টেকনাফ (কক্সবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা
বাংলাদেশের দক্ষিণে সর্বশেষ সীমান্ত শহর পর্যটন নগরী হিসাবে খ্যাত টেকনাফ উপজেলা। এই উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ মানুষের বসবাস। এই এলাকার মানুষ শিক্ষার হার থেকে এখনো অনেক পিছিয়ে পড়ে আছে। তবে এই সীমান্ত নগরী টেকনাফের মানুষ খুবই সাধারণ, খুবই সহজ-সরল। অথচ এই এলাকার মানুষগুলো দীর্ঘ এক যুগ ধরে মরণ নেশা ইয়াবার আগ্রাসনের শিকার। মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসছে প্রতিনিয়ত লক্ষ লক্ষ ইয়াবা। এই সমস্ত ইয়াবা পাচারে দিন দিন জড়িত হয়ে পড়ছে টেকনাফের যুবসমাজ এবং এই যুবসমাজকে ইয়াবা পাচারে ব্যবহার করছে টেকনাফ উপজেলার বাইরে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বৈধ ব্যবসার আড়ালে ভদ্রবেশী, মুখোশধারী ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এই মুখোশধারী ভদ্রলোকেরা তাদের নিজস্ব ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা পাচার করে বনে যাচ্ছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, বৈধ ব্যবসার আড়ালে এই অবৈধ ইয়াবা পাচারের সাথে জড়িত তারা অল্প কয়েক মাসের ব্যবধানে ৭-৮টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক বনে যান। কিন্তু প্রশাসনের চোখে তারা একেবারে সাধু। কারণ তারা লক্ষ লক্ষ ইয়াবা পাচার করার সময় ব্যবহার করে নিত্যনতুন কৌশল। এবং ইয়াবা পাচারের সময় বাহক হিসাবে ব্যবহার করে টেকনাফের সহজ-সরল হতদরিদ্র যুবক ও নারীদেরকে। বিজিবি সূত্রে জানা যায়, সীমান্ত এলাকায় ইয়াবা ও মাদক প্রতিরোধ করতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে বিজিবি সদস্যরা। তার পাশাপাশি নিত্যনতুন কৌশলধারী ইয়াবা পাচারকারীদের ধরতে বিজিবি সদস্যরা প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছে সাঁড়াশি অভিযান। এই সমস্ত অভিযানে বিজিবি সদস্যরা আটক করছে লক্ষ লক্ষ মালিকবিহীন ইয়াবা। বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে সুকৌশলে পালিয়ে যাচ্ছে এই সমস্ত কৌশলধারী ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। বিজিবি সূত্রে আরো জানা যায়, চোরাকারবারিরা তাদের অবৈধ ব্যবসা অব্যাহত রাখার জন্য বিভিন্ন প্রকার নিত্যনতুন কৌশল ব্যবহার করে থাকে। তবে বিজিবি সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পাচারকারীদের প্রায় কৌশলগুলো থেকে ইয়াবা উদ্ধার করতে সক্ষম হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ আগস্ট দমদমিয় বিওপির সদস্যরা গোপন সংবাদে একটি গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে অভিনব কায়দায় লুকিয়ে লাখা বাঁধাই করা একটি ছবির ফ্রেম থেকে ১১ হাজার ইয়াবাসহ মো. বাবুল (১৮) নামে এক পাচারকারীকে আটক করতে সক্ষম হয়। সে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামের মো. আবুল হোসেনের ছেলে। এব্যাপারে টেকনাফ সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা বলেন, টেকনাফ ২ বিজিবি সদস্যরা দিনের পর দিন যেভাবে লক্ষ লক্ষ মরণ নেশা ইয়াবা আটক করতে সক্ষম হচ্ছে। কিন্তু এই সমস্ত ইয়াবা পাচারের সাথে কারা জড়িত, কারা বৈধ ব্যবসার আড়ালে এই অপকর্ম ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের দাবি, এই ভদ্রবেশী মুখোশধারী ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় নিয়ে আসা না হলে টেকনাফের মানুষ সারা জীবন মাদকের কলঙ্ক মাথায় নিয়ে মরতে হবে। আর আগামী প্রজন্মকে এই ইয়াবার আগ্রাসন থেকে কিছুতেই রক্ষা করা যাবে না। তার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত বাড়বে মাদক আসক্তদের সংখ্যা। ধংস হয়ে যাবে যুবসমাজ। টেকনাফ ২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ অভিনব কায়দায় ১১ হাজার ইয়াবাসহ পাচারকারী আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আমাদের বিজিবি সদস্যরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে আটক করছে কোটি কোটি টাকার ইয়াবা ও পাচারকারী। কিছু কিছু কৌশলধারী ইয়াবা পাচারকারীরা বিজিবি উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তবে আমরা তাদের ফেলে যাওয়া ইয়াবাগুলো আটক করতে সক্ষম হচ্ছি। তিনি আরো বলেন, যে সমস্ত চোরাকারবারীরা বৈধ ব্যবসার আড়ালে সুকৌশলে ইয়াবা পাচার করে যাচ্ছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হলে স্থানীয় এলাকাবাসীকে বিজিবি সদস্যদেরকে সহযোগিতা করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন