আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৬৭ কোটি ৮৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। কেসিসি’র ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোঃ আনিছুর রহমান বিশ্বাষ গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় নগর ভবনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে এ বাজেট ঘোষণা করেন। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩০ কোটি ১০ লাখ ৬৬ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন খাতে (সরকারি অনুদান ও বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট) ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। একই সাথে ভারপ্রাপ্ত মেয়র ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ৩০২ কোটি ৭৮ লাখ ৭ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট ঘোষণা করেন যা প্রস্তাবিত বাজেটের শতকরা ৭১ ভাগ এবং কেসিসি’র জন্য এটি একটি বড় অর্জন।
অর্থ ও সংস্থাপন স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর শেখ মোঃ গাউসুল আজমের সভাপতিত্বে বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে খুলনা পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান এ্যাড. মোঃ এনায়েত আলী, খুলনা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক শেখ সিরাজুল ইসলাম, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র কাজী আমিনুল হক, প্যানেল মেয়র শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজ ও রুমা খাতুনসহ কাউন্সিলর, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর, নগরীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বাজেট বর্ণনায় ভারপ্রাপ্ত মেয়র বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে জাতীয় এডিপিতে ৫০ কোটি টাকার একটি অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এছাড়া কেসিসি’র নিজস্ব আয় অপ্রতুল হওয়া সত্তে¡ও অফিস পরিচালনার দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করে রাজস্ব তহবিল হতে বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে ৩৯ কোটি ৯৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত মেয়র আরো বলেন, খুলনাকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত একটি নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমরা সরকারের পাশাপাশি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) সহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার সাহায্য কামনা করেছি। তারা আমাদের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করায় দাতা সংস্থার অর্থায়নে দশটি অনুমোদিত প্রকল্পে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৪৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ন্যাশনাল আরবান পোভার্টি রিডাকশন প্রোগ্রাম (এনইউপিআরপি), বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড প্রকল্প, আরবান পাবলিক এন্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সেকটর ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (কেএফডবিøউ) সাহায্যপুষ্ট নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্প, নিরাপদ পথ খাবার উন্নয়ন কর্মসূচী, বাংলাদেশ দক্ষিণ অঞ্চল শহর কেন্দ্রের দারিদ্র্যবান্ধব ও বাজারভিত্তিক মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প, আরবান ম্যানেজমেন্ট অব ইন্টারনাল মাইগ্রেশন ডিউ টু ক্লাইমেন্ট চেঞ্জ ইন খুলনা সিটি কর্পোরেশন, রিজিলিয়েন্ট ইনক্লুসিভ আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প, সোলার স্ট্রীট লাইট প্রকল্প ও খালিশপুর কলেজিয়েট গার্লস স্কুল নির্মাণ প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম। উল্লিখিত প্রকল্পের মধ্যে ন্যাশনাল আরবান পোভার্টি রিডাকশন প্রোগ্রাম (এনইউপিআরপি) প্রকল্পে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা নগরীর দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং স্বল্পআয়ের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ব্যয় করা হবে। বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড প্রকল্পে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা যা মহানগরীর বিভিন্ন রাস্তা সংস্কার, ড্রেন নির্মাণ, বাজার, শপিং কমপ্লেক্স, ওয়ার্ড অফিস কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণসহ ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হবে। চলমান আরবান পাবলিক এন্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা নগরীতে সেকেন্ডারী ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণ কাজে ব্যয় করা হবে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (কেএফডবিউ) সহায়তাপুষ্ট নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৪ কোটি টাকা যা মহানগরীর রূপসা এলাকায় বাসস্ট্যান্ড, রূপসা ঘাটের উভয়পাড় উন্নয়ন, ড্রেন নির্মাণ ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাঁচা রাস্তা পাকা করার কাজে ব্যয় করা হবে। নিরাপদ পথ খাবার উন্নয়ন কর্মসূচী প্রকল্পে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ দক্ষিণাঞ্চল শহর কেন্দ্রের দারিদ্র্যবান্ধব ও বাজারভিত্তিক মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২ কোটি টাকা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খুলনা শহরে আগত বহিরাগতদের জীবনমান উন্নয়নে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ‘আরবান ম্যানেজমেন্ট অব ইন্টারনাল মাইগ্রেশন ডিউ টু ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন খুলনা সিটি কর্পোরেশন’ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫ কোটি টাকা। রিজিলিয়েন্ট ইনক্লুসিভ আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক কোটি টাকা। এ প্রকল্পের অর্থে নগর ভবনে একটি আধুনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। সোলার স্ট্রীট লাইট প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৫ কোটি টাকা। ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় খালিশপুরে একটি কলেজিয়েট গার্লস স্কুল নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১২ কোটি ৪৮ হাজার টাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন