শামীম চৌধুরী : ২০১০ সালে গুয়াংজু এশিয়ান গেমসে স্বর্ণ জয়ের পর ক্রিকেট দলকে দেয়া সর্ম্বধনায় তৎকালীন বোর্ড প্রেসিডেন্ট আ.হ.ম মোস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) ছিপছিপে গড়নের ছেলেটিকে কাছে ডেকে জানতে চেয়েছিলেন-‘এই শরীরে এতো শক্তি পাও কিভাবে, বড় বড় শট মার কিভাবে ?’ বিসিবি বসে’র এমন প্রশ্ন শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া ছেলেটির মধ্যে যে ভবিষ্যতে সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে হতে চলেছেন বাংলাদেশের গেইল, সেটাই জানিয়ে দিচ্ছেন সাব্বির রহমান রুম্মান। হাতুরুসিংহের পরীক্ষা-নীরিক্ষায় লোয়ার অর্ডার থেকে এক লাফে প্রমোশন পেয়ে টি-২০তে টপ অর্ডার। অথচ, কি সাবলীল ব্যাটিং! সিরিজের প্রথম টি-২০ ম্যাচে ৩৬ বলে ৪৬, দ্বিতীয় ম্যাচে সেখানে ৩০ বলে নট আউট ৪৩Ñ তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে দিচ্ছেন টীম ম্যানেজমেন্টের আস্থার প্রতিদান। তার এমন ব্যাটিংয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোমে সর্বোচ্চ ১৬৪ চেজ করে হেসেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে শ্লো উইকেটে তার ৪৩ রানের ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে দিতে পেরেছে বড় চ্যালেঞ্জ ( ১৬৭/৩)। ঘরোয়া ক্রিকেটে অল রাউন্ডারের পরিচয়টাও এই প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মেলে ধরতে পেরেছেন রুম্মান ( ৩/১১) ! গত পরশু ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বড় ব্যবধানে জয়ের অঙ্গীকার করেছিলেন। দলের হয়ে দেয়া কথাটা রাখতে পেরেছেন এই ম্যাচ উইনার। তার এমন অল রাউন্ড দ্যুতিতে দ্বিতীয় ম্যাচে ৪২ রানে জিতে ব্যবধানটা জিম্বাবুয়েেেক বুঝিয়ে দিতে পেরেছে মাশরাফিরা।
শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে এই ম্যাচে ছন্দে ফিরেছেন সাতক্ষীরার ছেলে সৌম্য। যার ব্যাটিং দেখতে শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম উপচে পড়েছে দর্শক, সেই সৌম্য প্রথম রানটির জন্য অপেক্ষা করেছেন ৫ম বল মোকাবেলা পর্যন্ত। এবং মাদজিবাবে মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারিতে স্কোরিং শটে ছন্দ ফিরে পাওয়া সৌম্য মুজারাবানি, ক্রেমার এবং ওয়েলিনটন মাসাকাদজাকে ছক্কায় মাতিয়েছেন স্টেডিয়াম। ক্রেমারকে ডাউন দ্য উইকেটে ছক্কা মারতে চেয়ে অবধারিত ফিফটি মিস করেছেন (৩৩ বলে ৪ চার ৩ ছক্কায় ৪৩)। তবে সৌম্য’র এমন শুরুতে উদ্বুদ্ধ রুম্মান ইনিংস শেষ করে এসেছেন। ৭ রানের মাথায় বেঁচে যাওয়ার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। হ্যামেস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়ার আগে মুশফিকুরের (২৪) সঙ্গে অবদান রেখেছেন ৫২ রানের জুটিতে, সাকিবের সঙ্গে সেখানে ২৪ বলে ৩৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি তার। মাদজিবাকে স্ট্রেইট ছক্কা, কিংবা ওয়েলিনটন মাসাকাদজাকে মিড উইকেট এবং ক্রেমারকে গায়ের জোরে লং অনের উপর দিয়ে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলাÑঠিকই যেনো গেইলের ব্যাটিং বিনোদনটা খুলনাবাসী পেয়েছে রুম্মানের উইলোতে।
শ্লো উইকেটে ১৬৭/৩ স্কোরটা আদৌ যথেস্ট কি না, সে প্রশ্নটা ছিল জিম্বাবুয়ের বাধ্যতামূলক ব্যাটিং পাওয়ার প্লে পর্বে। ওপেনিং জুটির কাঁটায় কাঁটায় হাফ সেঞ্চুরির পর ধাক্কাটা দিতে পেরেছে বাংলাদেশ। মাশরাফির অ্যাঙ্গেল ডেলিভারিতে জিম্বাবুয়ে ওপেনার সিবান্দা (২১) প্লেড অনে ফিরে যাওয়ার পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট। নিজের দ্বিতীয় ডেলিভারিতে লেগ স্পিনার রুম্মানের শিকারে মাসাকাদজা পরিণত হলে (৩০) ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়া শুরু জিম্বাবুয়ের। শেষ ৩০ বলে ৭০ রানের দূরুহ চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে মুস্তাফিজুরের দ্বিতীয় স্পেলে (১-০-৩-২) মুর ও মাদজিবা বোল্ড আউট। জানেন, পর পর ২ ম্যাচে নামতা গুণে ২টি করে উইকেটÑসবগুলোই আবার বোল্ড আউট ! প্রথম ম্যাচে ২/১৮’র পর দ্বিতীয় ম্যাচে কাটার মাস্টারের ২ উইকেটে খরচা মাত্র ১৯Ñআসলেই যে ভয়ংকররূপ ছড়াচ্ছেন সাতক্ষীরার ছেলেটি। টি-২০তে ডেথ বলের বোলার হয়ে ওঠা আল আমিনও দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেছেন চেনা ছন্দে (২-০-১২-১)। ইনিংসের শেষ বলটি মুস্তাফিজ করতে পারেননি সোলডারে চোট পেয়ে। তবে শেষ বলটি হাতে নিয়ে হেসেছেন স্পিনার রুম্মান। প্রথম স্পেলে ২-০-১১-২’র পর ১ বলের শেষ স্পেলে ১ উইকেট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই প্রথম মুখ দেখলেন তিনি ৩ উইকেট (৩/১১)। খুলনায় এসে প্রকৃতই বীরের বেশে যেনো হাজির রুম্মান। এর আগে টি-২০ ক্রিকেটে ২ বার ইনিংসে ৮ টি করে ছক্কার রেকর্ড আছে বাংলাদেশের, ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত টি-২০ বিশ্বকাপে, গতকাল সেই রেকর্ডকে স্পর্শ করলো বাংলাদেশ আর একবার। ৯ বছর ৪৯ দিন আগে বাংলাদেশের টি-২০ অভিষেকে খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়টি ছিল ৪৩ রানের, গতকালকের জয়টি সেখানে ৪২ রানের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন