বিশেষ সংবাদদাতা : পর পর ২টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শিকার ইংল্যান্ড, এই দু’টি ম্যাচেই ম্যাচ উইনার মাহামুদুল্লাহ। ২০১১ বিশ্বকাপে চট্টগ্রামে জয়ের আশা ছেড়ে দেয়া বাংলাদেশ দলকে অবিশ্বাস্য জয় উপহার দিয়েছেন মাহামুদুল্লাহ। তার ২১ রানের নট আউট ইনিংস, টেল এন্ডার শফিউলকে নিয়ে ৮ম জুটি কি দারুন একটি রাতই না উপহার দিয়েছে বাংলাদেশকে। ২০১৫ বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে তার ম্যাচ উইনিং ১০৩ রানের ইনিংসে আলোকিত বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে ইতিহাসে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মাহামুদুল্লার ওই প্রথম সেঞ্চুরিতেই প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালের নাগাল পেয়েছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে তৃতীয় যে জয়টি আছে বাংলাদেশের, ২০১০ সালে ব্রিস্টলে সেই ম্যাচেও তার হার না মানা ২৪ রানের ইনিংস সুগম করেছে জয়ের পথ। ২০১০ সালে মিরপুরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ইনিংসে গোল্ডেন ডাক, সোয়ানের ঘুর্নি বল না বুঝে মিড উইকেটে সঁপে দিয়েছেন ক্যাচ, সেই মাহামুদুল্লাহ’র ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ ম্যাচে রান ২৫৪ (গড় ৪২.৩৩)।
এই ছেলেটিই কিনা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে করেছেন ফিফটি ! ২০১০ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে ফিফটির পর ঢাকায় ৫৯। ওয়ানডেতে প¦ার্শ নায়ক চরিত্র থেকে নায়ক চরিত্রে আবির্ভাব যার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সেই প্রিয় প্রতিপক্ষকে পেয়ে টেস্টে এবার সেঞ্চুরির স্বপ্ন দেখছেন মাহামুদুল্লাহÑ‘ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করেছি, এবার টেস্টে সেঞ্চুরি করার স্বপ্ন দেখছি।’ ২০১৫ বিশ্বকাপের আগে শরীরের ওজন কমিয়েছিলেন প্রায় ১০ কেজি, বিশ্বকাপে ২টি ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরির নেপথ্যে এটাই ছিল কারণ। ৬ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরছেন তিনি, তার আগে লক্ষ্য মাহামুদুল্লাহ’র একটাই, ফিটনেসÑ ‘তবে এ মুহূর্তে ফিটনেস নিয়ে ভাবছি। সামনে আমদের সিরিজ আছে। আমরা আসলে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছি।’
গত বছর হোমে চারটি সিরিজের সব ক’টির ট্রফি ঘরে রেখে দিয়েছে বাংলাদেশ দল। হোমে দূর্বার বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য সাফল্যের ধারাবাহিকতা। সেই বার্তাটা নাকি পেয়েছেন দলের সবাই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজকে সামনে রেখে তাই সবাই এখন প্রত্যয়ী। টীমমেটদের হয়ে সেই প্রত্যয়ী কণ্ঠই শুনিয়েছেন মাহামুদুল্লাহÑ ‘ক্যাম্প শুরু হওয়ার আগেই আমদের সবার মধ্যে একটা আলোচনা হয়েছে যে আমরা গত ২-৩ বছর আমরা যেভাবে টিমটা অনুশীলন করছে বা আমাদের মনোভাবটা যেভাবে পরিবর্তন হচ্ছে তা সবাইকে জানিয়ে দেওয়া। আমরা সবাই কমিটেড। সবাই আমরা কষ্ট করব। কষ্টের বিকল্প কিছু নেই। ইয়াং, সিনিয়ররা সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করছে। আশা করি আমরা খুব ভালো একটা ফিটনেস ক্যাম্প করব। অবশ্যই আমরা সবাই মুখিয়ে আছি ইংল্যান্ড সিরিজের জন্য। আশা করি সিরিজটা খুব ভালোভাবেই সম্পন্ন হবে। খেলোয়াড়রা এই মুহূর্তে খুব হার্ডওয়ার্ক করছে। ইংল্যান্ড সিরিজের দিকে সবাই মুখিয়ে আছে এবং সবাই খেলার জন্য প্রস্তুত।’
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে এবং টেস্ট সিরিজে অবতীর্ণ হওয়ার আগে রীতিমতো রোমাঞ্চিত বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা, সেই বার্তাও ক্রিকেট বিশ্বকে দিয়েছেন মাহামুদুল্লাহÑ ‘আমরা সবাই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার জন্য মুখিয়ে আছি। নিজেদের মধ্যে একটা আলাদা রোমাঞ্চ কাজ করছে। আশা করছি সিরিজটা ভালোভাবে শেষ হবে। খেলোয়াড়ারা কঠোর পরিশ্রম করছে। সবাই খেলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।’
২০১০ সালে হ্যামিল্টন টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাহামুদুল্লাহ’র সেঞ্চুরিতে সেই ম্যাচটি পঞ্চম দিন পর্যন্ত টেনে নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। ওই টেস্টে চিনিয়েছিলেন জাত এই মিডল অর্ডার। প্রথম ইনিংসে ১১৫’র পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪২ রান। সেই অতীত থেকেও টনিক নিতে চান মাহামুদুল্লাহ। টেস্টে ধারাবাহিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপনেও তাগিদ অনুভব করছেন মাহামুদুল্লাহ।
লম্বা বিরতির পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রতীক্ষিত সিরিজে কঠিন প্রতিপক্ষের সামনে বাংলাদেশ। তা অবশ্য ভাবাচ্ছে না মাহামুদুল্লাহকে। বরং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লম্বা বিরতিতে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার মধ্যে থাকায় ঘাটতি পুষিয়ে নেয়ার কথা ভাবছেন মাহামুদুল্লাহÑ ‘অনেক লম্বা একটা গ্যাপ, তা ঠিক। তবে আমরা প্রিমিয়ার লিগ খেলেছি। সবাই খুব ভালো পারফরম্যান্স করেছে। সামনে অনেক সিরিজ আছে। এখন ক্যাম্প শুরু হয়েছে। এর মধ্য থেকেই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে চাই। সে অনুযায়ী পরিশ্রম করে যাচ্ছি।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন