এম আমির হোসেন, চরফ্যাশন থেকে : চরফ্যাশন উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপবৃত্তি বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিভাবকদের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ ৩/৪শ’ টাকা করে উত্তোলন করা হয়েছে। ওসমানগঞ্জ-৩ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের কাছ খরচের জন্যে উত্তোলনকৃত ২৫ হাজার ৮০০ টাকা রবিবারে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরত দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, চরযমুনা নাদেরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভ্যানুতে মোট ৮টি প্রতিষ্ঠানের উপবৃত্তি বিতরণ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মুন্সিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উত্তর চরনুরুল আমীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শ’ শ’ অভিভাবকগণ প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন। ৫০নং উত্তর চরনুরুল আমীন প্রথামিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক ফতেমা বেগম প্রধান শিক্ষক শাহাজানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তার মেয়ে মিতুর নাম বসাতে নেয়া হয়েছে ২০০ টাকা, ছবিতে ৮০ টাকা, কার্ড ছাড় করতে ১০০ টাকা মোট ৩৮০ টাকা নেয়া হয়েছে। শিশু শ্রেণিতে পড়ে মাইনুরের মা অভিযোগ করেন, তার কাছ থেকে ৩০০ টাকা নেয়া হয়েছে। মুন্সিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র আমজাদ হোসেন বলেন, তার কাছ থেকে কার্ড বসাতে ১০০ টাকা ছবি তোলতে দু‘বার ১২০ টাকা করে মোট ২২০ টাকা নিয়েছে প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন। ওই বিদ্যালয়ের অধিকাংশ টাকা সহকারী শিক্ষক হুমায়ুন কবির উত্তোলন করেছেন বলে জানা গেছে। সহকারী শিক্ষক হুমায়ুনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীর সাথে অসদ আচারণ করারও অভিযোগ রয়েছে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ১৭ বছর পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে ক্ষমতার দাপটে প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
এছাড়াও উপবৃত্তির কার্ড বিতরণে ব্যাংকের সাথে প্রতিষ্ঠান প্রধানের কার্ডের কোনো মিল পাওয়া যায় না। অগ্রণী ব্যাংক ব্যবস্থাপক গনেশ চন্দ্র দেবনাথ মুন্সিরহাট সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ে কার্ড ৬০৩ বিতরণ কথা বললেও ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ৪৭০টি কার্ডের কথা স্বীকার করেছেন বাকী কার্ড কোথায় আছে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ব্যাংকের হিসাব ভূয়া। স্থানীয়রা জানান, বাকী কার্ডগুলো ব্যাংকের অফিসার ও ট্যাগ কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশে ২৫ ভাগ টাকা ব্যাংক অফিসারকে দিয়ে টাকা উত্তোলনকৃত বাকী টাকা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি ভাগবাটোয়ারা করা হয়। উত্তর চরনুরুল আমীন প্রাথামিক বিদ্যালয়ের ব্যাংক থেকে ৩৯৩টি কার্ড দিলেও প্রধান শিক্ষক মো. শাহাজান ২২০ কার্ডের কথা স্বীকার করেছেন। বাকী কার্ডের ব্যাপারে বললে প্রধান শিক্ষক ওইগুলো স্কুলে আছে বলে জানান। মুন্সিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট বরাদ্দ ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৫০০ টাকা, উত্তর চরনুরুল আমীন ২ লাখ ৮২ হাজার ২০০ টাকা বরাদ্দ রয়েছ। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক শাহাজান জানান, কিছু টাকা খরচের ভাবত উত্তোলন করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহাবুদ্দিন মেম্বার জানান, ১৮ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে প্রধান শিক্ষক ওই টাকা দিয়ে স্কুলের কাজ করানো হবে। সিলিপের ৪০ হাজার টাকার কথা বললে তিনি এখনো কাজ করেনি বলে জানান।
এদিকে, গত রোববার আবু বক্করপুর ইউপির চেয়ারম্যান সিরাজ জমাদার ওচমানগঞ্জ ৩ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবি আবদুল্লাহ নাগর উপবৃত্তির খরচ বাবদ অভিভাবকদের কাছ থেকে মোট ২৫৮০০ টাকা উত্তোলন করেছে। ওই টাকা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষক, সাংবাদিক ও অভিভাবকদের উপস্থিতিতে অভিভাবকদের মধ্যে উত্তোলকৃত টাকা ফেরত দেয়া হয়। অগ্রণী ব্যাংকের উপবৃত্তি বিতরণকৃত অফিসার ফারুক হোসেন বিদ্যালয়ের কার্ড ও বিতরণকৃত টাকার পরিমাণের তথ্য প্রদান করতে পারেনি। তবে মুন্সিরহাট সরকারি স্কুলে ১০ হাজার টাকা সরকারি খাতে ফিরত যাচ্ছে বলে জানান। অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক গনেশ চন্দ্র দেবনাথ জানান, উপবৃত্তি অনিয়মের প্রতিরোধের বিষয় আমাদের কোনো হাত নেই। আমাদের আওতাধীন মোট ১৩৩ স্কুলের জন্যে ৪ কিস্তিতে জুলাই-১৫ থেকে ৩০ জুন/১৬ পর্যন্ত মোট বরাদ্দ রয়েছে ৪ কোটি ৯৩ লাখ ৩৫ হাজার ১০০ টাকা। ২৪ জুলাই রোববার টাকা বিতরণ করা শেষ হয়েছে। সরকারি খাতে কত টাকা ফিরত যাচ্ছে তার তথ্য এখনো আমরা মিলাতে পারিনি। এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আ. ছালামের ফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভাব হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল কমির জানান, উপবৃত্তিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি ঠেকাতে মনিটরিং করার জন্যে এবার প্রতিটি বিতরণী কেন্দ্রে সরকারিভাবে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। কোনো প্রধান শিক্ষক অনিয়ম করে থাকলে তাদের সম্পর্কে আমাদেরকে জানান, আমরা ব্যবস্থা নিবো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন