টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপে শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন দ্বীপ প্রতিরক্ষা বেড়িবাঁধের কাজ শেষ না হতেই সাগরে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বাঁধ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের দিকে হলেও কাজ শেষ করা অংশে ১০টির অধিক স্থানে ব্লকগুলো ধসে পড়ছে। এতে নির্মাণাধীন এ বেড়িবাঁধের টেকসই ও স্থায়ীত্ব নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাঁধ নির্মাণ কাজে তড়িগড়ির অভিযোগ দ্বীপের বাসিন্দাদের। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দাবি, ডিজাইনে কিছুটা ত্রু টি থাকার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাহপরীর দ্বীপে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন দ্বীপ রক্ষায় নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধের সাগর অংশে দুই স্তরে ব্লক বসানো শেষ করেছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈদের আগে দ্বীপের দক্ষিণ পাড়া এলাকার দিকে বেড়িবাঁধের শেষাংশে ব্লক বসানোর কাজ খুব তাড়াহুড়া করে করা হয়েছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণে প্রথম দিকের কাজ খুব টেকসইভাবে করতে দেখেছি। কিন্তু দক্ষিণ পাড়া অংশে যেখানে সাগরের আগ্রাসন বেশি সেখানে এসে কাজে তাড়াহুড়া দেখা গেছে। প্রতিরক্ষা ব্লক বসানোর আগে বিছানো বালু পর্যন্ত গাড়ি দিয়ে ভালোভাবে চেপে দেয়নি।
প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক ও দ্বীপের বাসিন্দা মাস্টার জাহেদ হোসেন বলেন, দীর্ঘ সাত বছর অরক্ষিত থাকার পর বেড়িবাঁধ নির্মাণ দ্বীপের বাসিন্দাদের জন্য আনন্দের। কিন্তু বেড়িবাঁধের কাজ শেষ না হতেই স্বাভাবিক জোয়ারে যেভাবে ব্লকগুলো দেবে যাচ্ছে তাতে আমরা ভীষণ হতাশ হয়েছি। বাঁধের দুই স্তরের ব্লকে সামনের দিকে জোয়ারের ধাক্কা সামাল দেয়ার জন্য আরো বেশি ব্লক বসানো দরকার।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, শাহপরীর দ্বীপের দক্ষিণাংশে নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে সেটি আসলে ডিজাইনে ত্রুটির জন্য হয়েছে। সেটা ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি, ডিজাইন রিভিউর ব্যাপারেও আমাদের মতামত ব্যক্ত করেছি। আশা করি খুব দ্রুত সমাধান হবে।
তিনি আরো বলেন, বেড়িবাঁধের যে অংশে এখন ঝুঁকি দেখা দিয়েছে ডিজাইন করার সময় সেখানে চরটা অনেক দূরে ছিল। কিন্তু দিনদিন সাগরের অব্যাহত আগ্রাসনে চর কেটে গিয়ে বর্তমান বাঁধের কাছে চলে আসায় বড় ঢেউগুলো সেখানে আছড়ে পড়ছে। বাঁধের প্রতিরক্ষা ব্লকের সামনে আরো বেশি ব্লক দেয়ার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসটিএ গ্রুপের প্রতিনিধি উত্তম কুমার শাখারী (ননী) বলেন, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এবং পাউবোর নিয়মিত তদারকিতে আমাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাঁধ নির্মাণ কাজ করছে। সেখানে কোন ধরনের অনিয়মের সুযোগ নেই। তবে জোয়ারে ব্লক সরে যাক বা থাক, শেষ পর্যন্ত আমরা একটি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ করবো।
প্রসঙ্গত, বিগত ২০১২ সালের জুন মাসে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমের বেড়িবাঁধের একাংশ বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের পানিতে বিলীন হয়ে যায়। তড়িৎ সংস্কারের অভাবে পরে ভাঙন আরো বড় হয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার পর্যন্ত বেড়িবাঁধ অরক্ষিত হয়ে শতশত পরিবার ঘরবাড়ি সাগরে বিলীন হয়ে যায়। দীর্ঘ ভোগান্তির পর অবশেষে ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২.৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কারে ১০৬ কোটির টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী। পরবর্তীতে এ প্রকল্পে আরো ৪০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হয় বলে জানা যায়। গত ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসটিএ গ্রুপ। এতে দ্বীপে বসবাস করা মানুষের বুকে টিকে থাকার আশা জাগে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন