পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মো: মাহমুদুর রহমান কোভিড আক্রান্ত হয়েও স্বাস্থ্য বিধি না মেনে পটুয়াখালী শহরের নোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তার ব্যক্তিগত চেম্বারে গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসা প্রদান করেছেন। একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও সিনিয়র ডাক্তার হয়েও তার এ ধরনের কর্মকাণ্ডে হতবাক সাধারণ মানুষ সহ না জেনে চিকিৎসা গ্রহণকারী রোগীরাও।
সূত্র মতে, ডাক্তার মোঃ মাহমুদুর রহমান গত ১ জুলাই বুধবার করোনা উপসর্গ নিয়ে পটুয়াখালীতে নমুনা প্রদান করেন, ২ জুলাই বৃহস্পতিবার রাতে আইসিডিডিআরবির ল্যাব থেকে প্রেরিত রিপোর্টে ১৩ নম্বর সিরিয়ালে ডাক্তার মোঃ মাহমুদুর রহমানকে করোনা পজেটিভ শনাক্ত করে পটুয়াখালীতে রিপোর্ট প্রদান করা হয়। আইসিডিডিআরবির ঐ রিপোর্টে ১৬ জনের মধ্যে ৭জন করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয় এবং তাদের প্রত্যেককে ওই রাতেই মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে তা জানিয়ে দেওয়া হয়। ডাক্তার মাহমুদুর রহমান করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়ে তা জেনেও তার ব্যাক্তিগত চেম্বারে শুক্রবার রোগীদের সিরিয়াল নেওয়া হয়।
ডাক্তার মাহমুদুর রহমান গতকাল বিকেল থেকে তার চেম্বারে সিরিয়াল গ্রহণকারী রোগীদের চিকিৎসা প্রদান শুরু করেন, বিষয়টি স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পৌঁছলে সন্ধ্যার পরে তারা মাহমুদুর রহমানের চেম্বারে গিয়ে রোগী দেখা অবস্থায় তাকে চেম্বারে পান। এসময় গণমাধ্যমকর্মীরা ডাক্তার মাহমুদুর রহমানের কাছে জানতে চান, আপনি কোভিড আক্রান্ত হয়ে রোগী দেখেন কিভাবে, তিনি জানান আজ শুক্রবার আড়াইটায় তিনি জানতে পেরেছেন, যাদের সিরিয়াল নেওয়া হয়েছে, তাদের চিকিৎসার পরবর্তী ধাপের জন্য তাদেরকে পরামর্শ দিচ্ছি, এছাড়া আমার ব্যক্তিগত ১৪ দিনের বাজার করার জন্য আমি চেম্বারে এসেছি। বিষয়টি অনৈতিক কি না প্রশ্ন করলে তিনি জবাব দেন," অনৈতিক হলে আপনারা সংবাদ প্রচার করেন, সরকার আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, আমার তো কোন আপত্তি নেই"। তিনি আরো বলেন, সরকার বলেছেন চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগীদের সেবা প্রদান করতে,এ সময় সাংবাদিকরা পাল্টা প্রশ্ন করেন ,কোভিড আক্রান্ত হলেও কি সরকার চিকিৎসাসেবা দিতে বলেছেন, তখন তিনি বলেন আমি জানতে পেরেছি আজ দুপুর আড়াইটায় ,দুপুর আড়াইটায় জানতে পেরে আপনি কিভাবে চিকিৎসাসেবা দিলেন ,সংবাদকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন রোগীদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হলে দায় দায়িত্ব আমার।
এ সময় তার কাছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা জানান তাদের কাছে ডাক্তার সাহেব করোনা আক্রান্ত বিষয়টি জানানো হয়নি, তারা তো ডাক্তারের কাছ থেকে না জেনে চিকিৎসা গ্রহন করেছেন ,জানানো হলে তারা আসতেন না।
ডাক্তার মাহমুদুর রহমান তার কোভিড আক্রান্ত হওয়ার খবরটি শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় পেয়েছেন বলে জানালেও বিষয়টি সঠিক নয়। কেননা পটুয়াখালীতে আইসিডিডিআরবি কর্তৃক বৃহস্পতিবার রাতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে যে রিপোর্টটি প্রেরণ করা হয়েছে, এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে তার মুঠোফোনে যে বার্তাটি প্রেরণ করা হয়েছে, সেই একই বার্তা বৃহস্পতিবার রাতে প্রাপ্ত অপর এক জন করোনা পজেটিভ শনাক্তকৃত রোগী শুক্রবার সকালে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তিহয়েছেন ।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডাক্তার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিষয়টি আমরা রাতে জেনেছি ঘটনাস্থলে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধি দল গিয়েছিল তারা ডাক্তার সাহেবকে পাননি, চেম্বারটি তালাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্তৃপক্ষকে কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে বক্তব্য এর জন্য আগামীকাল কে চিঠি ইস্যু করা হবে।
উল্লেখ্য ইতোমধ্যে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাঁচজন চিকিৎসকসহ কমপক্ষে ১০ জন চিকিৎসক কোভিভ আক্রান্ত হয়েছেন, এছাড়াও ২৫ থেকে ৩০ জন সেবা প্রদান কারী সেবিকা সহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন