বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ঘিরে গণগ্রেপ্তার চলছে বলে মন্তব্য করেছে লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। শেখ হাসিনার সরকার ভিন্নমত দমন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে সংস্থাটি নির্বিচারে গ্রেপ্তার বন্ধ, ভিন্নমত প্রকাশের দায়ে আটককৃতদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি ও শিক্ষার্থীদের ওপর সহিংস হামলার ঘটনায় দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে। গতকাল বুধবার এত বিবৃতিতে এ সব কথা বলা হয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নিজস্ব ওয়েবসাইটে দেয়া বিবৃতিতে সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীদের মুখ বন্ধ করার জন্য একটি অস্পষ্ট আইনের ব্যবহার করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট অনুসরণ করে ইতিমধ্যেই সরকারের সমালোচনা করার দায়ে কয়েক ডজন মানুষকে আটক করেছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর আওয়ামী লীগ সমর্থকরা রামদা, লাঠি-সোটা ও রডের পাইপ দিয়ে হামলা চালানোর ঘটনায় শেখ হাসিনা সরকার কোন সমালোচনা সহ্য করছে না।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর চালানো সা¤প্রতিক গণগ্রেপ্তারে আতঙ্কজনক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যা নাগরিকের বাক-স্বাধীনতাকে ব্যাপকভাবে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। ব্র্যাড অ্যাডামস আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত এটা মেনে নেয়া যে, সমালোচনা হলো ক্রিয়াশীল ও সুষ্ঠু গণতন্ত্রের একটি অংশ। সরকারের উচিত আইসিটি আইনের পরিবর্তে এমন আইনের প্রচলন করা যাতে বাকস্বাধীনতা সমুন্নত থাকে।
মানবাধিকার সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়, ২৯শে জুলাই দ্রæত গতির একটি বাসের ধাক্কায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পরে হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে আসে। প্রতিবাদী তরুণরা নিরাপদ সড়ক, প্রশাসনের জবাবদিহীতা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার দাবি জানায়। পরে তারা নিরাপত্তা বাহিনীর টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেটের শিকার হন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমর্থকরা তাদের ওপর সহিংসতা চালায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর সরকার সমর্থকদের হামলার সময় পুলিশ পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। পরে এই সহিংসতার বিষয়ে যে কোন ধরণের সমালোচনা বন্ধ করতে উদ্যোগী হয় প্রশাসন। বিপুল সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী থাকেন, শহরের এমন একটি অঞ্চলে অভিযান চালায় ঢাকার পুলিশ। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, পুলিশ সব বাসা-বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা খুঁজতে তারা দ্বারে-দ্বারে গিয়ে মোবাইল ফোন চেক করেছে। আটককৃতদের একজন বিখ্যাত আলোকচিত্রী ও মানবাধিকার কর্মী শহিদুল আলমকে ৯ দিন ধরে বন্দী করে রাখা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, পুলিশ কাস্টডিতে তাকে মারধর করা হয়েছে। ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর দায়ে গত ৪ই আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদের জামিন নামঞ্জুর করে কাস্টডিতে রাখা হয়েছে। সব গ্রেপ্তারই করা হয়েছে ৫৭ ধারায় আইসিটি আইনে। এই ধারাটি অশ্লীল, মানহানিকর বা অপবাদমূলক কোন প্রচারণা এবং আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারে, রাষ্ট্র বা কোন ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে পারে বা কারো ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করতে পারে এমন প্রচারণা চালানোর দায়ে যে কোন ব্যক্তিকে বিচারের মুখোমুখি করার অনুমতি দিয়েছে। এই অস্পষ্ট ও ব্যাপকভাবে বিস্তৃত আইন বছরের পর বছর সমালোচনা দমন করতে ব্যবহৃত হচ্ছে। পূর্বে বাংলাদেশ সরকার মেনে নিয়েছিল যে, ওই আইনের অপব্যবহার হচ্ছে। বলেছিল বাক-স্বাধীনতার লাগাম টেনে ধরার কোন ইচ্ছা তাদের নেই। এর পরেও তারা এমন কার্যক্রম চালাচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের বিবৃতিতে সাইবার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম শামীমের করা মন্তব্য উল্লেখ করেছে। গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ৫৭ ধারার আইসিটি আইন খুবই অস্পষ্টভাবে বর্ণিত একটি আইন, যা বর্তমানে সমালোচনা বন্ধ করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। ওই আইনে দায়ের করা মামলাগুলোর অর্ধেকেরও কম সংখ্যক মামলায় চুড়ান্ত রায় দেয়া হয়। কিছু মামলা পুরোপুরি সাজানো যা মানুষদের হয়রানি করতে দায়ের করা হয়। ##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন