শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কী হবে রিজেন্ট সাহেদের?

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট কোথায় গুরু অপরাধের মামলায় লঘু ধারা

সাঈদ আহমেদ | প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০২০, ১২:০৩ এএম

মিডিয়া সৃষ্ট ‘হঠাৎ বুদ্ধিজীবী’ মো. সাহেদ করিম ওরফে সাহেদ করিম। এমএলএম ব্যবসা করে হাতিয়ে নিয়েছেন ৫শ’ কোটি টাকা। সেই টাকায় গড়েছেন ক্লিনিক, আবাসন ব্যবসা, কুরিয়ার সার্ভিসসহ নানা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও করেছেন বহুমাত্রিক প্রতারণা। চাতুর্যের সাথে বোকা বানিয়েছেন সরকারকেও, করেছেন দখলবাজি। সাব-লেট নিয়ে ভবন দখল করেছেন। জমি দখল, প্রতিষ্ঠানের ডাক্তার, কর্মচারি-আয়া-বুয়াদের বেতনের টাকা আত্মসাৎ করেছেন অনেক। বহু মানুষের কাছ থেকে সামগ্রী কিনে তাদের পাওনা টাকা মেরে দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ করে টাকা দেননি নির্মাতাকে। কোটি কোটি টাকা পাওনার বিপরীতে দিয়েছেন চেক। কিন্তু নগদায়ন হয়নি সেই চেক। কোটি কোটি টাকা তার কাছে ‘ধরা খেয়ে’ বহু মানুষ নিঃস্ব হয়েছেন। সর্বশেষ তার মালিকানাধীন ঢাকার উত্তরার ‘রিজেন্ট হসপিটাল’ করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। র‌্যাবের অভিযানের পর এক এক করে উন্মোচিত হচ্ছে সাহেদের কুৎসিত চেহারা। উদঘাটিত হচ্ছে তার নানামাত্রিক অপরাধ-সম্ভার, অপরাধ জগতের তথ্য।

সিআইডি সূত্র জানায়, প্রতারণার দায়ে সাহেদের বিরুদ্ধে ৩১টি মামলা ছিলো আগে থেকেই। করোনা টেস্ট নিয়ে প্রতারণার দায়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়েরকৃত র‌্যাবের মামলাসহ সংখ্যা দাঁড়ালো ৩২। স্বাস্থ্য অধিদফতরও তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে বহু অপরাধে অভিযুক্ত সাহেদের টিকিটিও স্পর্শ করা যায়নি গতকাল পর্যন্ত। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আশা করছে সহসাই তাকে গ্রেফতার করা যাবে। প্রশ্ন হচ্ছে সাহেদের যে এতো অপরাধ, তিনি যে এতো মানুষকে নিঃস্ব করেছেন, অর্থ আত্মসাত করেছেন, দেশ ও জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন এসবের কি কার্যকর অর্থে কোনো বিচার হবে? সাহেদ কি তার কৃত অপরাধের সমান শাস্তি পাবেন? এ বিষয়ে সন্দেহ-সংশয় প্রকাশ করেছেন আইনজীবীরা।

ঢাকা বারের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমানের মতে, সাহেদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে র‌্যাব দায়েরকৃত মামলায় ব্যবহৃত ধারাগুলো ততোটা শক্ত নয়। এজাহারে তার অপরাধগুলোকে দন্ডবিধির ৪০৬/৪১৭/৪৬৫/৪৬৮/৪৭১ ও ২৬৯ ধারার আওতায় আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ রোগীদের টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে প্রতারণা, বিশ্বাস ভঙ্গ জাল-জালিয়াতি, ভুয়া রিপোর্ট তৈরি, ভুয়া রিপোর্টকে ‘খাঁটি’ বলে চালিয়ে দেয়া এবং কোভিড-১৯ রোগ সংক্রমণের বিস্তারে ভ‚মিকা রাখার অপরাধ করেছে আসামিরা।

এসব ধারার মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি রয়েছে ৪৬৮ ধারায় ৭ বছরের কারাদন্ড। বিচারে অপরাধ প্রমাণিত হলে এ মামলায় তাকে সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদন্ড ভোগ করতে হবে। মামলায় আরও ধারা থাকলেও সর্বোচ্চ ধারার ভেতরে বাকিগুলোর শাস্তিও পরিগণিত হবে। এমনকি তার বিরুদ্ধে আরও যে ৩১টি মামলা রয়েছে সেগুলোও যদি বিচারে প্রমাণিত হয় এবং তাতে যদি ৪৬৮ ধারার চেয়ে কঠোর কোনো ধারা উল্লেখ না থাকে সেগুলোর শাস্তিও একই সঙ্গে পরিগণিত হবে।

ঢাকা বারের এই সিনিয়র আইনজীবী বলেন, একাধিক মামলায় কেউ দন্ডিত হলে সবগুলোর শাস্তি একই সঙ্গে পরিগণিত হবে। যদি সাহেদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা বিচারে প্রমাণিত হয় তাহলে তাকে ৭ বছরের বেশি কারাভোগ করতে হবে না। তবে দন্ডবিধিতে মামলা করে সাহেদের অপরাধকে গৌণ করে দেখা হচ্ছে বলে মনে করেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মো. মাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, যে ধারায় মামলা হয়েছে তা দিয়ে তাকে বিচারে দন্ডিত করে কয়েদির পোশাক পরানো সম্ভব নয়।

প্রকাশিত তথ্যে যেটুকু জানা যাচ্ছে সেটি হচ্ছে, সাহেদ অপরাধমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে অর্থ রোজগার করেছেন। এই গ্রাউন্ডে তার বিরুদ্ধে শক্ত মামলা হতে পারতো। সেটি এখনো হয়নি। অর্থপাচার আইনে উল্লেখিত প্রায় সবগুলো অপরাধই তিনি করেছেন। তাই এ আইনে মামলা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিৎ ছিলো তার একাউন্ট জব্দ করা। আদালতের আদেশ নিয়ে স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা। তবে মামলা না করেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এন্টি মানিলন্ডারিং ইউনিট একাউন্ট কিছু সময়ের জন্য ফ্রিজ করে রাখতে পারে। সেটি হয়েছে বলে শুনেছি।

তিনি বলেন, র‌্যাব যেসব ধারায় মামলা করেছে সেগুলো হালকা ধারা। জামিন লাভ সহজ। দেশের বিচার ব্যবস্থাপনা-বাস্তবতায় তার কৃতকর্মের যথাযথ বিচার হওয়ার সম্ভাবনা কম। বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি যে প্রতারণা ও আত্মসাৎ করেছেন সেগুলোর জন্য ভুক্তভোগীদের পৃথক মামলা করতে হবে। যে ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলাটি হয়েছে সেটির সঙ্গে সেগুলো সম্পর্কিত নয়। অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারক বলেন, দন্ডবিধির যেসব ধারা মামলায় যুক্ত করা হয়েছে এসব হাতুড়ে ডাক্তারের কাজ-কারবারের মতো। ১৮৬০ সালে প্রণীত দন্ডবিধির ৪৬৮ ধারা যুক্ত করা হয়েছে। যদি কাগজ-কলমে জালিয়াতি-প্রতারণা করা হতো তাহলে এসব ধারা ঠিক ছিলো। কিন্তু সাহেদ জালিয়াতি করেছেন ডিজিটাল পদ্ধতিতে। তাহলে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এখানে কোথায়? প্রযোজ্য ধারাগুলো প্রয়োগের সুযোগ এখনো যায়নি। আইনের সঠিক প্রয়োগ না হলেতো অপরাধী সুযোগ নেবেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (16)
Sharif Ali ১১ জুলাই, ২০২০, ১২:৪৭ এএম says : 1
কিছুই হবেনা কয়দিন নাটক ছলবে
Total Reply(0)
Md Lutfor Rahman ১১ জুলাই, ২০২০, ১২:৪৭ এএম says : 1
ওর কিছু হবেনা কতদিন লোক দেখানো গরম পরে ঠান্ডা৷ হয়ে জাবে ,এটা বাংলাদেশ ভাই
Total Reply(0)
Asrarahmed Razib ১১ জুলাই, ২০২০, ১২:৪৭ এএম says : 1
উনার কিছুই হবে না শুধু শুধু
Total Reply(0)
Mohammad Arifur Rahman ১১ জুলাই, ২০২০, ১২:৪৭ এএম says : 0
কত্ত বড়ো ক্ষতি করেছে বাংলাদেশের এই কালপ্রিট।তার ধারনা আছে!!!
Total Reply(0)
দালাল মুক্ত বাংলাদেশ ১১ জুলাই, ২০২০, ১২:৪৮ এএম says : 0
ওরে নিয়া বন্দুকযুদ্ধে যেতে হবে।
Total Reply(0)
Ali Akbar ১১ জুলাই, ২০২০, ১২:৪৮ এএম says : 1
কিচ্ছু হবে না তাদের ! শুধু আইওয়াস..
Total Reply(0)
Md Symon Anas Abrar ১১ জুলাই, ২০২০, ১২:৪৮ এএম says : 0
কিছুই হবেনা সাহেদের কিছুদিন পর সাহেদকে যখন সবাই ভুলে যাবে।।। তার দরবেশ বাবারা তাকে বের করে এনে হয়ত এই বোকা জাতীকে নিয়ে অন্য নতুন খেলায় মেতে উঠবে। কার এই দেশে কোন শাস্তি নাই।।।
Total Reply(0)
Mehedi Hasan Nerob ১১ জুলাই, ২০২০, ১২:৪৯ এএম says : 0
কোনো কিছু হবে না আপনারা পেছনে তাকিয়ে দেখেন ওদের কি হইছে পাপিয়া,সামিম,আরো অনেক এ আছে তো ওর ও কিছু হবে না কিছু দিন পরে সবাই সব ভুলে যাবে
Total Reply(0)
Abduz Zaher ১১ জুলাই, ২০২০, ১২:৪৯ এএম says : 0
যত জন সাহেদ ধরা পড়েছে সবার ইতিহাস প্রায় একই। লোকে বলে, যদি সব গুরুত্বপূর্ণ অপরাধীদের ক্রস ফায়ার দেয়া হয় তবে দেশে প্রকৃত নেতার সংখ্যা শতকরা দুই ভাগে চলে (নেমে) আসবে এবং মানুষ কিছুটা হলেও সস্তি পাবে, দেশ ও মহালুটের হাত থেকে অনেকটা রক্ষা পাবে। অবশ্য সাহেদদের পাটনারেরা কি তেমনটি হতে দিবে? সেটাই প্রশ্ন।
Total Reply(0)
Abdul Kader ১১ জুলাই, ২০২০, ১২:৪৯ এএম says : 0
আরে ভাই সাহেদ বাটপার এটা ঠিক কিন্তু সে তো একা না তার সাথে তো রাঘব বোয়ালরা জড়িত আছে কাজেই তার কিছুই হবে না?
Total Reply(0)
Shahed Ahmed ১১ জুলাই, ২০২০, ১২:৫০ এএম says : 0
সাহেদ একদিনে তৈরী হয়নি।যারা বড় অংকের টাকার বিনিময়ে সাহেদ তৈরী করে তাদের খুঁজতে হবে। এতো বড় বড় পদের পরিচয় যখন দিয়েছিল, তখন তথ্য নেওয়ার কি প্রয়োজন ছিল না? এসব পদে তো হাজার হাজার লোক থাকে না, সীমিত লোক থাকে এবং তারাও ভি আই পি, যেমন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, সচিবালয়ে, বিভিন্ন সংস্হার চেয়ারম্যান এসব সাহেদের পরিচয় ছিল। কিন্তু, আওয়ামীলীগে জেলা,উপজেলা পর্যায়ে এক একটা ছোট খাটো পদের জন্য কত মারামারি, খুন পর্যন্ত হয়ে থাকে। কিন্তু সাহেদ এতো বড় পদের পরিচয় দেয় কোন আত্নবিশ্বাসে? জনগণ কি এতো বোকা? ব্যাপারটা দেশের অভ্যন্তরে ঘটলে কোন জনগণ জানতো না, তখন শাক দিয়ে মাছ ঢেকে দেওয়া হতো । যখন ইটালি সহ সারাবিশ্বে ব্যপারটা ঘৃণীত হয়েছে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে তখন সাহেদ দলের কেউ নয়, সব সেল্ফি তুলে কাজ করেছে, আযব তামাশা। সাহেদ এসব ভি আই পি দের এতো কাছে কিভাবে ভূয়া পরিচয়ে ছবি, সেল্ফি তুলতে যায়???
Total Reply(0)
Moazzem Hossain ১১ জুলাই, ২০২০, ১২:৫১ এএম says : 0
Some day will jail then after 7 or 10 days will go PG hospital then after 3 months jamin.......Then free style.....
Total Reply(0)
Mohammed Shah Alam Khan ১১ জুলাই, ২০২০, ৯:৩০ এএম says : 0
নিন্দুকেরা বলছেন, এই সাহেদ মিয়ার সাথে যে আওয়ামী লীগের রুই কাতল নেতারা জড়িত সাথে সাথে সরকারের রুই কাতল কর্মকর্তারও জড়িত সেটাও পরিষ্কার। নিন্দুকেরা আরো বলেন, এসব কারনেই পুলিশের সদস্যরা তাঁর বিরুদ্ধে হালকা মামলা দায়ের করেছেন। সরকারই ডিজিটাল আইন প্রণয়ন করেছেন ডিজিটাল অপরাধের জন্যে। নিন্দুকদের অভিযোগ এখানে সাহেদ মিয়া ডিজিটাল পদ্ধতিতে অপরাধ করার পরও তার বিরুদ্ধে পুলিশ ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট আইন প্রয়োগ করেননি এটা কোন আলামত??? এভাবেই সরকারের সাথে মিলে মিশে যারা জনগণকে প্রতারনা করে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে সহজ আইনে চার্জশীট তৈরি করে তাদেরকে সহজেই নিস্তার পাবার ব্যাবস্থা করে দেন এটাই বুঝা যাচ্ছে এই প্রতিবেদনে। আল্লাহ্‌ আমাদের দেশের পুলিশকে সত্যের পথে চলার ক্ষমতা প্রদান করুন। আমিন
Total Reply(0)
Moazzem Hossain ১১ জুলাই, ২০২০, ৯:৪৭ এএম says : 0
Why not appreciate to Mr. Shahed, why not love and respect Mr. Shahed??? Because, Mr, Shahed is a great great talented person. He made fool most high officials,and political persons just with money. I think, nothing will happen to him. It is true that "Everything is needed money but money will never give everything" Those who exceed the limit, they must destroy.
Total Reply(0)
jack ali ১১ জুলাই, ২০২০, ৬:০৯ পিএম says : 0
When government is corrupt then all the corrupt people get all the support from the government to commit any crime as such we are suffering too much from the hand of Government.. There is only way we can eliminate this corrupt government to establish the Law of Allah [SWT] then we will be able to live in our Beloved country in peace with human dignity.. that''s why we liberated our country from Pakistan.. But they are 100% worse than Pakistan..
Total Reply(0)
Faridul ১১ জুলাই, ২০২০, ৬:৩৯ পিএম says : 0
কিছুই হবে না, সবই indian serial
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন