শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০২০, ১২:০২ এএম

‘গাহি সাম্যের গান/ মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান...’। এভাবেই মানবতার জয়গান গেয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি তার গানে, কবিতায় ইসলামের মহিমাকে যেমন তুলে ধরেছেন তেমনি তার রচনায় বিদ্রোহী চেতনার অসামান্য রূপায়ণ ঘটেছে। প্রেম-প্রকৃতি ও নৈসর্গিক সৌন্দর্যবোধও তার লেখনিতে প্রতিফলিত হয়েছে।
কাজী নজরুল ইসলাম দ্রোহের কবি প্রেমের কবি। প্রেম ও প্রতিবাদের বাণী ও সুর দিয়ে বাংলা সাহিত্য ও সংগীতে নতুন মাত্রার সৃষ্টি করেছেন। বাংলা সাহিত্যের সেই বিষ্ময়কর প্রতিভা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গতকাল ছিল ৪৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের এই দিনে (১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র) তিনি ঢাকায় পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) তিনি ইন্তেকাল করেন। গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় মানুষ তাকে স্মরণ করেছে।

নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে। এ বছর করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব মেনে এবং ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে কবি প্রেমী ও দেশের বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কবির মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছেন।

জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন। বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান কবি পরিবারের সদস্যরা। শ্রদ্ধা জানান কবির ভক্ত ও অনুরাগীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সকাল সাড়ে ৯ টায় এর পর বিএনপির পক্ষ থেকেও কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানায় নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সকালে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ছাড়াও ফাতেহা পাঠ ও আলোচনার আয়োজন করা হয়।

জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে। সকাল ৯টায় বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বেলা ১১টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
কবি নজরুল তার প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে এদেশের মানুষকে মুক্তিসংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছেন, জাগ্রত করেছেন বাঙালি জাতীয়তাবোধ। বিদ্রোহী কবির অগ্নিঝরা কবিতা ও গান মহান মুক্তিযুদ্ধে ছিল অনন্ত প্রেরণার উৎস।

দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হয়েও কবি কখনো আপস করেননি। মাথা নত করেননি লোভ-লালসা, খ্যাতি, অর্থ, বিত্ত-বৈভবের কাছে। আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য। মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার পক্ষে কলম ধরেছেন নির্ভীক চিত্তে। তার রচিত ‘চল্ চল্ চল্’ গানটি আমাদের রণসংগীত।
তিনি লেখাতে যেমন বিদ্রোহী, তেমনি জীবনেও। ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কুমিল্লা থেকে ফেরার পথে নজরুল দুটি বৈপ্লবিক সাহিত্যকর্মের সৃষ্টি করেন। একটি হচ্ছে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ও অপরটি ‘ভাঙ্গার গান’। ১৯২২ সালে তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ অগ্নিবীণা প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতাই বাংলা কাব্যে নতুন বাঁক সৃষ্টি করেছিল।

শুধু কবিতাতেই নয়, গান রচনায় নজরুল অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি প্রায় তিন হাজার গান রচনা ও সুর করেছেন। নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন ধ্রæপদি ধারার সঙ্গে। রাগনির্ভর গানকে ভেঙেচুরে সাধারণের কাছে সহজবোধ্য ও শ্রæতিমধুর করেছেন। এক রাগের সঙ্গে অন্য রাগের মিলন ঘটিয়ে সংগীতে এক নতুন ধারার সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন অন্যবদ্য ইসলামী গজল এবং হামদ নাত।
ছোটগল্প, উপন্যাস, গান, নাটক লিখলেও মূলত কবি হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। আজীবন বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গি আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠের কারণে তিনি ভ‚ষিত হন ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে। তিনি তার কবিতার বাণীতে তুলে ধরেন নিপীড়িত মানুষের কথা। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সর্বদাই সোচ্চার ছিলেন নজরুল।

কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ মে) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে। বাবা কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। ১৯৭২ সালের ২৪ মে স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। তাকে দেওয়া হয় জাতীয় কবির মর্যাদা। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাজী নজরুলকে ডিলিট উপাধিতে ভ‚ষিত করে। একই বছরের ২১ ফেব্রæয়ারি তাকে দেয়া হয় একুশে পদক। কবির জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে তৎকালীন পিজি হাসপাতালে। ৭৭ বছর বয়সে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কবি নজরুল তার কবিতায় লিখেছেন, ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই/যেন গোরের থেকে মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই’। সেই বিবেচনাতেই কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করা হয়।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন