তিন বছরের ব্যবধানে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের স্থায়ী আমানত কমেছে ১ হাজার ১’শ ৫৭ কোটি টাকা। স্থায়ী আমানত কমার বিষয়টি নজরে এসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষেরও। সংস্থাটি বলছে, স্থায়ী আমানত কমায় বর্তমান গ্রাহকরা ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। অন্যদিকে আর্থিক অনিয়ম নিয়ে ফারইস্টকে চিঠি দিয়েছে আরেক নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন। তবে, তার সন্তোষজনক জবাব মেলেনি।
এদিকে এত বিপুল পরিমাণ আমানত কমার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক লেনদেনে ব্যাপক অনিয়ম পেয়েছে আরেক নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনও। বিএসইসির চিঠির জবাবে কোনো দলিলপত্রও জমা দিতে পারেনি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
সূত্র মতে, ২০১৫ সালে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের স্থায়ী আমানত ছিলো ১ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। পরের বছর কমে হয়েছে ১ হাজার ৪২০ কোটি। ২০১৭ সালে কমেছে ২৯২ কোটি টাকা। আর ২০১৮ সালে একলাফে আমানত নেই ৭২৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
এত টাকা কোথায় গেলো তার হদিস জানতে একাধিকবার ফোন ও ক্ষুদে বার্তা দেয়া হয় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামকে। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি ও খুদে বার্তার জবাবও দেননি।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হেমায়েত উল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, অনেক বড় প্রতিষ্ঠান খারাপ সময় যাচ্ছিল তাই আমানত কমেছে। তবে নানামুখী পদক্ষেপে খুব শিগগিরই ঘুড়ে দাড়াবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
নিয়ম অনুযায়ী, লাইফ ফান্ডের ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে হয় সরকারি বন্ডে। আর বাদবাকী টাকার বড় অংশই থাকে স্থায়ী আমানত হিসেবে। সাধারণত, কোম্পানির লাইফ ইন্স্যুরেন্স ফান্ড বাড়লে, স্থায়ী আমানতও বাড়ে। ২০১৬ সালে ফারইস্টের এই তহবিল ছিলো ৩ হাজার ২১৬ কোটি। ২০১৭ সালে বেড়েছে আরো ১২৮ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে কমেছে মাত্র ৬ কোটি। বিপরীতে, ব্যাংক আমানত কমেছে ৭২৩ কোটি টাকার।
আর্থিক বিবরণীতে অনিয়ম পেয়ে আগেই ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে চিঠি দিয়েছিলো পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। উত্তর এসেছে। কিন্তু অনিয়মের সপক্ষে কোন প্রমাণাদি ছাড়াই। এর আগেও, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে কোন কারণ ছাড়াই বড় অঙ্কের দক্ষ কর্মী ছাঁটাই করে নিজস্ব লোক নিয়োগ, আইন না মেনে অবৈধ বিনিয়োগ, জমি ক্রয়ে দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের নজির রয়েছে।
এদিকে গোপনে গ্রাহকদের টাকা সরিয়ে নেয়াসহ শ্যামল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিএসইসির চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ২০১৮ সালের আগস্টের পরিদর্শন প্রতিবেদনে শ্যামল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
এর মধ্যে কোম্পানি তাদের কনসোলিডেটেড কাস্টমার্স অ্যাকউন্টে ঘাটতির মাধ্যমে ১৯৮৭ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস রুলের ৮এ (১) এবং (২) ভঙ্গ করেছে। কোম্পানির একজন গ্রাহকের নামে একাধিক হিসাব পরিচালনা করে ডিপজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩ এর প্রবিধান ২৬(১) ভঙ্গ করা হয়েছে।
কোম্পানিটি তাদের ডিলার হিসেবে লেনদেনের জন্য আলাদা ব্যাক অফিস মডিউল বজায় রাখেনি এবং যথাযথ রেকর্ড রাখেনি। পাশাপাশি কর্মচারী এবং কর্মচারীদের আত্মীয়দের ঋণ সুবিধা দিয়ে বিএসইসি’র নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছে। এছাড়া গ্রাহকদের মার্জিন চুক্তিপত্র না থাকা সত্তে¡ও ক্যাশ অ্যাকাউন্টসে ঋণ সুবিধা প্রদান এবং গ্রাহকদের মার্জিন সুবিধার আওতায় ‘জেড’ গ্রুপের সিকিউরিটিজ ক্রয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
বিএসইসির এসআরআই বিভাগের আরেকটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, শ্যামল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ২০১৭ সালের ৩০ জুন অডিটেড ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট অনুযায়ী কনসোলিডেটেড কাস্টমার্স অ্যাকাউন্টে ঘাটতি ছিল।
কনসোলিডেটেড কাস্টমার্স অ্যাকাউন্টে ঘাটতি থাকার অর্থ গ্রাহকের অজান্তে তার হিসাব থেকে টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। বিএসইসি’র মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম জানিয়েছেন, এসব অনিয়মের কারণে শ্যামল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টকে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন