শেরপুরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হোম আইসোলেশনে থাকাবস্থায় মারা যাওয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন তরফদারের (৫৭) ছেলে কলেজশিক্ষার্থী তানভীর হোসেন তরফদার অনিকের এক আবেগঘন স্ট্যাটাস ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। সেইসাথে তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সচেতন মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ১৭ জুন বুধবার সকালে ফেসবুক ওয়ালে দেওয়া স্ট্যাটাসে সে তার পরিবারকে এলাকাবাসীর হাতে নিগৃহিত ও অন্য কারো সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ তুললেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে পুলিশের ভূমিকায়। অন্যদিকে ওই স্ট্যাটাস দেখে পরিবারটির প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে শতশত মানুষ মতামত দিচ্ছেন। মতামতে যারা সামাজিকভাবে পরিবারটির প্রতি অমানবিক আচরণ করেছে, তাদের ধিক্কারের পাশাপাশি পুলিশের মানবিক আচরণকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।
স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো :
“আসসালামু আলাইকুম।আমি মো: তানভীর হোসেন তরফদার অনিক, করোনা আক্রান্ত মৃত মোঃ ছানোয়ার হোসেন তরফদারের পুত্র। আমার বাবা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, (বিদ্যুৎ ভবন) ঢাকায় চাকুরী করতেন। চাকরির দায়িত্ব পালন করার অবস্থায় তিনি ১ম এ টাইফয়েড এ আক্রান্ত হন। এরপর করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। নিয়মিত চিকিৎসকদের পরামর্শে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। চিকিৎসকদের আমাদের মতে তার স্বাস্থ্যের উন্নতিও হচ্ছিল। কিন্তু গতকাল হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট হওয়ায় রাতেই হাসপাতালে ভর্তি করা জরুরি হয়ে পড়ে। অনেক রাত আর করোনা পজিটিভ রোগী হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স আর হাসপাতালে আনতে সমস্যা হয় (স্বাভাবিক)। এরপর মাননীয় ওসি সাহেব আর বিপিডিবি শেরপুর প্রধানকে অনুরোধ করায় তারা মাননীয় সিভিল সার্জন সাহেবের মাধ্যমে আমরা একটা অ্যাম্বুলেন্স পাই। কিন্তু হাসপাতালে আনার পরই আমার সামনে আমার বাবা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাছাড়া আমার বাবা করোনা পজিটিভ হওয়ায় প্রশাসন থেকে যখন বাসা লকডাউন করা হয়, সাথে সাথে সম্মানিত এলাকাবাসীরা বাসার সামনে হানা দেয়, আমাদের প্রয়োজনীয় বাজার, ঔষধ নিতে বাধা সৃষ্টি করে। এমনকি ঢিল ছোড়া শুরু করে। তখন আমরা বাধ্য হয়ে মাননীয় ওসি সাহেবের কাছে সাহায্য আবেদন করি, করার সাথে সাথে কিছু পুলিশ সদস্য এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। এর পর থেকে নিয়মিত মাননীয় পুলিশ সুপার ও মাননীয় ওসি সাহেব আমাদের খোঁজ নিয়েছেন।
আমি, আমার মা হাসপাতালে থাকা মুহূর্তে আমাদের পরিবারের যেসব সদস্যরা বাসায় ছিলেন তাদের জন্য খাদ্যসামগ্রী, ফলমূল ও খোঁজ-খবর নিতে এমনকি হাসপাতালেও আমাদের জন্য খাবার, পানির ব্যবস্থা করতে ওসি সাহেব নিজে এসেছিলেন। ধন্যবাদ দিয়ে জেলা পুলিশ, শেরপুরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ছোট করবো না। আমি ও আমার পরিবার তাদের উপর ঋণী। বিশেষ করে ওসি সাহেব এই ভূমিকা আমরা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মনে রাখবো। আল্লাহ তাকে দীর্ঘজীবী করুন।
বর্তমানে আমাদের শারীরিক অবস্থার অবনতির দিকে। আশা করি সুষ্ঠু চিকিৎসা পাবো ও আল্লাহর রহমতে সবাই সুস্থ হয়ে যাব ইনশাআল্লাহ। দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমার চাচারাও আমাদের সেবা করতে গিয়ে তারাও মানসিক আর শারীরিকভাবে অসুস্থ অনুভব করছেন। আমি মানসিক চাপের মধ্যে আছি তাই ভূল হলে মাফ করবেন।
অনুরোধ: আমাদের এই কথাগুলো জাতির কাছে জানাতে আপনাদের অনুরোধ করছি।”
এ বিষয়ে শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ওই পরিবারের প্রতি এমন আচরণ কোনভাবেই কাম্য নয়। বিষয়টি প্রথমত আমাকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন জানান। এর পরপরই পুলিশ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রাতব্যাপী বাড়ির সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিষয়টি তদারকি করেছেন। এখনও তাদের পবিরারের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তার মতে, এ ধরনের ঘটনায় পুলিশ সবসময়ই সেবকের ভূমিকায় থাকবে।
উল্লেখ্য, ১৬ জুন মঙ্গলবার ভোরে জেলা সদর হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান ঢাকা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সিনিয়র হিসাবরক্ষক, শেরপুর পিডিবি’র সিবিএ’র সাবেক সভাপতি সানোয়ার হোসেন তরফদার (৫৭)। তিনি জামালপুরের সরিষাবাড়ীর অধিবাসী হলেও দীর্ঘদিন যাবত শহরের বাগরাকসা মহল্লায় স্ত্রী, ১ ছেলে ও ২ মেয়ে নিয়ে বসবাস করতেন। এদিকে তার মৃত্যুর পর নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয় স্ত্রী-পুত্র, ২ মেয়ে, শ্যালিকা ও ১ ভাইসহ ৬ জন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন