রাসুলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তরমুজ ও খেজুর এক সাথে খেতেন আর বলতেন, তরমুজ খেজুরের গরম দুর করে দেয় আর তাজা খেজুর তরমুজের ঠান্ডাকে দুর করে দেয়। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য এবং সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন খাবার খেতে হয়। আমরা ভাত, রুটি, তরকারী, ফল, মাছ গোস্ত খেয়ে থাকি। মাছ গোস্ত, ভাত রুটি সারা বছর থাকলেও বিভিন্ন জাতের তরকারী ও ফলমূল বছরের বিভিন্ন মৌসুমে ভিন্ন ভিন্ন পাওয়া যায়। এরও কারন রয়েছে। সারা বছর আমাদের শরীর এক রকম থাকে না। সারা বছর এক রকম রোগের প্রকোপও থাকে না। তাই আল্লাহ তায়ালা আমাদের শরীরের উপযোগী করেই সব কিছুর ব্যবস্থা করেছেন। আর মাওলার সব সৃষ্টিই আমাদের কোন না কোন উপকারে লাগে। তরমুজ একটি অতি পরিচিত মৌসুমী ফল। সারা বছর তরমুজ পাওয়া যায় না। এখন তরমুজের ভর মৌসুম। তরমুজ বসন্ত ও গ্রীষ্মকালীন রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শরীরকে রাখে সবল। শীতের পরে হঠাৎ করেই বসন্ত ও গরম চলে আসে। হঠাৎ গরম অসস্তি ও রোগ বালাই নিয়ে আসে। তরমুজ এই অসস্তি দুর করে সজীবতা আনয়ন করে। তরমুজ এন্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল। তরমজ শরীরকে শক্তিশালী করে এবং ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে । তরমুজের সাথে তরমুজের বীজও উপকারী।
১০০ গ্রাম তরমুজের জুসে শক্তি ৩২ ক্যালরী, ভিটামিন সি ৯.৬০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬ ০.১৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.০৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ৩৬৬ আই ইউ, পটাশিয়াম ১১ মিলিগ্রাম রয়েছে।
১০০ গ্রাম তরমুজের বীজে রয়েছে আরজিনিন ৪.৯১ গ্রাম, লিউসিন ২.১৮ গ্রাম, আইসো লিউসিন ১.৬৯ গ্রাম, ফিনাইল এনালিন ১.৪৭ গ্রাম, ভ্যালিন ১.৪১ গ্রাম, লাইসিন ০.৯২ গ্রাম, মিথিওনিন ০.৮৭ গ্রাম, থ্রিওনিন ০.৭৬ গ্রাম, হিসটাডিন ০.৭০ গ্রাম, ট্রিপটোফিন ০.৪৯ গ্রাম ।
১। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ: স্থুলতার কারনে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে। তরমুজ খেলে তাদের ডায়াবেটিসে উপকার হয়।
২। তৃষ্ণা ও ক্লান্তি দুর করে। কৃষকগনও মাঠে প্রচুর পরিশ্রম করেন। শরীর থেকে খুব বেশী ঘাম বের হয়। ক্লান্ত হয়ে পড়েন। আল্লাহ তায়ালার কী অপার মহিমা, এই সময়েই তরমুজ ফলে। যতই ক্লান্তি আসুক তরমুজের রস খেলে ৫-৬ মিনিটের মধ্যেই ক্লান্তি হারিয়ে যাবে।
৩। টাইফয়েড: টাইফয়েড জ¦রে যারা অস্থির তারা আধা পাকা বা কাঁচা তরমুজের রস ২ চামচ করে বার বার খেলে জ¦রের তীব্রতা কমে আসবে এবং অস্থিরতা দুর হয়ে যাবে।
৪। অস্বাভাবিক পিপাসা: অস্বাভাবিক পিপাসার অনেক কারন রয়েছে। এরূপ হলে এক কাপ পাকা তরমুজের রসের সাথে ২-৩ জিরার গুড়া একটু চিনি মিশিয়ে খেলে পিপাসা দুর হয়ে যাবে।
৫। অপুষ্টি: কোন কারন ছাড়াই অনেকে অপুষ্টিতে ভোগেন। এমতাবস্থায় কাঁচা তরমুজের শাঁস টুকরো করে শুকিয়ে গুড়া করতে হবে। তা থেকে ২ চা চামচ গুড়া নিয়ে এক কাপ গরম দুধের সাথে মিশিয়ে সকাল বিকাল ২ সপ্তাহ খেলে দেহে পুষ্টি বিকাশ ঘটবে।
৬। শুক্র বৃদ্ধি: ৫ গ্রাম তরমুজ বীজের খোসা ছাড়িয়ে পানি সহ বেটে ১ কাপ দুধ সহ খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৭। কিডনী: তরমুজের রস কিডনী বর্জ্য পরিস্কার করে কিডনীকে সবল করে তোলে। তাই ডাক্তারগন ডাবের পাশাপাশি তরমুজ খেতে পরামর্শ দেন।
৮। দেহের শক্তি বৃদ্ধি: তরমুজে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি রয়েছে। যা দেহে শক্তি উৎপাদন করে। আমাদের খাদ্য তালিকা র্যাংকিং অনুযায়ী ভিটামিন বি৬, বি১, ম্যাগনেশিয়াম এবং পটাশিয়াম শক্তির খুব ভাল উৎস। শক্তি উৎপাদনে এটি খুব উচ্চ স্তরের। কারণ এতে প্রচুর পানি রয়েছে কিন্তু অন্যান্য ফলের তুলনায় কম ক্যালরীযুক্ত। তবে অন্যান্য ফলের প্রতি ক্যালরী থেকে অনেক বেশী পুষ্টি দেয়।
৯। মানসিক ভারসাম্য: তরমুজে থাকে ভিটামিন বি৬ আমাদের মস্তিস্কের রাসায়নিক উপাদানগুলোকে সঠিকভাবে পরিচালিত করে, যা উদ্বেগ-উৎকন্ঠা, উত্তেজনা, অবসাদ, মানসিক অস্থিরতা, ভারসাম্যহীনতা দুর করতে সাহায্য করে।
১০। রোগ সংক্রমন রোধ: তরমুজে থাকা ভিটামিন এ দেহের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে শরীরের রোগ সংক্রমনের বিরুদ্ধে কাজ করে। তাছাড়া অন্ধত্ব প্রতিরোধেও কাজ করে।
১১। হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা: তরমুজের বীজে প্রচুর পরিমান ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে যা আমাদের দৈহিক চাহিদার প্রায় দেড় গুন। ম্যাগনেশিয়াম হৃদযন্ত্রের পেশীর শক্তি বৃদ্ধি করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়া তরমুজ ব্রংকাইটিস, এ্যাজমা, হেপাটাইটিস ও হজম শক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করে।
১২। বয়স বৃদ্ধি রোধ: তরমুজে থাকা ভিটামিন সি দেহের বয়সবৃদ্ধি প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। খুব সহজে শরীরের চামড়ায় ভাজ পড়ে না।
১৩। প্রস্রাব স্বল্পতা: তরমুজের বীজে এমন উপাদান রয়েছে যা লিভারের ইউরিয়ার পরিমান বাড়িয়ে দেয়, এই কারনে প্রস্রাবের পরিমান বেড়ে যায়। তাই যাদের অত্যধিক অনিয়ম বা প্রখর রোদে পোড়ার কারনে ডিহাইড্রেশন হয়েছে এবং প্রস্রাব কমে গেছে, প্রস্রাবে জ্বালা পোড়াও হয়। তারা ৫ গ্রাম তরমুজের বীজের খোসা ছাড়িয়ে পানি সহ বেটে ২ কাপ পানির সাথে মিশিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের জ্বালা যন্ত্রনাও থাকবে না। তাছাড়া প্রস্রাবও স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
১৪। ত্বকের যতে্ম: তরমুজের বীজে প্রচুর পরিমান এসেনশিয়াল ফ্যাটি এসিড ও ময়েশ্চার রয়েছে যা ত্বকে কোমলতা আনয়ন করে। তাই বিভিন্ন বেবী ওয়েলে ও চুলের যতে্ম তেলের মধ্যে তরমুজের বীজ ব্যবহার করা হয়।
১৫। রক্তচাপ: তরমুজে থাকা ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
১৬। হাড় সুস্থ রাখা: বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দেয়। এ সময় ক্যালসিয়ামের চাহিদা বাড়তে থাকে। এই বাড়তি চাহিদা পুরণ না হলেই শুরু হয় সমস্যা। শুরু হয় হাত পায়ে ব্যথা। শরীরের আরাম নষ্ট হয়ে যায়। তবে নিয়মিত তরমুজ খেলে তরমুজের ক্যারোটিন ও ক্যালসিয়াম হাড়তে মজবুত রাখবে।
মুন্সি আব্দুল কাদির
সিনিয়র অফিসার ও জিবি ইনচার্জ
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ
লালদিঘীরপাড় শাখা, সিলেট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন