মালয়েশিয়ায় করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে অভিবাসী শ্রমিকদের দুর্ভোগ নিয়ে সাক্ষাৎকার দেয়ার অপরাধে বাংলাদেশি শ্রমিক রায়হান কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সেইসঙ্গে রায়হানরকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
আজ বুধবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় অভিবাসীদের ওপর সরকারের নিপীড়ন নিয়ে আল জাজিরা টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী রায়হান কবির। তার জের ধরে ২৪ জুলাই তাকে গ্রেপ্তারের পর ১৪ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে মালয়েশিয়ার পুলিশ।
অবিলম্বে মোহাম্মদ রায়হান কবির নামে ২৫ বছর বয়সী ওই তরুণকে মুক্তি দিয়ে তার ‘ওয়ার্ক পারমিট’ পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে নিউ ইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটি।
এইচআরডব্লিউর উপপরিচালক (এশিয়া) ফিল রবার্টসন এক বিবৃতিতে বলেন, “রায়হান কবিরের প্রতি মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষের আচরণ সব অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি রোমহর্ষক বার্তা দিচ্ছে, যেখানে অধিকার লঙ্ঘন, নির্বিচার গ্রেপ্তার, প্রত্যাবাসন ও তালিকাভুক্তির কথা উঠে এসেছে।
আল জাজিরাকে তিনি বলেন, মহামারীর মধ্যে অবৈধ শ্রমিকদের আটক ও জেলে পাঠানোর মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকার বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। এটা কোনো মানবিক আচরণ হতে পারে না।
তবে দেশটির সরকারের কর্মকর্তারা আল জাজিরার ওই খবর ‘ভুল, বিভ্রান্তিকর এবং অন্যায্য’ বলে দাবি করেন। ওই প্রতিবেদন সম্প্রচারের পর দেশটিতে ক্ষোভের সঞ্চার হলে রায়হানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
এ ঘটনায় পুলিশ আল জাজিরার সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদে তলব করার পর মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ তুলেছে, দেশটির সরকার গণমাধ্যমের প্রতি দমনমূলক আচরণ করছে।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে লকডাউন শুরু হলে মালয়েশিয়া সরকার শিশু, রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ কয়েকশ অবৈধ শ্রমিককে আটক করে। মালয়েশিয়া সরকারের কর্মকর্তারা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতেই অবৈধ অভিবাসীদের আটকের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরলেও অধিকারকর্মীরা এ ধরনের ধরপাকড়কে ‘অমানবিক’ বলছেন।
আল জাজিরার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা, মানহানি, এবং যোগাযোগ ও মাল্টিমিডিয়া আইন লঙ্ঘন সম্পর্কিত অভিযোগ আনা হচ্ছে। গ্রেপ্তারের প্রথম দিনে সাংবাদিকদের কাছে লেখা একটি চিঠিতে রায়হান কবির বলেছেন, ‘আমি কোন অপরাধ করিনি। আমি মিথ্যা বলিনি। আমি শুধুমাত্র অভিবাসীদের ওপর বৈষম্যের প্রতিবাদ করেছি। আমি চাই অভিবাসী ও আমার দেশের সম্মান নিশ্চিত হোক। আমার বিশ্বাস, সব অভিবাসী এবং বাংলাদেশি আমার পাশে থাকবে।’
বাংলাদেশের ২১টি সিভিল সোসাইটি গ্রুপ রায়হান কবিরকে মুক্তি দেওয়ার আহবান জানিয়েছে। আল জাজিরা বলছে, পুলিশ ২ হাজারেরও বেশি শ্রমিককে আটক রেখেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, রায়হান কবিরের ব্যাপারে যেভাবে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে, তার প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, বিদেশিদের নিয়ে অহেতুক ভয়ের এই সময়ে রায়হান কবিরের ওপর মালয়েশিয়ার সরকারের এই রকম প্রকাশ্য হামলায় বিরোধী শক্তিকে রসদ জোগাবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকারে দেশের নাগরিকদের পাশাপাশি বিদেশি নাগরিকদেরও সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের বাক স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে, বলছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন বলেছেন, ‘অভিবাসীদের ওপর আচরণ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলা কোন অপরাধ নয়, এ রকম নির্যাতন নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করাও অন্যায় নয়। মালয়েশিয়ার সরকারের উচিত রায়হান কবিরকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া এবং দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি করার চেষ্টা করা।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন