পৃথিবী জুড়ে নভেল করোনা ভাইরাসের আক্রমনে মানুষ দিশাহারা হয়ে পরেছে। বাংলাদেশেও ইতোমধ্যে কমিউনিটি সংক্রমন ঘটেছে। ফলে বাংলদেশের মানুষ ভীত এবং আতঙ্কিত। এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। তবে আমাদের হতাশ হলে চলবেনা। করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার যে তথ্য চিকিৎসকরা এবং বিশেষজ্ঞরা প্রকাশ করেছেন তা হল- ব্যক্তিগত সচেতনা, পরিষ্কার পরিছন্নতা ও দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো। আসলে আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যার যতবেশী থাকে সে তত কম আক্রান্ত হচ্ছে। বর্তমানে মহামারী আকারে যে করোনা ভাইরাস ছোবল বসাচ্ছে তা প্রতিরোধে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোই আমাদের কাজ। দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলে করোনা ভাইরাস আক্রমন করতে পারে না বা আক্রান্ত হলেও ভাইরাসটি দেহে পরাজিত হয়ে যায়। ফলে মানুষ ভালো হয়ে উঠে। যে কোনো ভাইরাস হচ্ছে প্রাটিন যুক্ত অণুজীব। এর কারণে মানুষ সর্দি, কাশি, জ্বর, শ্বাসনালীর নানা রোগে আক্রন্ত হয়। এ ভাইরাস মানবদেহে প্রাণঘাতী রোগ সৃষ্টি করতে পারে অতি সহজে। করোনা ভাইরাস এমনি একটি ভাইরাসের প্রতিনিধি। একে প্রতিরোধে আমাদের সতর্ক, সচেতন ও সুষম খাবার গ্রহন করে সুস্থ ও সবল থাকতে হবে। তাই সঠিক খাদ্য গ্রহনের মাধ্যমে বর্তমান সময় মহামারী করোনা প্রতিরোধ করা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আমাদের যা যা করতে হবে তা আলোচনা করা হলো । আমাদের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন অ্যান্টি অক্রিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। আর নিয়মিত ব্যায়াম করুণ। মানসিক চাপ কমান। ঘরে থেকে নিজ নিজ ধর্ম মোতাবেক প্রার্থনা করুণ ।
অ্যান্টি অক্রিডেন্ট কী : অ্যান্টি অক্রিডেন্ট হচ্ছে কিছু ভিটামিন, মিনারেল, এনজাইমের সমন্বয়ে গঠিত উপাদান। যা শরীরের ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে বা জীবাণুকে ধবংশ করে। ফলে শরীর রোগ জীবাণুর হাত থেকে বা সংক্রমনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পায়। ভিটামিন এ, সি, ই, বিটা ক্যারোটিন, লাইকোপেন, লুটেনিন ও সেলেনিয়াম ইত্যাদি। এগুলো হলো প্রধান অ্যান্টি অক্রিডেন্ট। এগুলো নিয়মিত খেলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমাতা বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
যে অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে : বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, সাদাপাতা, মদ, গাঁজা খাওয়ার অভ্যাস অবশ্যই বাদ দিতে হবে। তাছাড়া বাজারের নানা পানীয়, ঠান্ডা, বাসি খাবার , আইসক্রিম, চিনি, চিনিদিয়ে তৈরী খাবার গুলো ত্যাগ কারতে হবে। এসব খাবার দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠাকে মারাত্মকভাবে বাধা দেয়। যারা বেশী পরিমানে মিষ্টিজাতীয় খাবার বা চা খান তারা সর্তক হোন। আমাদের দেহের রক্ত কণিকার মধ্যে শ্বেত রক্ত কণিকা দেহের রোগ জীবাণু ধবংসের মাধ্যমে আমাদেরকে সুস্থ রাখে। কিন্তু চিনি শরীরে প্রবেশের পর রক্তে মিশে রক্তের শ্বেত কণিকা দূর্বল করে ফেলে। অতিরিক্ত চিনি দেহে প্রদাহের সৃষ্টি করে। রক্তে অতিরিক্ত চিনির কারণে ভিটামিন সি দেহের কোষ শোষিত হতে পারে না। ভিটামিন সি ছাড়া শ্বেত রক্ত কণিকা শক্তিশালী হতে পারেনা। ফলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই চিনি ও প্রত্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের অভ্যাস ত্যাগ করুন।
প্রতিদিন যে সব খাবার গ্রহণ করতে হবে তা হলো
ভিটমিন এ: ভিটামিন এ দেহের কোষ কলা গুলোকে সজীব রাখে। রক্তের কনিকা গুলোকে শক্তিশালী করে। ভাইরাসের সংক্রমন থেকে বাঁচতে ভিটামিন এ গুরুত্বপর্ণ। খাবার গুলো হলো -লেবু, কমলা, মালটা, কাঁচামরিচ, আনারস, পেয়ারা, আমড়া, পালংশাক, ব্রকলি, বাধাকপি, তরমুজ, আমলকি, জলপাই, আঙুর, জামবুরা, টমেটো, ঢেড়স, করলা, লেটুসপাতা ইত্যাদি। ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী এন্টি অক্রিডেন্ট।
ভিটামিন ই: ভিটামিন ই আরেকটি শক্তিশালী অ্যান্টি অক্রিডেন্ট যা শরীরের ভাইরাস প্রতিরোধে বিরাট ভূমিকা পালন করে। দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। খাবার গুলো হলো- কাঠ বাদাম, চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, বাদমতেল, বিচিজাতীয় খাবার, জলপাইয়ের তেল। সবুজ শাকসবজি, সূর্যমুখী বীজের তেল, লেটুস পাতা ইত্যাদি।
ভিটামিন ডি : ভিটামিন ডি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আমাদের চামড়ায় সূর্যের-আলোর সাহায্যে এটি এমনিতেই তৈরী হয়। যারা রোদে বের হন না, তারা সকালের রোদে কিছু সময় পাতলা কাপড় পড়ে দাঁড়িয়ে থাকুন। ডি তৈরী হবে। তাছাড়া যে সব খাবার থেকে ডি পাওয়া যায়। তা হলো- ডিম, পনির, মাশরুম, ভোজ্যতেল, দুধ, বিভিন্ন মাছের তেল, মাখন, ঘি, ইলিশ মাছ ইত্যাদি।
ভিটামিন বি ৬, বি ১২: ভিটামিন বি৬ ও বি১২ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর অর্ন্তগত এটি দেহে শক্তি উৎপন্ন করে। ভিটামিন বি ১২ দেহের রক্ত কনিকা উৎপাদন ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যা ভাইরাস সংক্রমনের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় জৈব রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য খুবই প্রয়োজন এই ভিটামিন। ভিটামিন বি ৬ বা পাইরিডক্সিন যে সব খাবারে পাওয়া যায় তা হলো- চাল, আটা, মাছ, মাংস, সবুজ শাকসবজি, ছোলা, ডিমের কুসুম ইত্যাদি। ভিটামিন বি ১২ পাওয়া যায়- কলিজা, দুধ, মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদিতে।
বিটা ক্যারোটিন : বিটা ক্যারোটিন দেহে গ্রহনের ফলে এটা পরিবর্তিত হয়ে ভিটামিন এ তে রুপান্তরিত হয়। দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি পাওয়া যায় গাঢ় উজ্জ¦ল বর্ণের ফল ও সবজিতে যেমন লাল শাক, গাজর, পাকা আম, পেঁপে, পালংশাক, আলু, ডাল, ব্রকলি ইত্যাদি।
ডাব খান: ডাব ও নারিকেলের পানি খান। এই পানিতে থাকে ভিটামিন বি, সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটশিয়াম, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম ইত্যাদি।
ডাবের পানি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ শক্তিশালী করে। শরীরে তাৎক্ষনিক শক্তি উৎপন্ন করে ।
মোঃ জহিরুল আলম শাহীন
শিক্ষক ও স্বস্থ্যবিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন দ্বি পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন