করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্যে ঢাকায় পাঠানো নমুনার রিপোর্ট প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রিতায় চাঁদপুরে সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে স্থানীয়় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগকে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে সামাজিক অসন্তোষও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, চাঁদপুর থেকে সংগ্রহ করা করোনা উপসর্গের নমুনা ঢাকায় দুটি পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। এক প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট একদিন পর চলে আসে, আর অপরটির রিপোর্ট আসতে সপ্তাহ পার হয়ে যায়। অনেক সময় নমুনা দেয়ার দশ দিন অতিবাহিত হলেও রিপোর্ট আসে না। এ কারণে নিশ্চিত হওয়া যায় না নমুনা দেয়া লোকটি করোনায় আক্রান্ত কী না।
নমুনা দেয়া মানুষগুলোর মধ্যে যারা অনেকটা সুস্থ বোধ করেন তারা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে সর্বত্রই আসা-যাওয়া করেন। ফলশ্রুতিতে মনের অজান্তে অনেকেই তাদের মাধ্যমে করোনায় সংক্রমিত হতে থাকেন।
এক সপ্তাহ বা দশদিন পর যখন ওই মানুষগুলোর পজিটিভ রিপোর্ট আসে, তখন এক ভয়ানক পরিস্থিতি দেখা দেয়। পজিটিভ রিপোর্ট আসা মানুষগুলো এতোদিন অবাধে বিচরণ করে কত জনকে সংক্রমিত করেছে তার কোনো হিসেব নির্ণয় করা যায় না। আর এভাবেই চাঁদপুরে ভয়ানকভাবে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
প্রাণঘাতি কোভিড-১৯ এ উপসর্গ নিয়ে ভুগছেন কিংবা মারা গেছেন তাদের সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার জন্যে ঢাকা মোহাম্মদপুরস্থ চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিনে পাঠানো হয়। চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন বেসরকারি। এ প্রতিষ্ঠানের এমডি হচ্ছেন চাঁদপুরের কৃতী সন্তান করোনার জীন রহস্য উন্মোচনকারী প্রফেসর ড. সমীর কে সাহা। তাঁর মেয়ে ড. সেঁজুতি সাহাও এই প্রতিষ্ঠানে বাবার সাথে কাজ করছেন। তাঁদের দুজনের বদান্যতাতেই মূলত এই প্রতিষ্ঠানে চাঁদপুরের স্যাম্পল গেলে একদিনের মাথায় রিপোর্ট পাওয়া যায়। এখানকার রিপোর্টও নির্ভরযোগ্য বলে চাঁদপুরের চিকিৎসকগণ মনে করেন। তবে এই প্রতিষ্ঠানে একদিনে ১শ' জনের বেশি স্যাম্পল তারা গ্রহণ করেন না এবং পরীক্ষাও এর বেশি করতে পারেন না। তাই বাধ্য হয়েই অবশিষ্ট স্যাম্পলগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠান আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিনে পাঠাতে হয়।
আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিনে পাঠানো নমুনার রিপোর্ট আসতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ থেকে দশদিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের অভিমত, নমুনা নেয়ার পর এতোদিন সময় পার হয়ে গেলে সেটার কার্যকারিতা তেমন একটা থাকে না। তাছাড়া অন্য যে সমস্যার সৃষ্টি হয়, তাও খুবই ভয়াবহ। রিপোর্ট আসার মাঝখানের সময়টাতে নমুনা দেয়া মানুষগুলো অবাধে চলাফেরা করতে থাকে। রিপোর্ট আসার পর যখন পজিটিভ রোগী পাওয়া যায়, তখন খুবই দুশ্চিন্তার উদ্রেক হয় যে, এই করোনা আক্রান্ত রোগী এ ক'দিনে কতজনকে
সংক্রমিত করলো! এ জন্যেই চাঁদপুরে এখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এখন প্রতিদিন চাঁদপুরে সংগৃহীত দেড়শ' থেকে দুইশ' স্যাম্পল ঢাকা পাঠানো হয়। প্রতিদিন ঢাকায় দুই প্রতিষ্ঠানেই একশ'র মতো স্যাম্পল পরীক্ষা ছাড়া সেখানে থেকে যায়। এভাবে জমতে জমতে চাঁদপুরের স্যাম্পল বুধবার(১৭জুন) পর্যন্ত পেন্ডিং ছিল ৭৩৯ জনের।
সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, চাঁদপুরে সংগৃহীত নমুনাগুলো ঢাকা গিয়ে জট লেগে যায়। বিষয়টির দ্রুত সমাধান না হলে সার্বিক পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে। তিনি আরো বলেন, চাঁদপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বিষয়টি অবহিত হয়ে সমাধানের জন্য আশ্বস্ত করেছেন ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন