শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

আত্মকেন্দ্রিক অপবাদ ঘোঁচাতে চান বিজয়

প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৭ এএম, ১ আগস্ট, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে পারফর্ম করে অল্প সময়ের মধ্যে জাতীয় দলে জার্সিটা ছিল তার প্রাপ্য। বিকেএসপি থেকে বেড়ে ওঠা এই ডান হাতি টপ অর্ডার ওয়ানডে অভিষেকেই চিনিয়েছিলেন জাত। ২০১২ সালে খুলনায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক ইনিংসটি তার ৪১ রানের, দ্বিতীয় ম্যাচে সেখানে অভিষেক সেঞ্চুরি-১২০ রানের ক্লাসিক ম্যাচ উইনিং ইনিংসে বিজয়ের মাসে দিয়েছিলেন এনামুল হক বিজয়বার্তা। নামের সার্থকতা প্রমাণে পাল্লেকেলেতে ২০১৩ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজে সমতার ম্যাচে ম্যাচ উইনিং ৪০ রানের ইনিংসটিও কম গর্বের নয়। অথচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শুরুটা যার এতোটা উজ্জ্বল, সেই এনামুল হক বিজয় এখন ব্রাত্য। পারফরমেন্স নয়, বরং আত্মকেন্দ্রিক ব্যাটসম্যানের অপবাদ বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। টেস্ট অভিষেকের শুরু থেকে পারেননি চেনাতে, কিন্তু সীমিত ওভারের ম্যাচে তো চিনিয়েছিলেন। অথচ, ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ফিল্ডিংয়ের সময়ে সোলডার ইনজুরির পর ফিরতে পারেননি দলে। ওয়ানডে দলের বাইরে কেটে গেছে তার ১৬টি মাস। টি-২০ ক্রিকেটে সেখানে দলের বাইরে ৯ মাস!
ওয়ানডে ক্রিকেটে স্ট্রাইক রোটেড করতে পারছেন না, দলের চেয়ে নিজের প্রয়োজনটা তার কাছে পাচ্ছে বেশি গুরুত্বÑ এই অপবাদটা গায়ে মেখে গেছে তার ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ থেকে। ওই এশিয়া কাপে ফতুল্লায় ভারতের কাছে ৪৯তম ওভারে বাংলাদেশের হেরে যাওয়ার নেপথ্যে তার আত্মকেন্দ্রিক ব্যাটিং (১০৬ বলে ৭৭) হয়েছে অভিযুক্ত, পরের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ইমরুল কায়েসকে নিয়ে ওপেনিং জুটিতে ১৫০ রানে নেতৃত্ব দিয়ে, সেঞ্চুরির ইনিংসটিও (১৩২ বলে ১০০) মন ভরাতে পারেনি মিডিয়াকে। কারণ, রেকর্ড স্কোর (৩২৬/৩) করেও বাংলাদেশ দল সেই ম্যাচে হেরেছে পাকিস্তানের কাছে ১ বল হাতে থাকতে। ২০১৪ সালে গ্রেনেডায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তার ১৩৮ বলে ১০৯ রানের ইনিংসটিও ঘোঁচাতে পারেনি আত্মকেন্দ্রিক ব্যাটসম্যানের অপবাদ।
২০১৫ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫৫ বলে ২৯, ওয়ানডে ক্রিকেটে আদর্শ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের জন্য যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশ দল সেই ম্যাচ জিতেছে বলে আত্মকেন্দ্রিক ব্যাটসম্যানের অপবাদ লাগেনি তার গায়ে। তবে পরের ম্যাচে মেলবোর্নে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৪৩ বলে ২৯ রানের ইনিংসটি হয়েছে সমালোচিত। তার এমন আত্মকেন্দ্রিক ব্যাটসম্যানের জন্য মিডিয়ার জেরার মুখে পড়তে হয়েছে অধিনায়ক মাশরাফিকে।
টি-২০তেও এই অপবাদ লেগে গেছে তার। শ্রীলংকার বিপক্ষে ২০১৪ সালে সিরিজের প্রথম ম্যাচে শেষ বলে বাউন্ডারি মারতে না পারায় কেঁদেছেন অঝোরেÑ ৫৮ রানের ওই ইনিংসটি মøান হওয়ায় তেঁতে উঠবেন বলে করেছিলেন পন। কিন্তু সেই কথা যে রাখতে পারেননি বিজয়। গত বছরের নভেম্বরে খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫১ বলে ৪৭ রানের ইনিংসে দল ৩ উইকেটে হেরে যাওয়ায় তার দিকে অভিযোগের তীর এতোটাই ধেয়ে এসেছে যে, ওখানেই নির্বাচকরা থামিয়েছেন বিজয়কে! ৩০ ওয়ানডে খেলে ফেলা কোন ওপেনারের স্ট্রাইক রেট যখন ৭০.০০, তখন অপবাদ তো গায়ে লেগেই যাবে তার। তবে আত্মকেন্দ্রিক ব্যাটসম্যানের এই অপবাদ মেনে নিতে নারাজ এনামুল বিজয়। বরং এই অপবাদ থেকে মুক্তি পেতে সুযোগের অপেক্ষায় আছেন এনামুল বিজয়Ñ ‘অবশ্যই এমনটা ঠিক নয়। কারণ আমি নিজের জন্য খেলি না। পরিসংখ্যান দেখলে হয়ত কেউ এমনটাই বলবে। গুজবে অনেক সময় অনেকে অনেক বলে। এজন্য মাঠে নামা লাগবে। না খেললে তো অপবাদ মুছে দেয়া সম্ভব নয়। একজন খেলোয়াড় যখন লাল-সুবজ জার্সি গায়ে পরে মাঠে নামে, তখন সে নিজের জন্যে খেলার কথা কখনো চিন্তা করে না। আমি দেশের হয়ে, দেশের পতাকা হাতে নিয়ে, দেশের জার্সি পরেই খেলতে চাই। কখনোই আমার নিজের জন্য চিন্তা ছিল না। সব সময় চিন্তা থাকে দেশের জন্য খেলব। আশা করি ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে দেশের জন্যে কিছু করার চেষ্টা করব। যদি এর মধ্যে সুযোগ আসে তাহলে কাজে লাগাবো।’
সুযোগ পেলে নতুন বিজয়কে দেখবে ক্রিকেট বিশ্ব, বাকপটু এই ওপেনার এমন ঘোষণাই দিয়েছেনÑ ‘মাশরাফি ভাই কিংবা হাথুরুসিংহের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওনারা দু’জনই বলেছেন তোমার জায়গায় তুমি ঠিক আছো। যখন সুযোগ আসবে চেষ্টা করবে ভালো কিছু খেলার জন্য। এই বিষয়টি আত্মবিশ্বাসী করছে। আমিও চেষ্টা করবো সুযোগ আসলে আমার সেরা দেয়ার চেষ্টা করব। বিজয় স্ট্রাইক রোটেট করে না, সেলফিশ (আত্মকেন্দ্রিক) খেলে বলে দল থেকে বাদ পড়েছে, এরকম ব্যাপারটা নয়। তারা সব সময় আমাকে আত্মবিশ্বাস দেয়। মাশরাফি ভাই, সাকিবভাই, মুশফিকভাই সব সময় বলে তোর জায়গায় ঠিক আছিস। যখন সুযোগ আসবে ভালো কিছু করার চেষ্টা করবি। আশা করি নতুন বিজয়কে দেখা যাবে। যে কথাগুলো উঠে ওগুলো ঠেকে দেয়ার চেষ্টা থাকবে।’
সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে খেলে নাকি স্ট্রাইক রোটেডের প্রেরণা পেয়েছেন এনামুল বিজয়Ñ ‘প্রিমিয়ার লিগে চেষ্টা ছিল ভালো খেলার। তবে পথটা অনেক কঠিন। প্রিমিয়ার লিগটা ভালো গেছে। প্রিমিয়ার লিগে চেষ্টা করেছি নিজের জন্যে খেলার। স্ট্রাইক রোটেট করার। প্রিমিয়ার লিগে একটা রিদমে এসেছি।’
অবশ্য এনামুল বিজয়ের এই দাবির পক্ষে কিন্তু কথা বলছে না প্রিমিয়ার ডিভিশনে তার পারফরমেন্স। ১১ ম্যাচে ৪৪৯ রান (গড় ৪৪.৯০), কিন্তু স্ট্রাইক রেট সেখানে মাত্র ৭৪.৭০! প্রিমিয়ার ডিভিশনে যে সব ওপেনার ৪শ’র উপরে রান করেছেন, তাদের মধ্যে স্ট্রাইক রেট তার সবচেয়ে কম।
বিজয়ের ২ বছর পর ওয়ানডে দলে ঢুকে জায়গাটা পাকা করেছে সৌম্য সরকার, একই সময়ে ওয়ানডে অভিষেক হওয়া সাব্বির রহমান রুম্মান লোয়ার অর্ডার থেকে প্রমোশন পেয়ে এখন টপ অর্ডার। নিজের জন্য নয়, দলের জন্য খেলাই এই ২ জনের ব্রত, তাদের স্ট্রাইক রেট বলছে সে কথাই। পরিস্থিতির মুখে দলে ফেরাটা যে কঠিন হয়ে পড়েছে, তা মানছেন বিজয়ওÑ ‘আমার জায়গায় যারা খেলছে তারা পারফর্ম করছে, ভালো করছে। এটা একটা ব্যাপার। এজন্য 

আমি জাতীয় দলের হয়তো বাইরে। যারা ভালো করছে তাদের জন্যে গুড লাক। ওরা ভালো করছে করতে থাকুক। অবশ্যই আমার জন্যে কঠিন সময় গেছে। এখন জাতীয় দলে টপ অর্ডারে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। সবাই পারফর্ম করছে এটা অনেক ব্যাপার। আমি যখন ছিলাম না তখন জাতীয় দল অনেক ভালো খেলেছে। এটাও একটা কারণ।’
টেস্টে নিজেকে মানানসই ভাবতেন না, ৪ টেস্টে ৭৩ রান (গড় ৯.১২) নিয়ে টেস্টে ফেরাটাও কঠিন। তারপরও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে তিন ভার্সনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার স্বপ্ন দেখেন বিজয়Ñ ‘চারদিনের ম্যাচ কিংবা টেস্ট ম্যাচ খেলতে ভালো লাগে। হয়ত আমি সফল নই। আমি এখানে আস্থাশীল থাকি, লংগার ভার্সন পছন্দ করি। সব ফরম্যাটে একজন ক্রিকেটারের প্রস্তুত থাকা জরুরী। যে কোনো সময় যেকোনো ফরম্যাটে যদি খেলার সুযোগ পাই, তাই তিন ফরমেটের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন