শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

উখিয়া শারী আইসোলেশন সেন্টারে এ্যাকশন শুরু, ২ চিকিৎসক চাকুরীচ্যুত

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২০, ৩:২৮ পিএম

উখিয়া শারী আইসোলেশন সেন্টারে রোগীদের সাথে দুর্ব্যবহার ও অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় ২ উর্ধ্বতন চিকিৎসককে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে। চাকুরীচ্যুত চিকিৎসকদ্বয় হলেন-প্রতিষ্ঠানটির চতুর্থ প্রধান ডা. নাজিয়া নাজি এবং মেডিকেল অফিসার ডা. সাজু।

রিলিফ এর হেলথ এন্ড নিউট্রিশন প্রোগ্রাম ম্যানেজার, নাইজেরিয়ান নাগরিক পেট্রেশিয়া এফে আজকিয়ে গণমাধ্যমকে বৃহস্পতিবার ৯ জুলাই এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, রোগীদর প্রতি চরম অসদাচরণ, দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও গাফেলতির বিষয় তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় এ ২ জন চিকিৎসককে চাকুরী থেকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কয়েকজনের কাছ থেকে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে।

পেট্রেশিয়া এফে আজকিয়ে জানান, রিলিফ ইন্টারন্যাশনালের ১১০১, ১৪তম ষ্ট্রীট, এন ডাব্লিউ স্যুট ওয়াশিংটন ডিসিস্থ সদর কার্যালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে চিকিৎসকদ্বয়ের বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ব্যবস্থা ৯ জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট রোগীকে গৃহীত ব্যবস্থার বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।

ওয়াশিংটন ভিত্তিক রিলিফ ইন্টারন্যাশনালের উখিয়া শারী আইসোলেশন এন্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টারটি সার্বিক পরিচালনায় আন্তর্জাতিক মানদন্ড বজায় রেখে আরো গুছালো, চমৎকার ও পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা কৌশল তৈরি করছেন বলে জানান তিনি। যেকারণে প্রতিষ্ঠানটির আরো কিছু অযোগ্য ও অপ্রয়োজনীয় লোককে অপসারণ করা হবে। রোগীদের সেবায় আনা হবে, মান ও গুনগত পরিবর্তন। তিনি বলেন, গুটি কয়েক অযোগ্য মানুষের জন্য বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জনকারী রিলিফ ইন্টারন্যাশনালেরএর সামগ্রিক কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়না। তবে নতুন একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে একটু সমন্বয়হীনতা থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটা ক্রমান্বয়ে কাটিয়ে উঠা হচ্ছে।

জাতিসংঘের অংগ প্রতিষ্ঠান ইউএনএইচসিআর চলমান করোনা ভাইরাস সংকটে তাদের মানবিক উদ্যোগের অংশ হিসাবে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে মাত্র ৪০ দিনে এ হাসপাতালটি নির্মাণ করেছিলো। গত ২৭ মে থেকে সেখানে কোভিড-১৯ রোগীদের ভর্তি দেওয়া শুরু হয়। ওয়াশিংটন ভিত্তিক রিলিফ ইন্টারন্যাশনালের উখিয়া শারী আইসোলেশন এন্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টারটি সার্বিক পরিচালনা করার দায়িত্ব পান।

৩৪ টি আলাদা বিভাগে বিভক্ত করে উখিয়ার শারী আইসোলেশন এন্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টারটি পরিচালিত হচ্ছে। রিলিফ ইন্টারন্যাশনাল এর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণেরে দায়িত্ব পালন করলেও স্থানীয় ও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পালন করে আসছিলো ৩৪ টি বিভাগের। দায়িত্বপালনকারী এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক পরিচালনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে হাসপাতালের কার্যক্রম।

করোনা 'পজেটিভ' হয়ে এখানে গত ২৮ জুন পরিবারের ৭ সদস্য সহ ভর্তি হন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী। ভর্তি হয়ে তিনি সেখানে দেখতে পান, বিভিন্ন বিভাগে চরম অনিয়ম ও সমন্বয়হীনতা।

গত ৪ জুন গণমাধ্যমকর্মী মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী'কে প্রেসক্রাইব করা সেফিরক্সিম ১ গ্রাম নামক একটি ইনজেকশন সকাল ৯ টায় দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সকাল ৯ টার ইনজেকশন বিকেলেও কেন দেওয়া হলোনা-তা মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী দায়িত্বপালনরত চিকিৎসক ও নার্সদের কাছ থেকে জানতে চাইলে তারা মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী'র দিকে দলবল নিয়ে মারমুখী হয়ে তেড়ে আসে, দুর্ব্যবহার ও অসদাচরণ করেন। এর প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে এডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী হাসপাতালের ডি#২ নম্বর নিজ সিটে অনশন শুরু করে দেন।

সিনিয়র আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মী এডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী হাসপাতালের বেডে অনশন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি, এসএসসি ব্যাচ ৮৪ এসোসিয়েশন সহ একের পর এক বিভিন্ন দায়িত্বশীল সংগঠন। নিজ বেডে অনশনরত অবস্থায় মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী দীর্ঘ ১৮ ঘন্টা নাখেয়ে, ওষুধ পত্র সেবন করেননি। ফলে তিনি একজন কোভিড-১৯ রোগী হয়ে জীবন সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়ে যান

পরে দীর্ঘ ১৮ ঘন্টা পর রিলিফ ইন্টারন্যাশনালের এর হেলথ এন্ড নিউট্রিশন প্রোগ্রাম ম্যানেজার পেট্রেশিয়া এফে আজকিয়ে উখিয়া
শারী আইসোলেশন সেন্টারে এর ডি-২ নম্বর বেডে নিজে স্বশরীরে গিয়ে পানি পান করিয়ে এডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী'র অনশন ভাঙ্গিয়েছেন। ৬ জুন বেলা ১ টার দিকে এ অনশন ভঙ্গ করান তিনি।

তার আগে, ওই সেন্টারে চরম অব্যবস্থাপনা, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ দেওয়া, ভুল ওষুধ দিয়ে ফাইল গায়েব করা, মেডিকেল যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা ও রোগীদের প্রতি দুর্ব্যবহারের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয় অনশনরত মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানীকে। এতবড় একটি প্রতিষ্ঠানে ডায়াবেটিস মাপার কোন গ্লোকোমিটার নেই। রিলিফ ইন্টারন্যাশনালেরএর হেলথ এন্ড নিউট্রিশন প্রোগ্রাম ম্যানেজার পেট্রেশিয়া এফে আজকিয়ে এসব বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যে এ্যাকশন শুরু করেন।

৭ জুলাই সকাল হতে উন্নতমানের রুটি, ডাল ও অন্যান্য আইটেম রোগীদের দেওয়া হয়েছে। এটি চালু হওয়ার ৩৭ দিন পর্যন্ত কোনদিন কোন রোগীকে ম্যানুতে থাকা সত্বেও ফ্রুট সরবরাহ দেওয়া না হলেও ৭ জুলাই বিকেলে হাসপাতালটি চালুর ৩৮ তম দিবসে রোগীদের উন্নতমানের ফ্রুটস সরবরাহ দেওয়া হয়েছে। যা নিয়মিত অব্যাহত থাকবে। রাতের খাবারের ম্যানুতে দেশি মুরগীর সাথে দেওয়া হয়েছে-ডাল ও শব্জী। খাওয়া দাওয়ার সাথে এ হাসপাতালে আগে পুষ্টিবিদের কোন পরামর্শ না থাকলেও ৭ জুলাই থেকে এখানকার সকল খাদ্য তৈরিতে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।
এর আগে রোগীদের পানির মতো দুধ সরবরাহ করা হলেও ৭ জুলাই নৈশভোজের পর থেকে রোগীদের ভালমানের দুধ সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে যে উন্নয়ন কাজ সমুহ অসম্পূর্ণ ছিলো, তা সম্পন্ন করতে মঙ্গলবার ৭ জুলাই সকাল থেকে জোরেশোরে নামানো হয়েছে, পর্যাপ্ত শ্রমিক। ওয়াশ ও বাথরুম গুলো ৭ জুলাই সকাল থেকে ঝকঝক করা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন