শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পদ্মায় তীব্র ভাঙন

সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধের ৭০ মিটার বিলীন

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০২০, ১২:০২ এএম

শিমুলিয়া ঘাট তলিয়ে ফেরি চলাচল : বন্ধ : নদীগর্ভে কয়েকটি স্কুল

প্রবল স্রোতে পদ্মা নদীতে তীব্রভাঙন দেখা দিয়েছে। তীব্র স্রোতে গতকাল কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌ-রুটের শিমুলিয়া প্রান্তের ঘাটগুলো ভাঙনের মুখে পড়ে। এতে চার নম্বর ফেরিঘাট ভেঙে যায়। দুই নম্বর ঘাটেও ভাঙন দেখা দেয়। শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় আকস্মিক ভাঙনে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এতে শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ঘাটে ঢাকাগামী যাত্রীরা বিপাকে পড়েন।

এর আগে পদ্মার ভাঙনে মাদারীপুরের শিবচরে কয়েকদিনের ব্যবধানে দুটি স্কুল বিলীন হয়ে গেছে। এর মধ্যে গত ১৮ জুলাই মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বন্দরখোলা ইউনিয়নে চরাঞ্চলের বাতিঘর খ্যাত এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের তিন তলা ভবন পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। এরপর ২৩ জুলাই কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের একটি তিনতলা বিশিষ্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ ছাড়া চাঁদপুরে ১৮ জুলাই ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে তিন তলা বিশিষ্ট সদ্য নির্মিত রাজরাজেশ্বর ওমর আলী স্কুল কাম সাইক্লোন সেন্টারটি। মাত্র দুই মাস আগে দৃষ্টিনন্দন এ ভবনটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। শরিয়তপুরে জাজিরার নাওডোবায় পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধের ৭০ মিটার অংশ বিলীন হয়েছে। আর কুন্ডের চর ইউনিয়নের সিডার চর এলাকায় ভাঙনে ২০০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এখনো প্রবল স্রোতের কারণে বিভিন্ন স্থানে পদ্মার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া শরীয়তপুরের আরও ১৪টি স্থানে ভাঙন রয়েছে। এসব স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

মুন্সীগঞ্জ থেকে মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, মাওয়ায় পদ্মার তীব্র স্রোতে ও নদী ভাঙনে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটের ভিআইপি ঘাট হিসেবে পরিচিত ৪ নম্বর শিমুলিয়া ফেরিঘাটটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ২ নম্বর ফেরিঘাটটিও ঝুঁকিতে রয়েছে। বিআইডবিøউটিএ কর্তৃপক্ষ জানান সকালে ১ নম্বর ঘাটটি চালু থাকলেও পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল ভোরে ৪ নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। তীব্র ভাঙনে দুই ঘণ্টার মধ্যে ৪ নম্বর ফেরিঘাটটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় ফেরি চলাচল। পরে সকালে ১ নম্বর ফেরিঘাট দিয়ে ৫টি ফেরি চলাচল করে। দুপুর থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে গত ২৮ জুলাই শিমুলিয়ার ৩ নম্বর ফেরিঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়। পদ্মার ভাঙন অব্যাহত থাকায় একের পর এক ফেরিঘাট নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুট হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। বিআইডবিøউটিএ কর্তৃপক্ষ ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছে। যাতে ১ নম্বর ফেরিঘাটটি চালু রাখা যায়। ফেরি বন্ধ থাকায় ছোট বড় দেড় শতাধিক গাড়ি আটকা পড়েছে।

চাঁদপুর থেকে বি এম হান্নান জানান, বানের পানিতে প্লাবিত হয়েছে চাঁদপুর শহর ও গ্রামাঞ্চলের প্রত্যন্ত জনপদ। সর্বত্রই বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। গত বুধবার বিকেলে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে পুরো জেলাজুড়ে প্লাবিত হয়। হঠাৎ এরকম ঘটনায় চরম বিপাকে পড়ে সাধারণ মানুষ। চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের হাইমচর উপজেলার মহজমপুর ও চরভাঙা এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পানির তোড়ে ভেঙে যায়। প্লাবিত হয় বাঁধের অভ্যন্তরের ঘরবাড়ি আবাদি জমি। ভেসে যায় সহস্রাধিক পুকুরের চাষকৃত মাছ। বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা কয়েক হাজার মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, পুকুর, ঝিল, সড়ক প্লাবিত হয়েছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
ভোলা থেকে মো: জহিরুল হক জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ভোলার মেঘনায় জোয়ারে পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে নদ-নদী উত্তাল হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন স্থানে মেঘনার পানি বিপদসীমার ১১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর ফলে বিভিন্নস্থানে প্লাবিত হয়ে তলিয়ে গেছে বাড়ি ঘড়। জেলার ঢালচর, চর নিজাম, কাজীরচরসহ নিম্নাঞ্চলগুলো ৫ থেকে ১০ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ভোলা শহর রক্ষা বাঁধসহ অন্যান্য বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, উত্তরের বন্যার প্রবল স্রোতের সাথে ফুঁসে ওঠা সাগরের জোয়ারে দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। নগরীর রাস্তাঘাট বারবারই প্লাবিত হচ্ছে মাঝারী বর্ষণে। শ্রাবণের দুঃসহ তাপ প্রবাহের পরে ৪ আগস্ট ভোরে দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে ব্যাপক বজ্রপাতের সাথে ঝড়ো হাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। একই সাথে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও লন্ডভন্ড হয়ে যায়। এরপর থেকেই দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় পটুয়াখালীতে দেশের সর্বাধিক ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। কলাপাড়ায় ৫৯ মিলি এবং ভোলাতেও ৪০ মিলি বৃষ্টি হয়। আবহাওয়া বিভাগ থেকে আরো দু’দিন দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। বরিশালসহ দক্ষিণের সব নদীবন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সঙ্কেতের আওতায় রাখা হয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ থেকে মো: অহেদুল হক জানান, গোপালগঞ্জে মধুমতি বিলরুট চ্যানেলের পানি বিপদসীমা স্পর্শ করেছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলার মানিকদাহ ও জালালাবাদে মধুমতি নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। স্থানীয়রা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
জামালপুর থেকে নুরুল আলম সিদ্দিকী জানান, চলতি বন্যায় জামালপুরে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও বাড়ি-ঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার নিচে থাকলেও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে। চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল থেকে পানি সরে না যাওয়ায় এবং ভাঙনে বসতভিটা হারা হাজারো পরিবার এখনও খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

লক্ষ্মীপুর থেকে এসএম বাবুল জানান, মেঘনা নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে লক্ষ্মীপুরের রামগতি কমলনগর ও রায়পুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। পানির চাপে গত বুধবার লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজুচৌধুরীরহাট ফেরিঘাটের সড়ক ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় বন্ধ লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌ-রুটের ফেরি চলাচল। ফলে দু’পাড়ে পারাপারের অপেক্ষায় কয়েশ’ পণ্যবাহী ট্রাক।
এদিকে রাজশাহীতেও পদ্মার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। জেলার বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের নাপিতপাড়া গ্রামের পাশে পদ্মা রক্ষা বাঁধে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন শুরুর পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জিও ব্যাগ ফেলে গ্রামরক্ষা করার চেষ্টা করছে।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন