বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

তলোয়ার-ছুরি দিয়ে হত্যা করা হয় সিরাজউদ্দৌলাকে

বাংলার স্বাধীনতা হারানোর ইতিহাস-৩

বিবিসি বাংলা | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০২০, ৯:২৩ পিএম

পলাশীর যুদ্ধ নিয়ে লেখা সুদীপ চক্রবর্তীর বইয়ের প্রচ্ছদ -সংগৃহীত


‘আ হিস্ট্রি অব দা মিলিটারি ট্র্যান্স্যাকশনস্ অব দা ব্রিটিশ নেশন ইন ইন্দোস্তান’ বইতে রবার্ট ওরমে বর্ণনা দিয়েছেন সেই দিনটার। ‘পদচ্যুত নবাবকে মাঝরাতে হাজির করা হল মীর জাফরের সামনে। ওই রাজমহলেই ক’দিন আগেও বাস করতেন সিরাজউদ্দৌলা। মীর জাফরের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে প্রাণভিক্ষা করেছিলেন সিরাজউদ্দৌলা। সেপাইরা মহলের অন্যদিকে নিয়ে গেল সিরাজউদ্দৌলাকে। ওদিকে মীর জাফর তার পারিষদদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেন সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে কী করা উচিত, তা নিয়ে।

‘তাদের কাছে তিনটে পথ খোলা ছিল: হয় তাকে মুর্শিদাবাদেই বন্দি করে রাখা হোক, অথবা দেশের বাইরে অন্য কোথায় কয়েদ করা হোক। তৃতীয় বিকল্প ছিল প্রাণদন্ড। অনেকেই চেয়েছিলেন সিরাজকে বন্দি করে রাখতে। কিন্তু মীর জাফরের ১৭ বছর বয়সী পুত্র মীরান কড়া বিরোধিতা করেছিলেন। মীর জাফরের নিজস্ব কোনও মতামত ছিল না’, -লিখেছিলেন রবার্ট ওরমে।

তারপরের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন ইতিহাসবিদ সুদীপ চক্রবর্তী, স¤প্রতি প্রকাশিত তার বই ‘প্ল্যাসি : দা ব্যাটল দ্যাট চেঞ্জড দ্য কোর্স অব ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি’তে। মীর জাফর যেহেতু নিজস্ব কোনও মতামত দেননি সিরাজউদ্দৌলাকে নিয়ে কী করা হবে, তাই ‘মীরান সেটাকেই বাবার সম্মতি বলে ধরে নিয়েছিল’ -লিখছেন সুদীপ চক্রবর্তী।

তিনি ওই বইতে লিখেছেন, ‘সে তার বাবাকে বলল, আপনি এখন বিশ্রাম নিন। আমি এদিকটা সামলে নেব। মীর জাফর ভাবলেন কোনও হিংসাত্মক কিছু নিশ্চয়ই হবে না। তিনি অনেক রাতে দরবার শেষ করে শয়নকক্ষে চলে যান’।

সৈয়দ গুলাম হুসেইন খানের বইতেও এর পরের ঘটনাক্রম পাওয়া যায়। ‘মীরান তার এক সাথী মোহাম্মদী বেগ-কে দায়িত্ব দিল সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করার। মোহাম্মদী বেগের আরেকটা নাম ছিল লাল মোহাম্মদ। মীরান তার সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে যখন সিরাজউদ্দৌলার কাছে গেল, তখনই সিরাজ বুঝে গিয়েছিলেন কী হতে চলেছে এরপর।

‘তিনি আবেদন করলেন মেরে ফেলার আগে যেন তাকে ওজু করে নামাজ পড়ার অনুমতি দেয়া হয়। নিজেদের কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করার তাগিদে হত্যাকারীরা সিরাজের মাথায় এক ঘড়া পানি ঢেলে দেয়। তিনি যখন বুঝলেন যে, ঠিকমতো তাকে ওজু করতে দেয়া হবে না, তখন তিনি খাওয়ার জন্য একটু পানি দিতে বললেন’ -লিখেছেন সৈয়দ গুলাম হুসেইন খান।

‘ঠিক তখনই মোহাম্মদী বেগ ছুরি দিয়ে সিরাজের ওপরে প্রথম আঘাতটা হানলেন। ছুরির আঘাত হানা হতেই বাকিরা তলোয়ার দিয়ে হামলা চালাল সিরাজের ওপরে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাদের কাজ শেষ হল। মাথাটা ঝুঁকে পড়ল সিরাজের, তিনি গড়িয়ে পড়লেন’ -নিজের বইতে লিখেছেন রবার্ট ওরমে। তখন সিরাজউদ্দৌলার বয়স ছিল মাত্র ২৫ বছর।
পরের দিন সিরাজউদ্দৌলার ক্ষতবিক্ষত দেহ হাতির পিঠে চাপিয়ে মুর্শিদাবাদের অলি-গলি, বাজারে ঘোরানো হয়েছিল। যেন সকলের কাছে প্রমাণ করার চেষ্টা যে সিরাজ পরাজিত।

সৈয়দ গুলাম হুসেইন খান এই বর্বরতার কথা জানাতে গিয়ে লিখছেন, ‘সেই বীভৎস শবযাত্রার মধ্যেই মাহুত জেনে বুঝেই হুসেইন কুলি খাঁয়ের বাসভবনের সামনে লাশ বহনকারী হাতিটিকে দাঁড় করাল। দু’বছর আগে ওই হুসেইন কুলি খাঁকে হত্যা করেছিলেন সিরাজ।

‘এখন তার লাশ থেকেও কয়েক ফোঁটা রক্ত রাস্তায় গড়িয়ে পড়ল, যেখানে হুসেইন কুলি খাঁকে হত্যা করা হয়েছিল’। মীরানের নিষ্ঠুরতা কিন্তু ওখানেই শেষ হয়নি। কিছুদিনের মধ্যেই সে আলিবর্দি খানের বংশের সব নারীদের হত্যা করেছিল। (চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
NURUL ISLAM SOHEL ৫ জুলাই, ২০২০, ১০:৩৬ পিএম says : 0
নবাব সিরাজদৌলার যে জাতি গাদদারী করে ছিলো সে জাতি আজীবন অভিসপ্ত
Total Reply(0)
md shohidul islam ৬ জুলাই, ২০২০, ১:৪৭ এএম says : 0
"মীর জাফরের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে প্রাণভিক্ষা করেছিলেন সিরাজউদ্দৌলা" এটা ১০০% মিথ্যা অপবাদ। এক জন দেশ প্রেমিক বীরকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এই মিথ্যা ইতিহাস রচনা করা হয়েছে।
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ৬ জুলাই, ২০২০, ২:১০ এএম says : 0
আসলে নবাব সিরাজউদ্দৌলা নিজেই নিরবুদ্বিতার পরিচয় দিয়েছিলেন। দরকার ছিলো তিনি নিজে যুদ্ধ পরিচালনা করার। মীরজাফর সে তো এর আগেও মীরজাফরের পরিচয় দিয়াছিলো।
Total Reply(0)
আনন্দ মোহন ভদ্র ৬ জুলাই, ২০২০, ১:৩৮ পিএম says : 0
সবই ক্ষমতার লোভ আর ভোগ বিলাসের জন্য। তাই এই প্রতিশোধ আর বিশ্বাসঘাতকতা।
Total Reply(0)
Nimbari sk ৭ জুলাই, ২০২০, ৮:২৭ পিএম says : 0
Mirjafor nobab jatir kolonko sara jibon manuser kachhe nimu khatam Howe thakbe
Total Reply(0)
Siful Islam j ১৭ জানুয়ারি, ২০২২, ১:০৪ পিএম says : 0
এখান থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে যে ঈমানদার এক গর্তে দুবার দংশিত হয় না। মির জাফর যখন প্রথমবার গাদ্দারী করছে তখনই তাকে কঠিন শাস্তি দিয়ে দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়া উচিত ছিল। তাকে পরে আবার সেনাপতির দায়িত্ব দেওয়া ঠিক হয় নি।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন