শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

লম্বা বিরতিতে হতাশ আল-আমিন

প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : কি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, কি ঘরোয়া ক্রিকেটÑদলে যখনই পেয়েছেন সুযোগ, তখনই রেখেছেন অবদান। তিন ভার্সনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধারাবাহিক পেস বোলার আল-আমিন। ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সেন্ট লুসিয়া টেস্টে দারুন বোলিংয়ের (৩/৮০) পর বোলিং অ্যাকশনে সন্দেহ পোষণ করে ম্যাচ অফিসিয়ালদের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে বায়ো মেকানিক্স পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়েছে। এবং সেই পরীক্ষায় ভালভাবে উতরে স্বল্প সময়ের মধ্যে ফিরেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ২০১৫ বিশ্বকাপের মাঝপথে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ফিরে আসতে হয়েছিল ঢাকায়। তাতে যে ধাক্কা খেয়েছেন, সেই ধাক্কা সামাল দিয়ে দলে ফিরতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৮ মাস। ২০১৫ সালে তিন তিনটি হোম সিরিজ করেছেন মিস। তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গত বছর ওয়ানডে সিরিজে ফিরে বিপিএলে কি দারুণ পারফর্মই না করেছেন বরিশাল বুলসের এই পেসার। ওই আসরে ১৭ উইকেট, আছে সিলেট সুপার স্টারর্সের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক। টি-২০ বিশ্বকাপের উপর্যুপরি ২ আসরে তাক লাগানো এই পেসার (২০ উইকেট) সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগেও করেছেন দারুণ বোলিং, প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে শিকার করেছেন ২৫ উইকেট।
তবে এমন ধারাবাহিক পারফরমেন্সের পরও নিজেকে বড়ই অভাগা ভাবেন আল আমিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার কারনে ম্যাচের মায়া দিতে হয়েছে ছেড়ে। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আন্তর্জাতিক ম্যাচের বাইরে কেটেছে ৮ মাস। তবে কষ্টটা আরো বেশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের লম্বা বিরতিতে। গত বছরের আগস্টের পর যেখানে এক বছর টেস্টের বাইরে বাংলাদেশ দল, পরবর্তী টেস্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে বাংলাদেশকে ১৪টি মাস, সেখানে ক্যারিয়ারের ৬ষ্ঠ এবং ৭ম টেস্টের মাঝে আল আমিনের বিরতি হবে পাক্কা ২ বছর! সে কারণেই হতাশ আল আমিনÑ‘আমাদের বড় দুঃখ, গত বিশ্বকাপের পর আমাদের কোনো খেলা নেই, সেখানে অন্য সব দল খেলছে। গত ছয় সাত মাস ধরে খেলা না থাকায় আমি সন্দিহান যে যেভাবে চলছিলাম সেভাবে চলতে পারবো কিনা। জিম্বাবুয়ে আমাদের চেয়ে অনেক নিচে চলে গেছে। আমরা এখন বলে কয়ে ওদের হারাতে পারি। অথচ, বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপ, ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে এতো ভালো খেলার পরও মাঝে এতো বড় বিরতি হয়ে যাচ্ছে। কোন খেলা পাচ্ছি না আমরা।’
২০১৩ সালের অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকের পর থেমে থেমে ৬টি টেস্ট জুটেছে ভাগ্যে আল আমিনের। সংখ্যাটা তিন বছরে খুবই নগণ্য। তবে টেস্টে অনিয়মিত আল আমিনের লক্ষ্য ফিটনেসটা ঠিক রাখাÑ‘মনে আছে আমি শেষ টেস্ট খেলেছিলাম মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের সঙ্গেই। তারপর অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার কারনে ওই সিরিজের শেষ ২টি টেস্ট খেলতে পারিনি। এরপর বাংলাদেশ অনেকগুলো টেস্ট খেলেছে তবে আমি খেলতে পারিনি। ফিটনেস আরও বাড়িয়ে, লাল বলে আরও অনুশীলন করে যেভাবে সাদা বলে বাংলাদেশ দলকে যতটুকু সাফল্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি লাল বলেও দেওয়ার চেষ্টা করবো।’
এ বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল খেলেছে শুধুই টি-২০ ম্যাচ। সে কারনেই ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টেস্ট সিরিজকে চ্যালেঞ্জিং মনে করছেন আল আমিনÑ‘বিপিএল বলেন, এশিয়াকাপ, বিশ্বকাপ সব কিন্তু টি-২০ সংস্করণেই হয়েছে। এ কারণে আমাদের সব চিন্তা- ভাবনা টি-২০কে কেন্দ্র করেই ছিল। যদি দেশের অবস্থা ভালো হয়, ইংল্যান্ড যদি আসে তাহলে তাদের বিপক্ষে টেস্ট আছে। প্রথমে তাদের সঙ্গেওয়ানডে। ওয়ানডে ভালো খেলছি, এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পেরে যদি টেস্টে সুযোগ পাই, তাহলে ওয়ানডের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চেষ্টা করব।’
২০১৫ বিশ্বকাপে পেস ত্রয়ীর পারফরমেন্সে দলের মধ্যে ছিলেন ব্রাত্য। বিশ্বকাপ উত্তর বাংলাদেশের চার পেস বোলারের পারফরমেন্সে ওয়ানডে দলে জায়গা হয়নি তার। দলের মধ্যে পেসারদের এমন প্রতিদ্ব›িদ্বতাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন আল আমিনÑ‘আমি এটাকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা হিসেবে দেখছি না। যে যখন সুযোগ পাবে সে তখন তার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করবে। আমি যখন সুযোগ পাচ্ছি তখন সেরাটাই দিচ্ছি। মুস্তাফিজ, তাসকিন, রুবেল বা মাশরাফি ভাই যে যখন সুযোগ পাচ্ছে সে তার সেরাটাই দিচ্ছে। যদি টিকে থাকতে হয় আমাকে সেরাটাই দিতে হবে। আমার কাছে মনে হয় এটা একটা পজিটিভ চ্যালেঞ্জ বা পজিটিভ এটিচ্যুড।’
সাসেক্সে খেলতে যেয়ে সোলডার ইনজুরিতে পড়ে এখন অপারেশনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে মুস্তাফিজুরকে। ৬ মাস দলের বাইরে থাকতে হবে। এই কাটার মাস্টারের অনুপস্থিতি যে চাপে ফেলবে বাংলাদেশ দলকে, তা মনে করছেন আল আমিনওÑ‘মুস্তাফিজ আমাদের অনেক বড় সম্পদ। প্রত্যেকটা দলই ওকে নিয়ে পরিকল্পনা করে, কিন্তু তা কাজে লাগে না। এটা একটা ফ্যাক্টর। সেক্ষেত্রে আমাদের কাজটা সহজ হয়ে যায়। সাকিব ভাই, মুস্তাফিজ একপাশ থেকে রান চাপাতে পারে, তখন অন্যপাশ থেকে যারা বোলিং করে, তারা উইকেট পাচ্ছে। তাই মুস্তাফিজকে অনেক মিস করবো। কারণ সামনে ইংল্যান্ড, তারপরও নিউজিল্যান্ডে আমরা যাবো। যত দ্রæত ও রিকভারি করতে পারে, ততই আমাদের মঙ্গল।’
মুস্তাফিজুরের অভাব পূরণের দায়িত্বটা নিতে চান আল আমিনÑ‘এক বছর আগেও কিন্তু মুস্তাফিজ দলে ছিলো না। আমিও নাও থাকতে পারি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। যারা আছে তারা ওইভাবেই আসবে, জায়গা পূরণ করার জন্য। মুস্তাফিজ নেই, ওর জায়গায় যে আসবে বা আমরা যারা আছি তারা এমনভাবে পারফর্ম করার চেষ্টা করবো যেন ওর অভাবটা যাতে বুঝতে না দেওয়া যায়।’
নিজে ফিট আছেন, তবে দলের অন্য পেসাররা সবাই ইনজুরিপ্রবণ। তার কারণও খুঁজে পেয়েেেছন আল আমিনÑ‘রুবেল ভাই বলেন, তাসকিন বলেন ওরা হয়তো ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করে। সেখানে আমি হয়তো ১৩০ থেকে ১৩৫-এ বল করি। যারা অনেক জোরে বল করে তাদের ইনজুরিতে পড়ার শঙ্কা একটু বেশি থাকে। মাশরাফি ভাইতো অনেক দিন থেকেই ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করে খেলছে। আর আমরা নরমাল যে গ্রিপে বল ধরি, মুস্তাফিজ সেখানে ও অন্যভাবে গ্রিপে বল ধরে। এমন কিছু হলে কিন্তু ইনজুরিতে পড়ার প্রবণতাটা বেড়ে যায়।’
অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে মুস্তাফিজ ইনজুরিতে পড়ছে বলে মনে করছেন আল আমিনÑ‘আমাদের তুলনায় মুস্তাফিজ কিন্তু অনেক বেশি খেলেছে। আইপিএল, এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ মিলে অনেক বেশি খেলছে। আমার মনে হয় ইনজুরিটা এ কারণেই হয়েছে। ওকে অনেক বেশি ব্যবহার করার কারণে হতে পারে। উইকনেসের কারণে হতে পারে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন