্যবিত্ত পরিবারের তালিকা করে রাতের অন্ধকারে তাদের মাঝে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। বিশেষতঃ কয়েক লক্ষ ইমাম-মুয়াজ্জিন স্বল্প বেতনে মসজিদে খেদমত করেন। অন্যান্য সময় ধর্মীয় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। বর্তমানে ধর্মীয় সব অনুষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে তারাও বিপাকে পড়েছেন। তাদের সহায়তার বিষয়েও লক্ষ্য রাখতে হবে।
করোনা পরবর্তী সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ বা অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দেশে সবচেয়ে বেশি খাদ্য শষ্য জোগান দেয় বোরো ধান। চলতি বোরো মৌসুমে ১৮ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তা যেন কৃষকদের কাছ সরাসরি সংগ্রহ করে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয় তা লক্ষ্য রাখতে হবে। পরবর্তী দুরবস্থা মোকাবেলায় সতর্কতামূলকভাবে জনগণকে নিজ নিজ ভূমি-আঙিনায় শাক-সবজি ও ফসল ফলাতে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন।
গুজব সৃষ্টিকারী, খাদ্যপণ্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী ও ত্রাণ চোর ইত্যাদি সবাই মানবতার দুশমন। তাদের ব্যাপারে সবাইকে সজাগ হতে হবে এবং যথাযথভাবে তাৎক্ষণিক শাস্তি জেল-জরিমানা করাসহ প্রশাসনিক নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে।
সর্বোপরি বর্তমান করোনাকালে ও পরবর্তী সম্ভাব্য দুরবস্থা মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদেরকে অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে হবে। নিজে সুরক্ষিত থাকলে হবে না, আশেপাশের মানুষদেরও সুরক্ষিত রাখতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমার প্রতিবেশী বা সহযোগী করোনা মুক্ত থাকলেই আমি করোনামুক্ত থাকতে পারব। তাই আসুন, সম্মিলিতভাবে সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা করোনা যুদ্ধে জয়ী হই। এ বিজয় হবে মানবতা ও মনুষ্যত্বের।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Golam Shafiul Alam Mahin ৮ মে, ২০২০, ২:১২ এএম says : 0
ইনশাআল্লাহ উক্ত করণীয় মেনে চললে মঙ্গল বয়ে আনবে সমাজে
Total Reply(0)
Golam Shafiul Alam Mahin ৮ মে, ২০২০, ২:১২ এএম says : 0
ইনশাআল্লাহ উক্ত করণীয় মেনে চললে মঙ্গল বয়ে আনবে সমাজে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন