করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, কেনাকাটা, প্রশাসনিক কার্যক্রম সবকিছুতেই লেগেছে প্রযুক্তির ছোয়া। এই সময়ে ব্যান্ডউইথের চাহিদাও বেড়েছে অনেক। এমন সময় দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল (সি-মি-উই-৫) ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় প্রায় অর্ধেক ব্যান্ডউইথ সরবরাহ। বালু তুলতে গিয়ে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যমকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে পটুয়াখালীর স্থানীয় লোকজন। আর এতেই রোববার সারাদিন ধীরগতি ছিল সারাদেশের ইন্টারনেট সেবা।
জানা যায়, সাবমেরিন ক্যাবলে পাওয়ার সাপ্লাই বন্ধের কারণে গতকাল রোববার দিনভর ধীরগতির ইন্টারনেট সেবা পেয়েছেন গ্রাহকরা। বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান জানান, স্থানীয় লোকজন এক্সকাভেটর দিয়ে বালু তুলতে গিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের পাওয়ার সাপ্লাই ও অপটিক্যাল ফাইবার ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। কতটুকু ক্ষতি হয়েছে, তা যাচাইয়ের কাজ চলছে। এরপর বলা যাবে কখন ইন্টারনেটের ধীরগতির সমস্যার সমাধান হবে।
তিনি জানান, দেশে যে ব্যান্ডইউথ ব্যবহার করা হয়, তার প্রায় অর্ধেক দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল থেকে সরবরাহ করা হয়। রোববার পাওয়ার সাপ্লাই বন্ধের কারণে ওই লাইন বন্ধ রয়েছে। মেরামতের কাজ চলছে। দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল বন্ধ থাকায় সারা দেশে গ্রাহকরা ধীরগতির সমস্যায় পড়েছেন। বিএসসিসিএলের এমডি জানান, যারা এই সংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ প্রথম সাবমেরিন কেবল ‘সি-মি-উই-৪’ এ যুক্ত হয় ২০০৫ সালে। আর ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে সি-মি-উই-৫ সাবমেরিন কেবলে যুক্ত হয়। দ্বিতীয় এই স্টেশনের মাধ্যমে সাউথইস্ট এশিয়া-মিডলইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়ামের সাবমেরিন কেবল থেকে সেকেন্ডে ১ হাজার ৫০০ গিগাবিট (জিবি) গতির ইন্টারনেট পায় বাংলাদেশ।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এর সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, মূল ক্যাবল নয়, পাওয়ার ক্যাবল কাটা পড়েছে। ফলে রিপিটারে বিদ্যুৎ যাচ্ছে না। এজন্য ব্যান্ডউইথ পেতে সমস্যা হচ্ছে। সাবমেরিন ক্যাবল ১ ও আইটিসি দিয়ে আমরা কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। ধীরগতি ভর করেছে ইন্টারনেটে। তিনি জানান, ৪০-৫০ শতাংশ গতি কমে গেছে।
সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক বলেন, রোববার দুপুর থেকে ইন্টারনেটে সমস্যা শুরু হয়। আইএসপিগুলো যে পরিমাণ ব্যান্ডইউডথ সরবরাহ করে, এখন তার অর্ধেক দিতে পারছে। তাই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গ্রাহকরা ধীরগতির ইন্টারনেট পাচ্ছেন। তাদের তথ্য অনুযায়ী-দেশে বর্তমানে প্রায় এক হাজার ৭০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার হয়ে থাকে যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক সরবারহ করে থাকে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল।
ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) অপারেটর ফাইবার অ্যাট হোমের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ সাবির বলেন, দেশের মোট ব্যান্ডউইথ চাহিদার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আসে সি-মি-উই-৫ দিয়ে। সেটি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত ইন্টারনেটের ধীরগতি থাকবে।
জানা গেছে, ল্যান্ডিং স্টেশন এলাকায় খারাপ আবহাওয়া থাকায় পাওয়ার ক্যাবল মেরামতে সময় লাগছে। আজকের মধ্যেই মেরামত সম্পন্ন হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) প্রতিষ্ঠান লেভেল-থ্রি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক জুনায়েদ আহমেদ বলেন, পাওয়ার ক্যাবল কাটার পরপরই আমরা জানতে পারি। কুয়াকাটা এলাকায় খারাপ আবহাওয়া বিরাজ করায় পাওয়ার ক্যাবল মেরামতে দেরি হচ্ছে। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি জানান, সাবমেরিন ক্যাবল-১ ও আইটিসির (ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল) মাধ্যমে প্রাপ্ত ব্যান্ডউইথ দিয়ে আমরা ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছি। এতে সেবার মান খারাপ হচ্ছে। গতি অনেক কমে গেছে। তিনি আরও জানান, সিঙ্গাপুরের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় ৬০ শতাংশ যোগাযোগ এখন বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন