না’গঞ্জে কিশোর গ্যাংএর দৌরাত্ব চরমে পৌঁছেছে এদের ভয়ংকর আচরণে এখন আতংকিত না’গঞ্জবাসী! হেনো কোনো কাজ নাই যা এরা করতে পারে না। বয়স দেখলে বুঝার কোনো উপায় নেই এদের সংঘটিত অপরাধ কী ভয়ঙ্কর। খুন, ধর্ষণ, হাঙ্গামা, দোকানে ফাও খাওয়া, মাদক ব্যবসা, মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপকর্ম এরা করে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে। পাড়া-মহল্লায় এরা অনেকটা অপ্রতিরোধ্য।গত বছর ও চলতিবছরের এ পর্যন্ত ৮ থেকে ৯ জন খুন হয়েছে। পঙ্গুত্ব বরণ করেছে অসংখজন।এদের শাসন করতে গিয়ে এলাকার সম্মানিত মানুষও লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। অনেকের কাছে এরা এখন মূর্তিমান আতঙ্ক। পুলিশের খাতায় তালিকা না থাকায় কিংবা বয়সে কম হওয়ায় এরা গ্রেফতারের বাইরে থেকে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে গ্রেফতার হওয়ার পর কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে থেকে যায় অনেকে। ফিরে এসে আবার আগের মতো দলবল নিয়ে শুরু করে নানা অপরাধ। অনেক সময় পরিবারের লোকজনের আশকারাতে বেপরোয়া হয়ে উঠতে শুরু করে এসব গ্যাং সদস্যরা।এলাকার লোকজন এদের নাম পরিচয় বলতে ভয়পায় নাজানি কখন সঙ্ঘবদ্ধ হামলার শিকার হয়ে প্রাণ হারাতে হয়।
সর্বশেষ কিশোর গ্যাংয়ের বলী হয়েছে বন্দরের দুই শিক্ষার্থী মিহাদ ও জিসান। ১০ আগস্ট বন্দরের ইস্পাহানী ঘাট এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ধাওয়ায় আত্মরক্ষার্থে শীতলক্ষ্যা নদীতে ঝাঁপ দেয়া দুইজনের লাশ রাতে নদী থেকে উদ্ধার করা হয়। গত ১ আগস্ট সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায় আহাদ আলম শুভ মিয়া নামের এক যুবককে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। ৪ আগস্ট ফতুল্লার গাবতলী এলাকার সিসি ক্যামরায় দেখা গেছে ওয়াসিফ গাউসিল উৎস বড় একটি ছোরা নিয়ে একটি গলি থেকে উত্তেজিত অবস্থায় বের হয়ে আসতে। সাথে ছিল অনুগামী আরো কয়েকজন। কয়েক মিনিট পর উৎস আবারও অনুগামীদের সাথে নিয়ে সেই গলিতে ঢুকে। ওই ঘটনার পর স্থানীয় নিজামের মা নূরজাহান বেগম ফতুল্লা মডেল থানায় অভিযোগ দেন। তিনি অভিযোগ করেন, উৎস ১০ থেকে ১৫ জন নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ৪ আগস্ট নিজামকে ধাওয়া করে। এ সময়ে প্রতিপক্ষের কাছে দেশীয় অস্ত্র ছিল। গত ১ এপ্রিল ফতুল্লার দেওভোগ আদর্শনগর কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা শরিফ হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। নিহত শরিফের বাবা আলাল মাতব্বর জানান, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য শাকিল ও লালনসহ কয়েকজন শত্রুতার জেরে তার একমাত্র ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। তিনি ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। গত ২০ জানুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে দেশীয় তৈরি অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাংয়ের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব-১১। বয়সে কিশোর হওয়ায় আটককৃতদের নাম প্রকাশ করেনি র্যাব। গত ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শহরের চাষাঢ়ায় রেলস্টেশন সংলগ্ন সড়কে সাংবাদিকের ছেলে হামিমকে চাষাঢ়ার ডাকবাংলোর বিপরীতে সড়কে ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সী ১০-১২ জন সন্ত্রাসী এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। পরে হামিম ডাকবাংলোর মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের কাছে আশ্রয় নেয়। সেখানেও ওই হামলাকারী সন্ত্রাসীরা এসে তাকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। গত বছরের ৬ নভেম্বরের আগে ফতুল্লায় অস্ত্র ও গুলিসহ নারী পোশাক শ্রমিকদের নিয়মিত উত্ত্যক্তকারী গ্যাংস্টার গ্রæপের ৫ সদস্যকে আটক করে র্যাব-১১। তাদের দেহ তল্লাশি করে উদ্ধার করা হয় একটি বিদেশী পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ১২ রাউন্ড পিস্তলের গুলি ও ৫টি রামদা। ২৪ অক্টোবর র্যাব-১১ ফতুল্লা থানার উত্তর ইসদাইর গাবতলী এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে নারীদের উত্ত্যক্তকারী গ্যাংস্টার গ্রুপের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করে। কিশোর গ্যাংদের নৃশংস হামলায় অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন আবার অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। গত বছরের ৩ অক্টোবর শত্রুতার জেরে দুই শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে মোবাইল ফোন সেট ও গলার চেন ছিনিয়ে নেয় বন্দরের কিশোর গ্যাং গ্রæপের সদস্যরা। ৪ আগস্ট বন্দরের অলিপুরা কবরস্থান এলাকায় শত্রুতার জেরে জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক নামের এক যুবককে পিটিয়ে ও গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করে তিন কিশোর। ২৩ আগস্ট ফতুল্লার বাবুরাইলে সালমান হোসেন অপু (৩০) নামের যুবককে বাড়ি থেকে ডেকে এনে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে আসামি পারভেজ (২৮)। ২৭ জুলাই ফতুল্লার দেওভোগ হাশেম নগর এলাকায় মোটর সাইকেলের লাইটের আলো চোখে পড়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে শাকিলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ৩১ জুলাই ফয়সাল (১৯) নামে কিশোর শহরের খানপুর বরফকল এলাকায় বান্ধবীর মোবাইল ফিরিয়ে দিতে গেলে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে ৫ কিশোর। ২২ আগস্ট গোলাকান্দাইল এলাকায় সন্ত্রাসীরা জিসান হোসেনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হলে পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। চলতি বছরের ৪ মার্চ সিদ্ধিরগঞ্জে ১০ম শ্রেণীয় শিক্ষার্থী সিমান্তর ওপর কিশোর গ্যাং গ্রæপের সন্ত্রাসী পানি আক্তার বাহিনীর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার বাদি ও সাক্ষীদের হুমকি দিচ্ছে আসামি ও তার স্বজনরা। গত মঙ্গলবার দুপুরের এসও কমিনিটি পুলিশের কার্যালয়ে মামলার বিস্তারিত তদন্ত করতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেহেদী ইমরান ঘটনাস্থলে গেলে বাদি পক্ষ এ অভিযোগ করে।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন জানান, ইতোমধ্যেই ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ কিশোর গ্যাংয়ের বেশ কিছু সদস্যকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, প্রতিটি পাড়া-মহল্লার কিশোর গ্যাং সদস্যদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং অচিরেই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
ওসি আসলাম হোসেন আরো জানান, কিশোর গ্যাং ক্যাডারা অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক। অভিভাবকদের দায়িত্বহীনতার কারনে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি সন্তান কখন কোথায় কাদের সাথে মিলা মিশা করছে, স্বাভাবিক অবস্থা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে কিনা, আচার আচারনে কোন পরিবর্তন আসছে কিনা এসকল বিষয়ে নজর দারি করাসহ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য অনুরোধ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন