বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাহিত্য

বরষার পদাবলি

প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অনিচ্ছুক ট্যাক্সি
স ম তুহিন


অলিগলি ভেঙে ঝাপসা ফিঁকে রং ছুঁয়ে দিতে দিতে
চৌকস কিছু উৎসের দরজায় কড়া নাড়ে সীমানার দেয়াল
আমিও জানি সীমান্তের দেয়ালে রং লেগেছে দূরত্বের!

অনিচ্ছুক ট্যাক্সি তুমিই তো বলেছিলে, সুসময়ের মুখে
আলো ফেলবে। তাই আমি আলোয় আলোময় দেখি সব
দেখি একঝাঁক স্বপ্নের নিশ্চিত অভিষেক

মন চায় কাটাকুটি করে এক মলাটে আটকে দিই
কিছু শুভক্ষণের গল্প, তবু হারি বার বার
আমি বুঝি না আমি কার কাছে হারি প্রতিদিন!
অনিচ্ছুক ট্যাক্সি আমি যেতে চাই তোমার সাথে-

সময় কিছু বলছে না বলে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না
মেঘেরা আরো কিছুক্ষণ উড়বে, না ঝরবেÑ

আমিও কি মেঘ হয়ে গেছি?

শুভ্র আহমেদ
শ্রাবণের পাঁচালি

কদমতলায় কেউ একজন আসবে
বাঁশিতে সুর তুলবেÑ এই আশাতেই
হালদার বাড়ির আগুন-বউটি
দুপুর গড়িয়ে বিকেল না হতেই
ঘর-কন্যা ফেলে পায়ে চলা গ্রামপথে
এসে দাঁড়িয়েছে...
আমি তার দিব্যি কেটে সত্যি বলছি
এই শ্রাবণে বৃষ্টি না হলেও আমার
কিছুই এসে যায় না, এই শ্রাবণে একখানা
আটপাতার খবরের কাগজ রেখেছি
অপঘাতে যারা গেলো তাদের কতজন
পাতকী সে হিসেব করবো। কাজটা
বেমামান নয়, অবশ্য পরিশ্রম আর
পারিশ্রমিক দুটোই নিতান্তই... সে যাক
বিরজার ধারে, কদমতলায় কেউ একজন এসেছে
অথবা
হালদার বাড়ির আগুন-বউটি পায় চলা
গ্রামপথে এসে দাঁড়িয়েছে, অথবা দাঁড়াবে
এমন অপেক্ষায়
অথবা আমিই সেই বংশীবাদক এরকম বিশ্বাসে
এই শ্রাবণে একলা একা
পথে নেমেছি।

এই বর্ষায়
কুতুবউদ্দিন আহমেদ

এই বর্ষায় আমিও পারি ওড়াতে তোমার আকাশজুড়ে একটি ঘুড়ি
এসো আমরা রাঙামাটির পাহাড়ে চড়ে মেঘের মতো বৃষ্টি ছুড়ি
রং-বেরঙের পুঞ্জমেঘের ভেলায় আমরা ভাসতে পারি
একটি পাখি দেয় যদি শিস তোমায়-আমায়
দেব পাড়ি সুখের লাগি ঘুরবো মোরা জগৎজুড়ি

বর্ষা অভিলাষ
তানি হক

বলে দিও, সত্যি সত্যি বলে দিও
বর্ষার কচি দু’খানা হাত
যদি, তোমার আধখোলা
মেঘের পাতাগুলো উল্টে দেয়
যদি স্নাত হয়ে যায় উর্বর বৃক্ষজ
অপ্রকাশিত অনুপ্রাস, ওই শুষ্ককণ্ঠ  
ধূসর মাকড়শা-জাল
সেই প্রিয় গন্ধমাখা চায়ের কাপ
সিঁড়িঘরের ওম,
আর,
আসে যদি প্লাবন, প্লাবন।
তবে শপথ করে বলছি,
ভুলে যাবো সেদিনের সমস্ত টুকরো গান
গুঞ্জনময়-ক্ষত, নিষিক্ত-অন্ধকার
উপেক্ষিত গতকাল
আর সে ভাঙ্গা প্রহর রাঙিয়ে নেব
এ প্রত্যুষ, বৃষ্টিফোঁটা
এক উঠোন নুন কাদাজলে।


বৃষ্টি
মাহমুদুল হাসান নিজামী

অসময়ে বৃষ্টি আসে
নিথর মৃত্তিকায় কালো গোলাপের পরাগ হাসে
সাত রাস্তা পেরিয়ে শত বছরের শিরিষ তল
জলবিহিন বৃষ্টি ফোয়ারায় ভিজেছিল আমাদের উপতল
সারা অবয়বই তার ছন্দময়
যেন এক কবিতা
অক্ষি যুগলে তার সাত সাগরের গহীনতা
ওটাই একখানা কবিতা
দেখ দেখ ঐ ছবিটা

বৃষ্টির নিমন্ত্রণ
আমির হোসেন মিলন

ঘুমের রঙিন ঠোঁটে ভাসমান পরীর তুলতুলে চুম্বন
কি শিহরণ বাড়ায় বৃষ্টি ঝরে সারারাত

মেঘের খোঁপায় গোঁজা বাতাসের ফুল
আকাশের নীলচোখে সোনালি হাসি

এ অদ্ভুত অনুভূতির নীলাভ সন্ধ্যায়
প্রেমিক বাতাস উড়িয়েছে ঘোমটার আঁচল

প্রেমের উঠোনজুড়ে ভালোবাসার জল
এক বুক আকাক্সক্ষার মুখ রেখেছি ভিজিয়ে

বিকেলের রঙিন ঠোঁট সবুজ ঘাসের ঠোঁটে মুগ্ধতা ছড়ায়
পল্লীর কোলজুড়ে পাখিদের কলরব
চোখের দূরত্বে চোখ ছুঁয়ে যায় মন

এই রৌদ্রের পাহাড় ঠেলে
মেঘের আকাশে ওড়াবো ঘুমের পারদ

আমার কবিতার জানালা খুলে
বৃষ্টির নিমন্ত্রণ পৌঁছে দেবো তোমার উন্মুখ মনে
তুমি ফিরে এসো আলিঙ্গন করো আমি জন্ম নেবো বারবার

জোছনার অবরোধ ভেঙে মেঘেদের রথযাত্রায়
আমাকে সাথে নিও
মাধবীলতার বুকের ভেতর শুয়ে শুয়ে
শুনবো তোমার নূপুরের আওয়াজ

হে প্রকৃতি নগ্ন করো
ইদ্রিস আলী মেহেদী

ইট-সুরকির বন্দীশালায় মরমী আকুতি
আজ খরাক্রান্ত
আর্দ্রতার কোমলতা চাহিদার মঞ্চ থেকে
বাদ্যহীন গেয়েছে বিদায়ীগান
ক্রান্তিকালে বারুদে পুড়ছে চৈতন্য-শেকড়Ñ
আকাশ-উন্মুখ প্রান্তরের শুকনো ঘাসের বুকে
ক্ষতিকর পোকা-মাকড়ের গোপন আস্তানা
    কেড়ে নিচ্ছে সব শৈল্পিকতা...

এই তপ্ত আর বৈরি লগ্নে
হে প্রকৃতি নগ্ন করো ঐশ্বরিক ফল্গুধারা!
বর্ষার জোয়ারে ভাসাও অকল্যাণের সমস্ত অঙ্কুরÑ
সিক্ততার স্বর্গীয় ধারায় পরাক্রম এই উষ্ণতাকে
কর্পূরের মতো ওড়াও সপ্তাকাশ ফুঁড়ে মিলে যাক
ফেরারীর পথে...

ভেজাকাব্য
এলিজা খাতুুন

আমার সমস্ত অস্তিত্বে লিখেছোÑ
তোমার প্রথম পা-ুলিপি ;
মেঘ-কলম জলের লিখনে যেমন লিখেÑ
মাটির শরীরে সিক্ততা,
দেখেছো ? ভরা শ্রাবণেÑ
ভেজা ভূমি কেমন জলখেলায় হাসে!
হাঁটু জলে থৈ থৈ মাঠÑ
ধারণ করে কুড়––ক মুড়–ক মৃদু-¯্রােত-ধ্বনি।
আমি বান ঠেকাতে বাঁধ দিয়েছি ;
বাঁধের অযুত রন্ধ্র তবু শুষে অনুভবের জল,
রচিত হয় আমার জমিনে তুমুল ভেজাকাব্য
আর নিঃশব্দে পড়ি জলের গোপন লিপি।

আকাশ থেকে শরীরে
কাজী রকিবুল ইসলাম

বৃষ্টির সাথে ভালবাসা আজন্ম খেলা
যখনই আসুক রাত-দিন-বেলা,অবেলা,
মেঘ দেখলেই ছুটে যেতাম ছোটবেলা ।

বাড়ীর পাশে মাঠে শস্যক্ষেতের আলে
দাঁড়িয়ে থাকতাম কখন বৃষ্টি নামবে রিমঝিম তালে
বৃষ্টির মিষ্টি মধুর শব্দ টিনের চালে
আনন্দ হিল্লোল যেন নাচে মাতালে।
কৈশোরে বৃষ্টির ভালবাসা নিতাম
হাওড়-বাঁওর-বিল-পুকুর, ধানের চাতালে ।

বৃষ্টির ভালবাসানি যৌবনে কম, কর্মের কারণে
ছাড়িনি আমি তাকে- টানি নানা অজুহাতে,
ভালবেসে বৃষ্টিকে রেখেছি সাথে।

গ্রাম-শহর কখনও পাহাড়ে
মধ্য বয়সে বৃষ্টিকে ধরেছি অবসরে,
বাড়ির ছাদে- খোলা আকাশ থেকে শরীরে।


শ্রাবণের কান্না
শাহরিয়ার সোহেল

একগুচ্ছ বেদনা ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে
তাদেরকে খুঁজতে
খুঁজতে
খুঁজতে
এখন আমি বিরহকাতর চোখের মতো ক্লান্ত
দুর্দান্ত পথিকের তীব্র তাপদাহের তৃষ্ণার মতো ক্লান্ত
এখন কাঁদলে স্থির থাকে আমার চেতনা
চরিদিকে ওড়ে না ভ্রমর
পাখির কলতান শূন্য
ভালোবাসার ফুল ফোটে না কোথাও
এখন আমি নীরবে সয়ে যাওয়া শ্রাবণের কান্না

বর্ষা
সৈয়দ রনো

ঘোলাটে রঙের জলে ভিজিয়েছি পাও
বেদনার স্রোতে ভাসে জীবনের নাও
শোকে মন দেয় খিল চোখভরা জল
হেসে কেঁদে জল মুছে কুড়িয়েছি বল
জীবনের তরী বেয়ে খুঁজি আমি নীড়
বুকে এসে বিঁধে যায় রাক্ষুসে তীর
বর্ষার চোখে দেখি দুখে ফাটে বুক
বুকেতে জমেছে ব্যথা কালো তাই মুখ।

প্রণয়ে জমেছে সুখ প্রেয়সীর বুকে
একা বসে ভাবি রোজ কাঁদি তার দুঃখে
দুঃখের শেষে নেই বাড়ে শুধু জ্বালা
দুখি সেও সুখী হয় ফিরে এলে কালা।
কালার জমানো সুখে করি মাখামাখি
অপয়ার সুখ সে তো বর্ষার আঁখি।

শ্রাবণ তুমি
শেখ হামিদুল হক

অস্থির প্রকৃতি অস্থির মানুষের মন, আকাশজুড়ে
আতঙ্কের মেঘ, অবিরাম হুঙ্কারে সতর্ক বার্তা আক্রমণের,
কখন কোথায় বজ্রাঘাত হবে নির্মম নিষ্ঠুরতায়,
কে মৃত্যুর হিমশীতল ছায়ায় গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হবে?
চেতনার দেয়ালে বার বার অঙ্কিত হয়
ভয়ার্ত মানবের উৎকণ্ঠার পদচিহ্ন।

মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা কোথাও নেই নিরাপত্তার
সুনিশ্চিত নির্ভরতা, জীবনের স্বাভাবিক গতিপথ থমকে গেছে
ক্রমাগত লাশের মিছিলে, থামেনি দুর্বৃত্ত মেঘের চলমান হুঙ্কার;
পুনর্বার আক্রমণের সংকেত। নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে আতঙ্কের উষ্ণতা,
রক্তের প্রবাহে হিম শীতলতা। আজ জীবন অপাঙ্ক্তেয়, মূল্যহীন
ডাস্টবিনে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত বস্তুর স্তর বিন্যাস।

শ্রাবণের শান্তিময় বর্ষণে ধুয়ে যাবে কি সন্ত্রাসী
মেঘের ক্রমাগত বজ্রাঘাতের সূতিকাগার
কিংবা ধ্বংসাত্মক স্ফুলিঙ্গ শান্তির পরশে নিভে যাবে কি?
নাকি অবিরাম লাশের মিছিলে লাশের নগরীর
বাসিন্দা হবে মানুষ নামের শ্রেষ্ঠ জীব?
লাশের মিছিলে লাশ নিয়ে টানাটানি করবে আতঙ্কিত মানবতা?
শ্রাবণ তুমি ছড়িয়ে দাও উত্তপ্ত ধরণীর বুকে শান্তির পরশ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন