শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

আকীকা সন্তানের মুসিবত দূর করে

ফিরোজ আহমাদ | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০২০, ১২:০৫ এএম

আকীকা একটি আমল। আকীকা করা সুন্নত। আকীকা শিশুর অধিকার। নবজাতক শিশুর জন্য আকীকা এতোই গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। ইহার তাৎপর্য ও ফজিলত বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। আকীকার ওপর আমলের বরকতে নবজাতক শিশুর সকল মুসিবত দূর হয়ে যায়। নবজাতক শিশু সন্তানের আগমণের শুকরিয়া আদায়ের নিদর্শন হিসেবে বাবা-মাকে সন্তানের জন্য আকীকা ওপর আমল করতে হয়। এক্ষেত্রে সন্তান ছেলে বা মেয়ে যা হউক না কেনো, উভয়ের জন্য আকীকা করতে হবে। হযরত সালমান ইবনে আমের (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন,‘প্রত্যেক নবজাতকের পক্ষ থেকে এক-একটি আকীকা জরুরী, তোমরা তাদের পক্ষ থেকে পশু জবেহ করবে। আর তাদের থেকে কষ্টদায়ক বস্তুু দূর করবে।’ (তিরমিজি, ১ম খন্ড, পৃ.১৮; আবূ দাউদ, ২য় খন্ড, পৃ. ৪৪)।
আকীকার সময়: অন্যান্য আমল ও ইবাদতের ন্যায় আকীকা করার কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম পদ্ধতির অনুসরণ করতে হয়। নবজাতক ভ‚মিষ্ট হওয়ার সপ্তম দিনে আকীকা করা উত্তম। হযরত রাসূল (সা.) নিজে সপ্তম দিনে আকীকা করেছেন। যদি কোনো কারণে সপ্তম দিনে আকীকা করা সম্ভব না হয়, তাহলে চতুর্দশতম দিনে আকীকা করতে হয়। তাও সম্ভব না হলে, একবিংশতম দিনে আকীকা করতে হয়। তাও সম্ভব না হলে, অন্য যে কোনো দিনে আদায় করে নিতে হবে। হযরত সামূরা ইবনে জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক শিশু তার আকীকার বিনিময়ে বন্ধক স্বরূপ। কাজেই সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে জবাই করবে এবং তারা মাথা মুন্ডন করে নাম রাখবে।’( সুনানে আবু দাউদ:২/৩৯২)।
আকীকার পশু ও সংখ্যা: ইসলামে অনুমোদিত হালাল পশু উট, গরু, মহিষ, ভেড়া বা ছাগল দিয়ে আকীকা করতে হবে। কুরবানীর পশুর মতো আকীকার পশু সুস্থ, সবল ত্রুটিমুক্ত হতে হয়। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে ছেলে সন্তানের জন্য দুইটি সমবয়সী ছাগল আর মেয়ে সন্তানের জন্য একটি ছাগল দ্বারা আকীকা করার জন্য নির্দেশ করেছেন। (তিরমিযী শরীফ, ১ম খন্ড, পৃ. ১৮৩; আবূ দাউদ, ২য় খন্ড, পৃ.৪৪)। হযরত উম্মে কুরয্ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, নবজাতক সন্তান ছেলে হলে দু’টি ছাগল আর মেয়ে হলে একটি ছাগল দ্বারা আকীকা করবে। (তিরমিজি শরীফ, ১ম খন্ড, পৃ. ১৮৩; আবূ দাউদ, ২য় খন্ড, পৃ.৪৪)।
আকীকার গোশত বিতরণ: আকীকার গোশত ইচ্ছে হলে রান্না করে আত্মীয়-স্বজন ও গরীব-মিসকীনকে খাওয়ানো যাবে। তবে আকীকার পশুর গোশত তিনভাগ করে এক-তৃতীয়াংশ নিজের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনদের জন্য সাদকা করে দিয়ে বাকী এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বন্টন করে দেয়া সুন্নত। আকীকার গোশত স্বচ্ছল আত্মীয় স্বজনকেও দেয়া যায়।
আকীকার গোশত খাওয়া: আকীকার পশুর গোশত খেতে কারো কোনো বাধা নেই। আকীকার পশুর গোশত নিজেরা খেতে পারবে। অন্যদেরও খাওয়ানো যাবে।
আকীকার পশুর চামড়া: আকীকার পশুর চামড়া বাজারে বিক্রি করে, বিক্রিয়কৃত টাকা গবীর -মিসকীনের মধ্যে বন্টন করে দিতে হবে।
আকীকার কল্যাণ সমূহ: আকীকার মাধ্যমে নবজাতক শিশুর বাবা-মায়ের দানশীলতা প্রকাশ পায়। গরীব, ইয়াতীম ও আত্মীয় স্বজনের মধ্যে গোশত বিলি-বন্টনের মাধ্যমে আত্মীয়তার হক আদায় হয়। নবজাতক শিশুর জন্য সকলে দোয়া করেন। নতুন একটি প্রাণের আগমণকে কেন্দ্র করে আকীকা দেয়ার ফলে, আল্লাহতায়ালা নবজাতকের যতো মুসিবত ছিলো, সেগুলো উঠিয়ে নেন। নবজাতকের পক্ষ থেকে আকীকা না করলে, নবজাতকের বিভিন্ন প্রকার রোগ-বালাই ও বালা-মুসিবত লেগেই থাকে। হযরত সামূরা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নবজাতক নিজ আকীকার সাথে বন্ধক থাকে।’(তিরমিজি শরীফ, ১ম খন্ড, পৃ. ১৮৩; আবূ দাউদ, ২য় খন্ড, পৃ.৪৪)।
আকীকার কুসংস্কার: আকীকার পশু নানার বাড়ি থেকে দিতে হয়। আকীকার গোশত বাবা-মা, নানা-নানী ও দাদা-দাদীরা খেতে পারে না। সন্তানের চুল মুন্ডানোর সময় মাথার তালুর উপর ক্ষুর ধরে রেখে আকীকার পশু জবাই করতে হয় ইত্যাদি কুসংস্কার থেকে দূরে থাকতে হবে। আকীকা করতে হয় নবজাতকের কল্যাণের উদ্দেশ্যে। তাই আকীকার অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অশ্লীল নাচ-গান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, আকীকার সাথে শিশুর নাম রাখার সম্পর্ক রয়েছে। আকীকার সাথে শিশুর রোগ-বালাই দূর হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। আকীকার সাথে প্রথম চুল মুন্ডানোর সম্পর্ক রয়েছে। তাই সামর্থ্য থাকলে দ্রুত আকীকা সম্পন্ন করা অপরিহার্য। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুক। আমীন। (লেখক: ইসলামিক চিন্তাবিদ ও গবেষক)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন