করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ভেঙে পড়েছে অর্থনীতি। আয় রোজগার না থাকায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের অবস্থা অনেকটা নাজুক। বর্তমানে নাভিশ্বাস ও আতঙ্কে দিন কাটছে বিভিন্ন এনজিও থেকে নেয়া ঝণ গ্রহীতাদের। তাদের কাছে কিস্তি এখন গলায় ফাঁসের মত। অনেকে এলাকা ছেড়ে পালাতেও বাধ্য হচ্ছেন কিস্তির চাপের কারণে।
গত সাড়ে তিনমাসে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমন সঙ্কটময় অবস্থায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে বিভিন্ন পেশার মানুষ। যেখানে খাবার জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দরিদ্র পরিবারের মানুষগুলোকে। সেখানে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনওজিও) থেকে ঋণের কিস্তির চাপে দিশেহারা হয়ে পড়ছে তারা। নওগাঁ ও আশেপাশের এলাকার ছোট-বড় বেসরকারি সংস্থাগুলো কয়েক দিন ধরে ঋণ পরিশোধের জন্য গ্রাহকদের চাপ দিয়ে যাচ্ছে। কিস্তির টাকা না দিলে তারা বাড়িতে বসে থাকাসহ অশোভন আচরণ করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। সরকার করোনা পরিস্থিতিতে চলতি মাসের ৩০ জুন পর্যন্ত ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি শিথিল করলেও পরে তা বাড়িয়ে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। তারপরও জেলার বিভিন্ন এলাকায় জোরপূর্বক এনজিও ও সমবায় সমিতির ঋণের কিস্তি আদায় অব্যাহত রয়েছে।
নওগাঁ জেলা সদরের খলিসাকুড়ি গ্রামের একাধিক সদস্যরা বলেন, নওগাঁ মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি, মৌসুমিসহ বেশ কয়েকটি এনজিও থেকে ঋণের টাকা নিয়েছি এবং তা রীতিমতো পরিশোধও করে আসছি কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আয় কমে যাওয়ায় প্রায় ৩ মাস কিস্তি দিতে পারছি না। কিন্তু বর্তমানে এনজিও কর্মীরা প্রতিদিনই বাড়িতে এসে অপমান করে যাচ্ছে। কিস্তি দিতে চাপ প্রয়োগ করছেন। তারা কোন কথাই মানছেন না। বিভিন্ন রকমের হুমকি-ধামকিও দিয়ে আসছে তারা। প্রশাসনকে বিষয়টি একাধিকবার জানানোর পরও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এখন আমাদের মরণ ছাড়া কোন উপায় নেই।
এসকেএস ফাউন্ডেশনের সান্তাহার পৌর এলাকার এক সদস্য বলেন, প্রত্যেক সপ্তাহে এসে কিস্তির জন্য চাপ দেয়। যেখানে দুই বেলা খাওয়ার সমস্যা কিস্তি কিভাবে দেব। বাধ্য হয়ে ধার দেনা করে কিস্তির টাকা দিতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে এনজিও গুলোর কিস্তি আদায় বন্ধে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
গ্রাহকদের এমন অভিযোগের বিষয়ে নওগাঁ মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির প্রতিনিধি আব্দুল হান্নান বলেন, আমাদের এই প্রতিষ্ঠান এনজিও নয় সমবায় ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। মাঠে আমাদের কোটি কোটি টাকা ইনভেস্ট করা আছে। তাই কিস্তি তুলতে বাধ্য হচ্ছি। কিছু কিছু গ্রাহক আছেন যাদের কিস্তি দেয়ার সামর্থ্য থাকলেও করোনা পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছে তাই গ্রাহকদের চাপ প্রয়োগ করছি। আর সরকারের প্রজ্ঞাপন সম্পর্কে আমার কোন কিছু জানা নেই।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদ বলেন, যারা দরিদ্র তাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক কিস্তি আদায় করতে পারবে না। এক্ষেত্রে যদি কোনো এনজিও জোর করে তবে মালিক পক্ষের সাথে কথা বলবো যেন এই কাজ থেকে বিরত থাকে। তারপরেও না মানলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন