পানি কিছুটা কমলেও এখনও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়ায় বিপদসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি ব্রীজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে এখনও প্লাবিত হয়েছে চিলমারী উপজেলা শহর। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ও থান চত্বরসহ উপজেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
কুড়িগ্রামে ধরলা ও ব্রহ্মপূত্র নদের পানি কমতে থাকলেও মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। প্রথম দফায় ১২দিন এবং পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফায় এক সপ্তাহ ধরে পানি অবস্থান করছে বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে। ফলে দুর্ভোগে রয়েছে জেলার ৩ লাখ মানুষ। প্রায় ৫০ হাজার বাড়িঘর বিনষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১০ হাজার জমির ফসলি ক্ষেত। ৩৭ কিলোমিটার সড়কপথ এবং সাড়ে ৩১ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ২২ হাজার নলকুপের ক্ষতি হয়েছে। ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনে বিলিন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরো ১৩৯টি বিদ্যালয়।
টানা বন্যায় বিভিন্ন জায়গায় আশ্রিতরা রয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকটে। সরকারিভাবে বরাদ্দ ত্রাণ অপ্রতুল বলে জানিয়েছে বানভাসীরা। এখনো অনেকে ত্রাণ পায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরিচয় গোপন রাখার স্বার্থে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী মহাসড়কে অবস্থান নেয়া একটি পরিবারের মা জানান, আমার মেয়ে একটি সরকারি স্কুলে ১০ম শ্রেণিতে পড়ে। এই সড়কে এক রাতছিল। ছেলেপেলেদের উৎপাতে শহরে ওর খালার বাড়িতে পাঠিয়েছি। মেয়েটা ওখানে কেমন আছেজানতেও পারছিনা। তিনি আরো জানান, বন্যারসময় দুটো মোরগ আরি তনটে মুরগী নিয়ে এসেছিলাম। একটা খেয়েছি। পরদিন সকালে দেখি বাকী গুলো নেই। কে বা কারা দড়ি খুলেি নয়ে গেছে। পাশের শেডে কাল রাতে কে বা কারা দুটে াশাড়ী চুরি করে নিয়ে গেছে।
এক মা জানালেন, শেয়ানা মেয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে রাখাই দুষ্কর। ঘুমন্ত কিশোরী মেয়েকে রেখে ত্রান আনতে গিয়েছিলেন বাবা ও মা। এসময় প্রতিবেশী এক বয়স্ক পুরুষ তার গায়ে হাত দিয়েছে। এমন নানান তিক্ততা আর আশংকায় থাকতে হয় তাদেরকে।
বন্যার ফলে রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলার অধিকাংশএলাকা প্লাবিত হয়েছে। অনুরুপ অবস্থা বিরাজ করছে চিলমার ীউপজেলায়। এই তিন উপজেলায় নতুন করে আরো ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। চিলমারীর বড়চর, নটারকান্দি, ঢুষমারা, বজরাদিয়ার খাতা, বাতাসুকাঁজল ডাঙ্গা, হাতিয়া বকসি, নাইয়ার চর, দুইশোবিঘা, গয়নার পটল, বড়বাগ, খেদাইমারী, খেরুয়ার চর, শাখাহাতী, মনতোলা, তেলীপাড়া, মাঝস্থল, গুড়াতি পাড়া, বাসন্তী গ্রাম, মাঝি পাড়া, হাটি থানা, কালিকুরা, সড়কটারী, দক্ষিণ খামার এলাকা প্লাবিত হয়ে বাড়ী ঘরে হাটু পরিমাণ পানি হওয়ায় এসব এলাকার লোকজন আশ্রায়ন কেন্দ্র, বাঁধের রাস্তা, স্কুল, মাদ্রসা সহ বিভিন্ন উচু স্থানে গবাদী পশুসহ আশ্রয় নিয়ে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
কুড়িগ্রাম ত্রাণও পূণর্বাসন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে,ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ে ৪শ’ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ এসেছে। এরমধ্যে ১৭০ মেট্রিক টন চাল উপজেলা গুলোতে উপ-বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বরাদ্দ ১৩ লক্ষ টাকার মধ্যে ৪ লাখ টাকা, ৪ হাজার শুকনা প্যাকেটের মধ্যে ২ হাজারপ্যাকেট, ২ লক্ষ টাকার শিশুখাদ্য ও ২ লক্ষ টাকার গো-খাদ্য উপজেলা গুলোতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন