বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অপেক্ষায় ৭৪৯২ বেসরকারি হাসপাতাল

লাইসেন্স নবায়নের নির্ধারিত সময় শেষ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স বা নিবন্ধন নবায়ন সম্পন্ন করতে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় গঠিত টাস্কফোর্স নির্ধারিত সময় শেষ হয়েছে গতকাল। এই সময়ের মধ্যে লাইসেন্স নবায়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল শাখায় ১২ হাজার ১১টি আবেদন জমা পড়েছে এবং ৪ হাজার ৫১৯ টি লাইসেন্স নবায়ন সম্পন্ন হয়েছে। অর্থাৎ নবায়নের জন্য অপেক্ষমান লাইসেন্স এর সংখ্যা ৭ হাজার ৪৯২ টি।

গত ২৬ জুলাই কোভিড-১৯ বিষয়ক শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরপর ৮ আগস্ট টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় সভায় বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাশপাশি সেই সভা শেষে ট্রাস্কফোর্সেও পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২৩ আগস্টের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে যারা নবায়নে ব্যর্থ হবে তাদের হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে।

অধিদফতরের হাসপাতাল শাখা সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ আগস্ট টাস্কফোর্সের ঘোষণার পর থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত মোট ১২ হাজার ১১টি আবেদন জমা পড়েছে। এ পর্যন্ত যেসব প্রতিষ্ঠান অবেদন করেছে তারমধ্যে ৩ হাজার ৫৯১টি প্রতিষ্ঠানের কাগজ-পত্র যাচাইয়ে অপেক্ষা আছে। তিন হাজার ৯টি প্রতিষ্ঠানের কাগজ-পত্রে ত্রুটি থাকায় তাদের পুণরায় সব ঠিক করতে সময় দেয়া হয়েছে। দুই হাজার ৬২৮টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের অপেক্ষায় রয়েছে, এক হাজার ৫৯৮টি প্রতিষ্ঠানের পরিদর্শণ রিপোর্ট সম্পন্ন হয়েছে। সব নিয়ম-নীতি সম্পন্ন করে ৪ হাজার ৬০৭টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ণ সম্পন্ন হয়েছে। তবে ত্রুটিপূর্ণ বা অসম্পূর্ণ আবেদন, দেরিতে আবেদন ইত্যাদি কারণে নির্ধারিত সময়ে লাইসেন্স নবায়ণ করতে না পারা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭ হাজার ৪৯২টি।

এ বিষয়ে অধিদফতরের হাসপাতাল শাখা সূত্রে জানা গেছে, ট্রাস্কফোর্সের ঘোষণার পর বেসরকারি হাসপাতালগুলো লাইসেন্স নবায়নে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এর আগে বেশিরভাগ হাসপাতাল, ক্লিনিক লাইসেন্স নবায়নে অনগ্রহী ছিল। এমনকি এখনো বারডেম এর মতো প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স নবায়নের সব কাগজ-পত্র দিতে পারেনি। তাছাড়া অধিদফতরেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সারাদেশের ১৫ হাজারের বেশি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়গনস্টিক প্রতিষ্ঠান দেখা-শোনার জন্য এই শাখায় পরিচালক থেকে শুরু করে মেডিকেল অফিসার মিলিয়ে মোট কর্মকর্তা ১১ জন। যারমধ্যে একজন পরিচালক, দুজন উপ-পরিচালক, তিনজন সহকারি পরিচালক এবং ৫ জন মেডিকেল আফিসার রয়েছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালনায় এই লোকবল যথেষ্ট নয়। তাছাড়া যারা আবেদন করেছে তারা সবাই ভিন্নি ভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিষযটি তেমন নয়। কোন কোন হাসপাতালের পক্ষ থেকে একাধিক আবেদন করা হয়েছে। যেমন-হাসপাতালের জন্য একটি, ডায়াগনস্টিকের জন্য একটি, বøাড থাকলে সেটির জন্য একটি ইত্যাদি

জানা গেছে, প্রতি বছর লাইসেন্স নবায়ন করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান সেটি মানতো না। ফলে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বড় একটি অংশ লাইসেন্স নবায়র ছাড়াই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতো। কিন্তু করোনা চিকিৎসায় যুক্ত রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠেলে দেখাযায় প্রায় ৬ বছর ধরে হাসপাতালটির লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। এরপর স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে অভিযান পারিচালনা শুরু হলে দেখা যায় বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতালেরই বিগত ৩/৪ বছরের লাইসেন্স নবায়ণ করা নেই।
অধিদফতরের হাসপাতাল শাখা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন ফি এবং নিবন্ধন নবায়ন ফি ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার ও সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর ৪ হাজার ২০০ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার লাইসেন্স নবায়নের আবেদন করলেও বাকি ১১ হাজারের বেশি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক নিবন্ধন ছাড়াই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে। প্রতি বছর ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স নবায়নের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিস্তারিত বিবরণ, সিটি কর্পোরেশনের ছাড়পত্র, কর সার্টিফিকেট এবং অন্যান্য নথি প্রয়োজন পড়ে। নিবন্ধন নবায়ন করতে এসব হাসপাতালকে নিয়মিত নোটিশ দেয়ার পাশাপাশি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কিন্তু বেশিরভাগ হাসপাতাল প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র আপডেট না থাকায় তারা লাইসেন্স নবায়ণ করতে চায় না।

গত ২৬ জুলাই কোভিড-১৯ বিষয়ক শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ও আক্রান্ত রোগীদের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা প্রদান নিশ্চিতকরণে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এ পর্যন্ত জারিকৃত পরিপত্র, প্রজ্ঞাপন, আদেশ, নির্দেশনা ও যেসব কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের কার্যক্রম বাস্তবায়ন অগ্রগতি তদারকি করতে একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (জনস্বাস্থ্য) মোস্তফা কামলকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি জানা সত্তে¡ও স্বাস্থ্য অধিদফতর হাসপাতালটির সঙ্গে চুক্তি করার বিষয়টি সম্প্রতি জনসম্মুখে আসে। এরপর থেকেই লাইসেন্স নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন