শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যবসা বাণিজ্য

ব্যান্ডউইডথ সরবরাহে সক্ষমতা অর্জন করবে সাবমেরিন ক্যাবল

প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ করেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত টেলিযোগাযোগ খাতের বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)। এর ফলে আগামী জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর আরও ১ হাজার ৪০০ জিবিপিএস (গিগাবিটস পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইডথ সরবরাহের সক্ষমতা অর্জন করবে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশকে সাউথইস্ট এশিয়া-মিডল ইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ-৫ (এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫)-এর সঙ্গে সংযুক্ত করতে ল্যান্ডিং স্টেশন ও সংযোগ লাইন স্থাপন, ফাংশনাল বিল্ডিংসহ প্রায় সব অবকাঠামোর কাজ আগেই শেষ করেছে সাবমেরিন ক্যাবল। আর ৬৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটায় দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের দিকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সমুদ্র থেকে ক্যাবল সংযোগের কাজ প্রায় শেষ করেছে সাবমেরিন ক্যাবল। ইউরোপ থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে আসা সঞ্চালন লাইন সংযুক্তির জন্য ল্যান্ডিং স্টেশন স্থাপনের কাজও শেষ পর্যায়ে। প্রস্তুত হয়েছে ফাংশনাল বিল্ডিংয়ের মূল স্থাপনা, ডরমিটরি, নিরাপত্তাকর্মীদের ব্যারাক, রেস্ট হাউজ ও ড্রেনেজসহ অবকাঠামোগত অনুষঙ্গ। বর্তমানে ভবনের সৌন্দর্যবর্ধন ও স্টাফ কোয়ার্টারের কাজ চলছে। প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য স্থাপিত নিজস্ব ইলেকট্রিক্যাল পোস্টের কাজ। এর পর চলতি বছরের শেষ দিকে পরীক্ষামূলকভাবে চালুর পর জানুয়ারিতে ল্যান্ডিং স্টেশনের সঙ্গে এসইএ-এমই-ডবিউই-৫ এর সংযোগ স্থাপন করবে বিএসসিসিএল।
এ বিষয়ে কোম্পানি সচিব মো. আব্দুল সালাম জানান, একটি মাত্র সাবমেরিন ক্যাবল দ্বারা ইন্টারনেট সরবরাহ করায় লাইন কেটে গেলে বর্তমানে বিএসসিসিএলের হাতে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। সাবমেরিন ক্যাবল ওয়ানের তুলনায় প্রায় আট গুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন এ সাবমেরিন ক্যাবল চালু হলে এ সমস্যা থাকবে না। দেশীয় টেলিকম কোম্পানিগুলোকে বিদেশ থেকে ব্যান্ডউইডথ কিনতে হবে না। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত ব্যান্ডউইডথ রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশ বড় অংকের অর্থ উপার্জনের সুযোগ পাবে। বিএসসিসিএলের মুনাফাও বাড়বে।
তিনি আরও জানান, সাড়ে ৬০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে কুয়াকাটায় দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের ল্যান্ডিং স্টেশন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। সার্বিক অবকাঠামোগত উন্নয়নও প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী জানুয়ারিতে এসইএ-এমই-ডবিউই-৫ ক্যাবলের সঙ্গে সংযোগ চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। তখন কোম্পানির বর্তমান ব্যান্ডউইথের সঙ্গে আরো প্রায় দেড় হাজার জিবিপিএস যুক্ত হবে।
জানা যায়, ২০১৫ সালের শেষ দিকে কাজ শুরুর পর দ্রুততম সময়ের মধ্যেই ল্যান্ডিং স্টেশনের অবকাঠামোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে বিএসসিসিএল। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটায় ১০ একর জমিতে গড়ে উঠেছে ওই ল্যান্ডিং স্টেশন। এর জন্য সাগরের নিচ দিয়ে ফ্রান্স থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা ও মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত ২৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যাবল স্থাপন করা হয়েছে। ৬৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটিতে সরকার ১৬৬ কোটি ও বিএসসিসিএল ১৬৬ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। প্রকল্পের বাকি প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার ঋণসহায়তা দিয়েছে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি)। এ ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে কক্সবাজারের জিলং পর্যন্ত (প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশনে যুক্ত করার) ব্যাকবোন তৈরির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। এজন্য এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫ নামের নতুন কনসোর্টিয়ামের সদস্য পদ নিয়ে সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ করেছে বিএসসিসিএল। বাংলাদেশ এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৪ এর ক্যাবলের সঙ্গে আগে থেকেই সংযুক্ত রয়েছে। এ ক্যাবলের মালিক ১৬টি দেশ। সদস্য দেশগুলো হচ্ছে- সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মিসর, ইতালি, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া ও ফ্রান্স। এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫ নামের নতুন কনসোর্টিয়াম গঠিত হয়েছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ নিয়ে। এ কনসোর্টিয়াম দিয়ে ২০ হাজার কিলোমিটার এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৪ ক্যাবলের ‘আপগ্রেডেশন’ বা উন্নয়নকাজও শেষ হয়েছে।
উল্লেখ্য, এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৪ কনসোর্টিয়ামের আওতায় কক্সবাজারে প্রথম সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে ২০০ জিবিপিএস ব্র্যান্ড সরবরাহ করছে বিএসসিসিএল। এর মাধ্যমে দেশের আইসিটি ও টেলিকম কোম্পানিগুলোর চাহিদার বড় অংশ পূরণ করছে কোম্পানিটি। ২০১৪-১৫ হিসাব বছরে ব্যান্ডউইডথ বিক্রিসহ এর মোট টার্নওভার দাঁড়িয়েছে ৫০ কোটি ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। দেশে ব্র্যান্ডউইডথের দাম কমে যাওয়ায় আগের বছরের তুলনায় এ টার্নওভার প্রায় ২৮ শতাংশ কমেছে। ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে প্রকাশিত তিন প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৫ সালের জুলাই থেকে চলতি মার্চ পর্যন্ত এ কোম্পানির টার্নওভার ৪০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। দেশে ব্যান্ডউইডথের ব্যবহার ৩০০ জিবিপিএস ছাড়ালেও চাহিদার সিংহভাগই সরবরাহ করে বেসরকারি খাতের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ছয় ইন্টারন্যাশনাল টিরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল (আইটিসি) প্রতিষ্ঠান। তারা মূলত বাইরে থেকে আমদানি এ ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ করে। বিএসসিসিএলের ব্যান্ডউইডথ সরবরাহের পরিমাণ প্রায় ১২০ জিবিপিএস। ফলে বিএসসিসিএলের অতিরিক্ত ব্যান্ডউইডথ মজুদ থাকায় ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ভারত সঞ্চার নিগাম লিমিটেডকে (বিএসএনএল) ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ করছে বিএসসিসিএল। চলতি বছরের শুরুতে রফতানি শুরু হওয়া এ ব্যান্ডউইডথ থেকে বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা অতিরিক্ত আয় আসবে বিএসসিসিএলের। -ওয়েবসাইট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন