দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার কোটি মানুষের করোনাভাইরাস শনাক্তে একটি পিসিআর ল্যাব বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না। বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজের এ ল্যাবে প্রতিদিন গড়ে ২ শ’র বেশি নমুনা পরীক্ষা সম্ভব না হওয়ায় রোগীকে ৮-১০ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ফলাফল পেতে সময় লাগছে আরো ৩-৫দিন। ফলে ঐ সময়ের মধ্যে চিকিৎসার বাইরে থাকা বা আইসোলেশনে না থাকা রোগী ও তার সংস্পর্শে আসা নিকটজনদের অবস্থা কি হচ্ছে, তা নিয়ে শংকিত চিকিৎসকগণ। ভোলায় অনুরূপ একটি ল্যাব স্থাপন হলেও জনবল সঙ্কটে চালু করা যায়নি বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় পরিচালক। তবে পটুয়াখালীতে একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন আরো জরুরি হলেও সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ‘কোভিড-১৯’ রোগী শনাক্তসহ চিকিৎসা ব্যবস্থায় চরম সঙ্কটে রয়েছে।
গত ৭ এপ্রিল দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র পিসিআর ল্যাবটি চালু হবার পর থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত প্রায় ১৬ হাজার নমুনা পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষার ফলাফলে দক্ষিণাঞ্চলে আক্রান্তের হার ১৩.২৫%-এর কমবেশি বলে জানা যায়। সরকারি হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলায় ইতোমধ্যে প্রায় আড়াই হাজার কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে অর্ধ শতাধিক। সুস্থ হয়েছেন ছয় শতাধিক।
দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার মধ্যে বরিশালের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। তারমধ্যে বরিশাল মহানগরীর অবস্থা আরো ঝুঁকিপূর্ণ। ইতোমধ্যে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৪০০ শ’র মধ্যে মহানগরীতেই সাড়ে ১২শ’। জেলায় মোট মৃত্যু ২০ জনের মধ্যে মহানগরীতেই দুই চিকিৎসকসহ ১১ জন। এছাড়া অন্য জেলাগুলোর অবস্থাও প্রতিনিয়ত খারাপের দিকে যাচ্ছে। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি জেলাতেই আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যু হার বেশি। সুস্থতার হারও কম। বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতরের মতে, এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন মাত্র ৬৬০ জন। যার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন মাত্র ১০ জন।
সার্বিক পরিস্থিতি এবং জনসংখ্যার হিসেবসহ ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনায় দক্ষিণাঞ্চলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পটুয়াখালী ও ভোলাতে দুটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন। পরবর্তিতে বরগুনা ও পিরোজপুরেও অনুরূপ ল্যাব স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞগন।
তবে বরিশালের পিসিআর ল্যাবটিতে দৈনিক প্রায় ৩শ’ নমুনা পরীক্ষা সম্ভব হলেও জনবল সঙ্কটে ১৮০ থেকে ২ শ’র বেশি সম্ভব হচ্ছেনা। মেডিক্যাল কলেজের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, এখানে কমপক্ষে ৩০ জন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টসহ কর্মী প্রয়োজন হলেও আছেন মাত্র ১০জন।
ফলে বরিশাল শের এ বাংলা মেডিক্যাল কলেজে প্রতিদিন লাইনে দাড়ানো রোগীদের অর্ধেকেরও নমুনা সংগ্রহই সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি পুুলিশসহ আইন-শৃংখলা বাহিনী, চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মী এবং সরকারি-আধাসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নমুনা সংগ্রহ করতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষকেই ৮-১০ দিন পরে নমুনা পরীক্ষার তারিখ সম্বলিত স্লিপ ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতেকরে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলেই করেনাভাইরাস শনাক্তের বিষয়টি যথেষ্ঠ বিতর্কিত হয়ে পড়ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন