শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

আমরা নির্দেশনার কার্যকর বাস্তবায়ন দেখতে চাই

| প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০২০, ১২:০৩ এএম

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা অচল হয়ে পড়েছে। এমনকি করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালগুলো ছাড়া অন্যসব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে মানুষ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ প্রথম থেকেই। এ ক্ষেত্রে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কোনো গাইডলাইন বা নির্দেশনাও ছিল না। এভাবেই দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার চিত্রই ফুটে ওঠে। জটিল ও ইমার্জেন্সি রোগীদের জরুরি চিকিৎসার জন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে রাস্তায় বা হাসপাতালের বারান্দায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার ঘটনা প্রায়শ ঘটে চলেছে। এহেন বাস্তবতায় অনেক দেরীতে হলেও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো বেসরকারি হাসপাতালে জরুরি সেবার ব্যবস্থা থাকা সত্তে¡ও কোনো রোগীকে সেবা না দিয়ে ফেরত পাঠানোর সুযোগ নেই। কোনো রোগীকে অন্য হাসপাতালে রেফার করার প্রয়োজন হলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর জন্য হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সাথে যোগাযোগ করে রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল রেফার করার সুযোগ রয়েছে। আরো আগেই এ ধরনের নির্দেশনাসহ স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ নেয়ার দরকার ছিল। অনেক দেরীতে হলেও বেসরকারি হাসপাতালগুলোর প্রতি এ ধরনের নির্দেশনা জারির ইতিবাচক উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।
জীবনের নিরাপত্তা রাষ্ট্রের কাছে প্রত্যেক নাগরিকের একনম্বর মৌলিক অধিকার। সব নাগরিকের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এ কারণেই সরকারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য ইস্যু। আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার বেশিরভাগ অংশ জুড়েই রয়েছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ভূমিকা। বছরের পর বছর ধরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এসব হাসপাতাল নানাভাবে মুনাফাবাজি করলেও করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর এই দুর্যোগময় মুহূর্তে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে দায়হীন অমানবিক ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ রোধে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা (পিপিই মাস্ক ইত্যাদি) নিশ্চিত করার কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে তারা সব ধরনের রোগীদের ভর্তি ও চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত করার কারণে অনেক রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে, যাদের অনেকেই কোভিড পজিটিভ নয়। এমনকি সরকারি হাসপাতালেও রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দিয়ে ফেরত পাঠানোর বেশকিছু ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে ঘটেছে বলে পত্রিকায় সংবাদ বেরিয়েছে। রাজধানী শহরে বাস করেও জরুরি স্বাস্থ্যসেবার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে হয়রান হওয়ার ঘটনা কোনো সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না। করোনাভাইরাস মহামারী এখন বৈশ্বিক বাস্তবতা। বিশ্বের অনেক দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ এখন এই প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু কোথাও নন-কোভিড রোগীদের এমন বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর শিকার হওয়ার নজির নেই।
স্বাস্থ্য অধিদফতর, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক মালিক সমিতি, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন(বিএমএ)সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো সরকারি নির্দেশনায় রোগীদের চিকিৎসা বঞ্চিত করা হলে হাসপাতাল ও ক্লিনিকের লাইসেন্স বাতিলসহ শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এমনকি ডায়াবেটিস, কিডনি ডায়ালাইসিস, হৃদরোগের মতো অসংক্রামক রোগীরাও বেসরকারি হাসপাতালে তাদের রুটিন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে মারা যাচ্ছে। এতদিন ধরে অনেক বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অমানবিক মুনাফাবাজির অভিযোগ উঠেছিল। এখন করোনাভাইরাস মহামারীতে শ্রেফ নিজেদের নিরাপত্তার অজুহাতে সব সেবা বন্ধ রেখে মানুষকে জরুরি চিকিৎসা বঞ্চিত করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতেও তারা কুণ্ঠিত হচ্ছে না। সরকারি ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরীক্ষা ব্যবস্থার মধ্যেও প্রতিদিন গড়ে প্রায় একহাজার করোনা পজেটিভ রোগী শনাক্ত হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে আরো বেশি সংখ্যক মানুষ করোনাকালীন স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আসতে পারে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। তবে রোগীদের যথেচ্ছ চিকিৎসা বঞ্চিত করার অধিকার কোনো সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের নেই। করোনামহামারীর বৈশ্বিক প্রকোপ মোকাবেলায় আমাদের সামর্থ্যের ঘাটতি থাকলেও করোনার ভয়ে হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ রেখে অসংক্রামক ও সাধারণ রোগীদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার অপতৎপরতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শুধু নির্দেশনা বা পরিপত্র জারি করে বসে থাকলে চলবে না। সরকারি নির্দেশনার পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ সরকারিসংস্থাগুলোর মনিটরিং জোরদার করতে হবে। নির্দেশনা অমান্য করে সেবাবঞ্চিত করার অভিযোগ পাওয়া গেলে অভিযুক্ত হাসপাতালের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি নিশ্চিত হলেই কেবল এই নির্দেশনার প্রত্যাসিত সুফল পাওয়া সম্ভব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুর রশিদ ১৪ মে, ২০২০, ১:১০ এএম says : 0
মাশাআল্লাহ। সুন্দর একটি লেখা। আল্লাহ বরকত দান করুন আপনার লেখায়।
Total Reply(0)
শওকত আকবর ১৪ মে, ২০২০, ৯:২১ এএম says : 0
প্রিয় সম্পদক,আপনার লেখা সম্পদকীয়তে বিশ্বর শক্তিধর শাষক থেকে শুরু করে একজন শোষিতের কথা ও উঠে আসে।রাষ্ট সমাজ সংস্কৃতি ইতিহাস ঐতিহ্য গনতন্ত্র সমাজতন্ত্র ধনতন্ত্র পুঁজিবাদ জাতিয়তাবাদ সাম্যবাদ শোষক শোষিত এককথায় সব বিষয় উঠে আসে আপনাদের কলমে।এ লিখনীর কারনে মানুষ উপকৃত হয়।আবার এ জন্য অনেক সময় আপনাদের নির্যাতন নিপিঁড়ন এমন কি কারাভোগ করতে হয়। তবুও সত্যপ্রকাশে থাকেন সদা অবিচল।এ জন্য আপনিসহ ইনকিলাব পরিবারের সকল কে ভক্তিপুর্ন সালাম।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন