সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী সিদ্ধান্তে বিদ্যুতে সুফল

| প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০২০, ১২:০২ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর প্রথমেই দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি মিটাতে উদ্যোগী হন। রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দিয়ে বিদ্যুতের ব্যাপক ঘাটতি পূরণের সিদ্ধান্ত নেন। তখন এ নিয়ে দেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। খরচ বেশি, মানুষের ওপর দামের বোঝা চাপিয়ে দেয়াসহ নানা কথা বলা হয়। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব সমালোচনায় কান না দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর জোর দেন এবং আরও অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র, পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপক প্রকল্প গ্রহণ করেন। বর্ণিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে না এলেও অন্যান্য উৎস থেকে আসা বিদ্যুতে দেশ এখন সমৃদ্ধ হয়েছে। চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জিত হয়েছে। টার্গেট নেয়া হয়েছে ২০২১ সালের মধ্যে দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা। এ টার্গেট পূরণ এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তব রূপ লাভ করছে। শতভাগ বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে অটল-অবিচল ছিলেন এবং দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন, তা এখন দেশের মানুষ বুঝতে পারছে। শুধু তাই নয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে একটা সময় মানুষের কাছে কল্পনার বিষয় বলে মনে হলেও প্রধানমন্ত্রী তার ভিশন এবং মিশনের মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত করেছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণতা, দূরদর্শীতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দৃঢ়তার কারণেই দেশ আজ যেমন শতভাগ বিদ্যুতায়নের দ্বারপ্রান্তে, তেমনি ডিজিটাল বাংলাদেশও বাস্তবে রূপ নিয়েছে।

সরকার গঠনের শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুতের উৎপাদন এবং এর সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে আপসহীন ছিলেন। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সবধরনের পদক্ষেপ ও প্রকল্প নেয়ার পাশাপাশি যে দেশ থেকে কমমূল্যে বিদ্যুৎ আমদানি করা যায়, সে ব্যবস্থাও করেছেন। এ নিয়েও কম সমালোচনা হয়নি। এখন দেখা যাচ্ছে, তাঁর এ সিদ্ধান্ত সঠিক এবং যথাযথ ছিল। তিনি কমমূল্যে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করার ব্যবস্থা করেছেন। এখন নেপাল ও ভুটান থেকেও কমমূল্যে বিদ্যুৎ আমদানির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বিদ্যুতের যে অপরিহার্যতা তা যেখান থেকে কমমূল্যে পাওয়া যাবে, সেখান থেকে আনাই যুক্তিযুক্ত। এখন আমাদের দেশই চাহিদাতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করে রপ্তানির দিকে ধাবিত। বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২০ হাজার ৮১৩ মেগাওয়াট। উৎপাদিত হচ্ছে ১২ হাজারের বেশি। অদূর ভবিষ্যতে আমরা বিদ্যুৎ রপ্তানির পর্যায়ে চলে যেতে পারব। যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের বিকল্প নেই। এ দুটি উপাদান না থাকলে সবকিছুই অচল হয়ে পড়ে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দ্রুতায়িত করতে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহী হয়ে উঠেছে। চীন, জাপানের মতো অর্থনৈতিক পরাশক্তিগুলো বিনিয়োগের জন্য ছুটে আসছে। তারা আসছে এ কারণে যে, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য যে ধরনের পরিবেশ এবং অবকাঠামোর প্রয়োজন, তার সবকিছুই রয়েছে। পাশাপাশি সস্তা শ্রম, বিদ্যুতের সাশ্রয়ী মূল্য, কম উৎপাদন খরচ ইত্যাদি নানা সুবিধার কারণে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আবার সস্তা শ্রম হলেও গ্যাস-বিদ্যুতের সুবিধা না থাকলে, তা কাজে আসে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বড় বড় কোম্পানি সরে আসার অন্যতম কারণ সেসব দেশে শ্রমমূল্য ও বিদ্যুতের দামসহ উৎপাদন খরচ অত্যন্ত বেশি। ফলে তারা যেসব দেশে উৎপাদন ব্যয় কম, সেসব দেশে চলে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ তাদের কাছে বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত আকর্ষর্ণীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, সরকার বিনিয়োগের জন্য যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে, সেগুলোর মধ্যে ইতোমধ্যে ১৭টি চালু হয়েছে এবং বাকিগুলোর বেশিরভাগই দ্রুরণেই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশেকে বিনিয়োগের ‘হাব’ বা উত্তম স্থান হিসেবে বিবেচনা করছে। শুধু তাই নয়, চাহিদামতো বিদ্যুৎ পাওয়ায় দেশের বিদ্যমান শিল্পকারখানাগুলোর উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর অন্যতম কারণই হচ্ছে, এখানে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুতের সহজলভ্যতা।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে বিদ্যুতের বিকল্প নেই। এটি ছাড়া উৎপাদন ও উন্নতির কথা চিন্তাই করা যায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুরু থেকেই বিষয়টি উপলব্ধি করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে মনোযোগী হয়ে বিনিয়োগের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন। যার সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। দেশের মানুষ যেমন চাহিদামতো বিদ্যুৎ পাচ্ছে, তেমনি বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগে ছুটে আসছে। দেশের অগ্রযাত্রা বেগবান করতে বিদ্যুতের নিরবিচ্ছিন্ন সরবারাহ অপরিহার্য। দেশের উৎপাদনের পাশাপাশি ভারত থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ আমদানি করে বিদ্যুতের এই নিরবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া ধরে রাখা হয়েছে। আমরা মনে করি, সরকারকে এ বিবেচনাও করতে হবে, নেপাল ও ভুটান থেকে আরও সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ আমদানি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে ভারতের ভূখন্ডের উপর দিয়ে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের অনুমতির বিষয়টি অন্তরায় হয়ে আছে। বিদ্যুৎ আমদানি যদি বাড়াতে হয়, তবে এ নিয়ে ভারতের সাথে সরকারের আলোচনা করে এ বাধা দূর করে নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি সম্ভব করে তুলতে হবে। অন্যদিকে দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের সঞ্চালন ব্যবস্থাও যথাযথ হওয়া বাঞ্চনীয়। অনেক সময় দেখা যায়, সঞ্চালন ব্যবস্থার ত্রুটি থাকায় উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। কাজেই বিদ্যুৎ শুধু উৎপাদন করলেই হবে না, তার সরবরাহ ব্যবস্থাও মসৃন করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন