শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সারাদেশে সোনালি আঁশের উৎপাদন আশানুরূপ, মূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তা চাষিদের

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০২০, ৬:৩২ পিএম

এবার সারাদেশে সোনালী আঁশ পাট আবাদ ও উৎপাদন হয়েছে আশানুরূপ। পাট পচানোর ন্যুনতম দুশ্চিন্তা নেই। নদী, খাল-বিলে ভরপুর পানি থাকায় পাটের আঁশ ও রং হচ্ছে সুন্দর। আর কয়েকদিনের মধ্যেই বাজারে উঠবে নতুন পাট। পাটচাষিদের এখন সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা উপযুক্ত মূল্য নিয়ে।

কৃষি সম্প্রসারণের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুল মুঈদ সোমবার দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, চলতি মৌসুমে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭লাখ ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে। প্রকৃতপক্ষে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার ২হাজার হেক্টর বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে মোট ৭লাখ ২৭হাজার হেক্টর জমিতে। পাটের ফলনও খুবই ভালো হয়েছে। তাতে ৬৮লাখ বেল পাট উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি বললেন, সবচেয়ে খুশির খবর পাটের জীবন রহস্য উম্মোচনের পর এবারই প্রথম পাট অধিদপ্তর ’ও’ ৯৮৯৭, বিজেআরআই-৮ ও রবি-১ জাতের তোষা পাটের জাত উদ্ভাবন করেছে। এই বীজ ব্যবহার শুরু হয়েছে। ফলনও ভালো হচ্ছে। সময়কালও লাগছে কম। ১শ’দিনেই পাট উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, দেশে পাট বীজের চাহিদা সাড়ে ৫হাজার মেট্রিক টন। যা ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। ভারতের বীজের উপর নির্ভরতা থাকায় পাট আবাদ ও উৎপাদনে নানামুখী সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক সময় ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত বীজে ভেজাল থাকে। তাছাড়া কোন কারণে যদি বীজ পাঠানো ভারত বন্ধ করে দেয় তবে পাট আবাদ ও উৎপাদন মার খাবে। সেজন্য বীজের ক্ষেত্রে তাদের উপর নির্ভর করা যাবে না। আমাদের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে, বিএডিসি, পাট অধিদপ্তর, বিজেআরআই ও কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটকে কাজে লাগিয়ে উন্নতমানের পাটবীজ উৎপাদনের।

কৃষি সম্প্রসারণ সুত্র জানায়, পাটের ফলনে স্মরণকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে এবার। উপযোগী রোদ ও বৃষ্টিসহ সার্বিক আবহাওয়া ছিল পাট আবাদ ও উৎপাদনের অনুকুলে। পাটচাষি যশোরের শার্শা উপজেলার মোঃ আলম বললেন, একবিঘা জমিতে চাষ, বীজ, পরিচর্যা, কাটা, পচানো, আঁশ ছড়ানো, শুকানো ও বিক্রির জন্য পরিবহনসহ সর্বসাকুল্যে খরচ হয় প্রায় ১৪হাজার টাকা। একবিঘায় পাট হয় সাধারণত সাড়ে ১২মণ। মূল্য কমপক্ষে প্রতিমণ ২৫শ’ থেকে ৩হাজার হলে চাষিরা লাভবান হবেন।

পাট ব্যবসায়ী মফিজুর রহমান বললেন, পাট উঠার সময় দাম পড়ে যায়। এবারও তেমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বাজার বর্তমানে দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় নেমেছে। পাটকলে বিশৃঙ্খলা ও পাট বাজারে অস্থিরতা থাকায় পাটচাষিরা মূল্য নিয়ে দারুণ দুশ্চিন্তায় আছেন। তাদের কথা, খেটেখুটে পাট উৎপাদন ভালো করলাম। কিন্তু উপযুক্ত মূল্য না পেলে সমস্যা, বিশেষ করে আগের মতো আগ্রহ হারিয়ে যাবে। তাই জরুরিভাবে পাটের মূল্যের বিষয়টি নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন পাটচাষিরা।

জাতীয় কৃষক সংগ্রাম সমিতি যশোরসহ বিভিন্নস্থানে পাটের মূল্য প্রতিমণ ৩হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে মানববন্ধন করেছে। সূত্রগুলো জানায়, পাটের আবাদ ও উৎপাদনে সোনালী আঁশের স্বর্ণযুগ ফেরার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু চাষিদের কথা স্বর্ণযুগের স্বপ্নভঙ্গের আশংকা থাকছে মূল্যের কারণে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক পার্থ প্রতিম সাহা বললেন, পাটের উৎপাদন খুবই ভালো হয়েছে। তার কথা, মূল্যের বিষয়টি আমরা দেখি না। ওটি দেখে পাট অধিদপ্তর। তবে চাষিরা যাতে উপযুক্ত মূল্য পান সেদিকে সবরাই খেয়াল রাখতে হবে। কয়েকজন পাটচাষি ও কৃষি কর্মকর্তা বললেন, দুর্ভাগ্য হলো নতুন পাট বাজারে উঠার সময় চাষিরা উপযুক্ত মূল্য পান না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন