ফিরে যাও তুমি
শাহাদাৎ শাহেদ
ফিরে যাও তুমি
এখানে, এ ঘরে, মনের ঘরে আজ টেবিল চেয়ার শূন্য এক যুগ কাটছে
এক মানবীর শাসনে সর্বস্ব লুটতরাজ হয়ে
রিক্ত আজ ধনরতœপূর্ণ ভা-ার আমার
সব ছিলো আমার
এক তোলা বিকেল ছিলো, স্বর্ণরোদ খচিত একটা সকাল ছিলো
একডালা তারাভরা আকাশ ছিলো, একটা নিঃসঙ্গ গোলাপ সঙ্গ দিত আমায়
নিয়ে গেছে সব! সব লুট হয়েছে
তুমিও ফিরে যাও, এসো না এখানে
এখানে ধুলোওড়া একখ- মরু আছে এখন
চিল-শকুন, যা উড়ত ক’দিন আগে-
সব রসদ ফুরিয়ে যাওয়ায় এখন তারা অন্য বিরানে
লোল জন্মানোর জন্য যে তোমার একবেলা ঘাস দরকার হবে
তাও পাবে না দু’দিন খোঁজ করে।
কী মোহে উঁকি দিয়েছ তুমি!
প্রান্তর ভয়ঙ্কর
কেউ টেকেনি, টিকতে পারেনি যুবা
ক্ষণিক মুসাফির হয়েছে কেবল
ফিরে যাও তুমি
ঝরাপাতার বুকে অটোগ্রাফ
নূরনবী বেলাল
নান্দনিক বিকেল ফেলে আসে বিষাদগ্রস্থ রোদের অলংকার
আরণ্যক পাতার বনে আমার সংসার, দিনলিপি-
যাযাবর সময় বলে গেছে ধোঁয়াশা ভোর আর মিথুন সন্ধ্যার কথা
আমি একলা বসে ভাবতে থাকি- কে আসবে?
কে আসবে- পায়ে তার কাঁচের নূপুর;
ঝরাপাতার বুকে অটোগ্রাফ দিলাম
মর্মরে কেঁপে উঠে, কুয়াশায় ভিজে যায় মনের সুন্দরবন!
অস্তিত্বের ঘ্রাণ
মোঃ কামরুজ্জামান বাবু
সবকিছুকে ছাপিয়ে সুখের রশ্মিগুলো যখন আলতো মায়ায়
কষ্টের প্রখরতাকে মিলিয়ে দেয় অজানার দুর্গম মোহনায়,
যখন মৃদু সমীরণে কেঁপে ওঠে বুকের নষ্ট পাঁজর,
পচে যাওয়াা আত্মা তীব্র ফুসলে উঠে আমাকে জানান দেয়
সগর্বে, সদর্পে স্বপ্নের স্বাপ্নিক শিহরণ, যখন অভিমানী পুলক
নষ্ট অতীতের জমিনে চাষের অব্যহতি দিয়ে দ্রুত পদ সঞ্চালনে
মন মন্দিরের ঘণ্টায় সুর তুলে তখনই বেজে ওঠে কর্ণবেহালায়
তোমার প্রাচীন শব্দগুলোর সুমধুর ঝংকার, যে ঝংকারে
কৃত্রিমতা নেই, কাঠিন্য নেই আছে নেহায়েত-ই ভাললাগার,
কিছু পাবার কঠিন স্বীকারোক্তি যা নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছি।
আমার অবিনাশী প্রাপ্তি শূন্যে নয়, তরঙ্গের মোহনায়ও নয়;
এখনও নূপুরের শব্দ শুনতে পাই, বাতাসে প্রথাগত মোহের গন্ধ পাই,
অনুভবে কাজলরঙ চুলের ঝাপটায় চোখ বন্ধ করতে জানি,
ঝিনুকের খোলসে মুক্তোর অবস্থানের সুখ কুড়োতে জানি,
স্বপ্ন বুনতে পারি আজও কিন্তু পারছি না স্বপ্ন দেখতে, জানি
সেই চোখের দৃষ্টিকে আলোহীন করে দিতে, ধ্বংস করতে
ঐ চোখের নিষ্ঠুর অবাধ্যতার অস্তিত্বকে। তোমাকে কখনও আমন্ত্রণ জানাবো না,
আহ্বান করবো না- ‘এসো, পরম মমতায়।’
বরং বাতাসের কোমল গন্ধে শুষে নেবো তোমার অস্তিত্বের ঘ্রাণ।
বিপ্লবের পরিভাষা
হাসান ইকবাল
প্রতিদিন প্রতিনিয়ত একটু একটু করে
ম্লান হচ্ছে সভ্যতা, ধূসর হচ্ছে প্রকৃতি
মানুষ হচ্ছে মত্ত আদিম উন্মাদনায়।
এখন আর অনুগত বলে কিছুই নেই
সবাই স্বাধীন স্বেচ্ছা সম্ভাষণে অভ্যস্ত,
তবু অলৌকিক আগুনে পুড়ে মনুষ্যত্ব ও মানবতা
মনোবৃত্তির মাঠজুড়ে মন্থর বিপ্লবের পরিভাষা।
কে বলে তুমি নেই
[উৎসর্গ : বিদগ্ধ সাহিত্যিক, মাসিক মদীনার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খানকে]
মাহ্মুদা ফিরদৌসীয়া কাদ্্রী
কে বলে তুমি নেই!
অনুভবে যাকে পাই!
হৃদয়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যার স্থিতি,
অগণন পাঠকের মুখে যার স্তূতি,
সেই তুমি নেই- নেই বললেই হল!
তোমাকে চেনার দিন এই বুঝি এল।
হারালেই বোঝা যায় প্রয়োজন কি
তুমি যে এদেশে ছিলে ‘নায়েবে নবী’
মদীনার আলো নিয়ে দেখিয়েছ দিশা
ঘুচায়েছ নিজ হাতে ঘোর অমানিশা।
আলো-আঁধারির বুকে নিভু-নিভু দ্বীন
বাঁচাতে তুমিই এলেÑ মুহিউদ্দীন
দিন নেই রাত নেই মসি নিয়ে হাতে
জুলুম করেছ দূর শত ফতোয়াতে।
আল্লাহকে ভালবেসে নবীজীর প্রেমে
চালিয়েছ যে জিহাদ ‘মদীনা’র নামে
সে জিহাদে রাহবার তুমি সদা রবে
দৃষ্টিতে নাই থাকো, থেকো অনুভবে।
কীর্তি-রে মৃত্যু পারে না যে ছুঁতে
পারে শুধু প্রাণ নিতে অন্য জগতে
তাই তো পারেনি নিতে শতোর্ধ্ব বই
‘জীবনের খেলাঘরে’ চেয়ে আছে ঐ
‘মাআরেফুল কুরআন’ ডেকে বলে শোনো
মৃত্যুতে মুমিনের ভয় নেই কোনো
চোখের পলকে হয় জান্নাত রাহি
জীবনের জয়গান কাঁদে ত্রাহি-ত্রাহি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন