রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক লিমিটেড আগামী এক বছরের মধ্যে ক্যাশলেস লেনদেন ব্যবস্থার পুরোপুরি বাস্তবায়ন করবে। সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ব্যাংকটি। ইতোমধ্যে চালু করা হয়েছে অ্যাপসের মাধ্যমে ঘরে বসে হিসাব খোলার উপায়ও। অ্যাপসের মাধ্যমে হিসাব খুলে সাধারণ লেনদেনের পাশপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সেবামূল্য পরিশোধ করা যাচ্ছে। অ্যাপসের মাধ্যমে খোলা হিসাবে জমা হয়েছে ১৬ কোাটি টাকা। এছাড়া আগামী বছরের মধ্যে সোনালী ব্যাংক সবদিক থেকে দেশের এক নম্বর ব্যাংক হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। গতকাল সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. আতাউর রহমান প্রধানের যোগদানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মো. আতাউর রহমান বলেন, ক্যাশলেস লেনদেন ব্যবস্থা শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড ও অ্যাপসভিত্তিক লেনদেন ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ব্যাংকে না গিয়েও যাতে গ্রাহক সব ধরনের লেনদেন ও সেবা পেতে পারে আমরা সেই কার্যক্রম বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। সারাদেশে আমাদের ১ হাজার ২২৪টি শাখায় এখন অনলাইন লেনদেন হচ্ছে।
গত এক বছরে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, ব্যাংকের ২০১৯ সালের জুলাইয়ের তুলনায় চলতি বছরের জুলাই শেষে মুনাফা বেড়েছে ২৭ শতাংশ বা ১ হাজার ৩৫ কোটি। পরিচালন মুনাফার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৮ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে আমানত ৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। একই সঙ্গে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির লোকসানি শাখা ৫৮টি থেকে কমে ৫০টি তে নেমেছে।
মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ২০১৯ সালে ডিসেম্বর শেষে সোনালী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। তবে চলতি বছরের জুলাই শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। সুতরাং এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকের খেলাপি কমেছে এক হাজার ৪৬০ কোটি বা ১৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। খেলাপি ঋণ থেকে আদায় হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি বা আইটি খাতকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সোনালী ব্যাংক। করোনাকালীন পাঁচ মাসে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে সোনালী ব্যাংক পাঁচ বছর এগিয়ে গেছেন বলে মনে করেন তিনি। এরইমধ্যে ব্যাংকের সব শাখায় অনলাইন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করতে ইতোমধ্যেই অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী মাসে পূর্ণাঙ্গ আকারে এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু হবে।
তিনি বলেন, সেবার পাশাপাশি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, পেনশনভোগীদের অর্থ দেয়ার কাজ করছে সোনালী ব্যাংক। করোনা ভাইরাসের কারণে এসব উপকারভোগীদের ব্যাংকে না এসেও সরাসরি অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে প্রায় ৭শ’ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। আমরা কয়েকটি ঋণ টেকওভার করেছি। যেসব ঋণগ্রহিতাদের প্রতিষ্ঠান লাভজনক রয়েছে। আমরা ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে ভালো টাকা ফেরত পাচ্ছি। সবচেয়ে বড় সরকারি ব্যাংক হিসেবে আমাদের যা কিছু অর্জন সম্ভব হয়েছে তার পুরো কৃতিত্ব ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ ও সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। সবার নিরলস প্রচেষ্টায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, মহামারী করোনার কারনে ক্ষতিগ্রস্থ অর্থনীতি খাতকে সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে কাজ করছে দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংকটি। শিল্পখাতে বরাদ্দের ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকার ৭২ ভাগই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে দেয়া এক হাজার কোটি টাকা। সরকারের ঘোষিত এক লাখ তিন হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে অন্যান্য ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কাজ করছে।
আলোচিত হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর সোনালী ব্যাংকে তেমন কোনো বড় অনিয়ম হয়নি দাবি করে আতাউর রহমান প্রধান বলেন, হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর বড় অনিয়ম হয়নি; তবে হলমার্কের কাছ থেকে উল্লেখ করার মতো এখনও কোনো টাকা আদায় হয়নি। অর্থঋণ আদালতে তাদের সকল জমিজমা এবং সম্পদের ওপর মামলা চলছে। আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে খুব দ্রুত হলমার্কের টাকা আদায়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ সময় ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান অথনৈতিক কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন