শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

কোরবানির পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০২০, ১২:০২ এএম

দেশের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হওয়া কোরবানির পশুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি একেবারেই মানা হচ্ছে না। একেকটি হাটে বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম হচ্ছে। অথচ তারা কেউই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরে থাক, মাস্ক-গ্লাভস পর্যন্ত ব্যবহার করছে না। মৌলভীবাজার, দিনাজপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, বগুড়া, গাইবান্ধা প্রভৃতি জেলার ইনকিলাব প্রতিনিধিরা হাট ঘুরে এরূপ চিত্রই প্রত্যক্ষ করেছেন। হাটগুলোর ইজারাদার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর তরফে কোভিড-১৯ জন্য প্রযোজ্য স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের জন্য কোনো তাকিদও দেয়া হচ্ছে না। ফলে কেউই স্বাস্থ্যবিধি তোয়াক্কা করছেনা। বিশেষজ্ঞ ও পর্যবেক্ষকরা আশংকা করছেন, স্বাস্থ্যবিধি অমান্যের প্রতিক্রিয়া ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। এমনিতেই করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার ঊর্ধ্বমুখী। আগামীতে এই ঊর্ধ্বমুখিতা অব্যাহত থাকতে পারে। আশংকার এই প্রেক্ষাপটে আসন্ন ঈদুল আজহায় জনস্থানান্তর ও কোরবানীর পশুর হাটকে কেন্দ্র করে সংক্রমণের হার অস্বাভাবিকরকম বৃদ্ধি পেতে পারে। এই সুবাদে মৃত্যুর হারও বাড়তে পারে। বিশেষ করে কোরবানির হাট সংক্রমণের হটস্পটে পরিণত হতে পারে। সরকারি নির্দেশনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাটের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলা হলেও বাস্তবে এ নির্দেশনা কোনো কাজে আসছে না। নির্দেশনা মানাও অত্যন্ত কঠিন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আগেই সতর্ক করে দিয়েছেন, হাটে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হলে ফলাফল মারাত্মক রূপ নিতে পারে। আইইডিসিআরর তরফে বলা হয়েছে, যখন সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী, তখন পশুর হাট বসলে ম্যাসাকার হয়ে যাবে। কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর হাট না বসানোর পরামর্শ দেয়। এব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য ও কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম যর্থাথই বলেছেন পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানার সক্ষমতা নেই আমাদের। এক হাতিরঝিলেই আমরা জন সমাগম বন্ধ করতে পারিনি। কী করে হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হবে?

এসব সতর্কবাণী ও পরামর্শ সত্তে¡ও রাজধানীতে ১০টি পশুর হাট বসবে। আগে এর দ্বিগুণের বেশি হাট বসতো। হাটের সংখ্যা কমার কারণে এই ১০টি হাটে পশু ও জনসমাগম বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত ও অমান্য হলে রাজধানীতে করোনা সংক্রমণ এখনকার চেয়ে অনেক বেশি বাড়তে পারে যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারতও পাকিস্তান আগামীতে করোনার ‘মৃগয়া ক্ষেত্রে’ পরিণত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেছেন। এক খবরে জানা গেছে, আগামী বছর করোনার সবচেয়ে বাড়-বাড়ন্ত অবস্থা হবে এই তিন দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে। কাজেই, আমাদের যখন সতর্ক ও সাবধান হওয়া সবচেয়ে বেশি দরকার, তখন আমরা এমন কিছু করতে পারি না, যাতে বিপদ বাড়ে। কোরবানির পশুর হাট এবং ঈদ উপলক্ষে জনস্থানান্তর অবশ্যই বিপদজ্জনক। গত ঈদুল ফিতরে শেষ পর্যন্ত গণপরিবহন খুলে দেয়া হয় এবং দলে দলে মানুষ ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় শহর থেকে গ্রামে চলে যায়। এর ফলাফল কিন্তু আমাদের জন্য মোটেই ভালো হয়নি। একারণে করোনাসংক্রমণ সারাদেশে ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এই অভিজ্ঞতা সামনে রেখে এবার ঈদযাত্রা রহিত করা উচিৎ। যে যেখানে আছে সেখানেই তাকে আটকে রাখা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। যারা ঈদ উপলক্ষে গ্রামে যেতে আগ্রহী বা ইচ্ছুক তাদেরও এই আগ্রহ ও ইচ্ছা ত্যাগ করা উচিৎ। মনে রাখতে হবে, তাদের ঘরে ফেরার এই আবেগ তাদের নিজেদের ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য মহাবিপদ, এমন কি মৃত্যু পর্যন্ত, ডেকে আনতে পারে। এক্ষেত্রে সকলের সব ধরনের ভাবাবেগ পরিহার করা উচিত।

যেহেতু দেশের বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির পশুর হাট বসেছে এবং আগামীতে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোতেও বসবে সুতরাং অধিক সতর্ক-সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। সবচেয়ে ভালো হতো যদি হাটকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হতো। উপযুক্ত বিকল্প থাকলে সেটা হতো। অনলাইন হাট একটি ভালো বিকল্প হতে পারতো। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা খুব বেশী নয়। ব্যবস্থাও অপ্রতুল। ঢাকায় অনলাইন হাট থেকে পশু কেনাবেচা সংখ্যায় কম হলেও শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা অনেকেই এই বিকল্পটি ব্যাপকভাবে ব্যবহারের তাকিদ দিয়েছেন। এতেও সংক্রমণের ঝুঁকি আছে বটে, তবে কম। দ্বিতীয়ত: আস্থার সমস্যা রয়েছে। প্রতারিত হওয়ার আশংকাও আছে। তাই সবাই অনলাইন হাটে হৃষ্টচিত্তে ঢুকতে পারছে না। আশা করা যায়, আগামীতে অনলাইন হাট জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। যাহোক, যেসব হাট ইতোমধ্যে বসেছে এবং আগামীতে যেসব হাট বসবে তার প্রত্যেকটিতে যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর করার পদক্ষেপ নিতে হবে। এটা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে হাটের ইজারাদার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগী ভূমিকা রাখতে হবে। মাইকিং করে, লিফলেট বিতরণ করে, পোস্টার দিয়ে এবং গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পশুর হাটের ক্রেতা-বিক্রেতাদেরও নিজেদের ও পরিবার পরিজনের নিরাপত্তার স্বার্থে অত্যাধিক সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন