পূর্ব ভূমধ্যসাগরে অশোধিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস তোলা নিয়ে গ্রিস ও তুরস্কের মধ্যে বিরোধ ক্রমশ জটিল আকার নিচ্ছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতেই রোববার থেকে উত্তর সাইপ্রাসে বার্ষিক সামরিক মহড়া শুরু করল তুরস্ক। এদিকে, আলোচনায় বসতে রাজি না হওয়ায় গ্রীসের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান।
গ্রিসের সঙ্গে তুরস্কের সাম্প্রতিক বিরোধের কারণে এই মহড়া বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। তুরস্ক গতমাসে তেল ও গ্যাস খোঁজার জন্য একটি অনুসন্ধানী জাহাজ গ্রিস ও সাইপ্রাসের মধ্যবর্তী এলাকায় পাঠিয়ে দিয়েছে। তুরস্কের দাবি, ওই এলাকা তাদের জলসীমার ভিতর পড়ছে। এ নিয়ে প্রবল আপত্তি গ্রিসের। উত্তেজনা প্রশমনে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার সম্ভাবনাও ভেস্তে গেছে। ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল এর আগে জানিয়েছিলেন, দুই দেশ আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে। কিন্তু তারপর তুরস্ক আলোচনায় রাজি থাকলেও গ্রিস জানায়, তারা আলোচনায় রাজি নয়। অন্যদিকে ফ্লান্স জানিয়েছে, ইইউ কাউন্সিলের বৈঠকে তুরস্কের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
গ্রিসকে হুঁশিয়ারি দিয়ে গত শনিবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান বলেন, ‘গ্রিস হয় রাজনীতি ও কূটনীতির ভাষা বুঝবে, না হয় তাদের মাটিতে বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হবে। তুরস্কের জনগণ সব ধরনের সম্ভাবনার জন্য তৈরি।’ আর তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘আমাদের এবং টার্কিশ রিপাবলিক অফ নর্দার্ন সাইপ্রাসের সামরিক অগ্রাধিকার একই।’ তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়ও জানিয়েছে, মহড়া সাফল্যের সঙ্গে চলছে।
ফ্রান্স ইতিমধ্যেই গ্রিসের সমর্থনে সেখানে ফাইটার জেট পাঠিয়ে দিয়েছে। এই অবস্থায় এরদোগান বলেন, গ্রিসের সঙ্গে আঞ্চলিক বিরোধ নিয়ে ইইউ যেন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে ইইউ’র প্রেসিডেন্টের অনুরোধ, এরদোগান যেন এমন কিছু না করেন, যার ফলে এলাকায় উত্তেজনা বাড়ে। বৈঠকে সব প্রস্তাব নিয়েই আলোচনা হবে বলে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন।
আগামী ২৪-২৫ সেপ্টেম্বর ইইউ কাউন্সিলের বৈঠক। ফ্রান্স জানিয়ে দিয়েছে, সেখানে তুরস্কের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে রোববার এরদোগান ফোন করেছিলেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টকে। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের দাবি, ইইউ যেন নিরপেক্ষ মনোভাব দেখায়। তিনি রোববার অভিযোগ করেছেন, ইউরোপের রাজনীতিবিদরা যে ধরনের উস্কানিমূলক বিবৃতি দিচ্ছেন, তা দেখা মনে হচ্ছে, তারা সমস্যার সমাধান চান না।
প্রসঙ্গত, পূর্ব ভূমধ্যসাগর থেকে তেল উত্তোলন নিয়ে এই বিরোধের সূচনা। গ্রিস এবং সাইপ্রাসও ওই এলাকাকে নিজেদের বলে দাবি করেছে। তেল উত্তোলনের জন্য ড্রিলিং পরিচালনা করে তুরস্ক তাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ দেশ দুটির। এর জেরে বিতর্কিত অঞ্চলটিতে তিন পক্ষই তাদের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করে যাচ্ছে। গত মাসে তুরস্ক আর গ্রিসের ফ্রিগেটের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটনাও ঘটেছে। সূত্র: এপি, এএফপি, রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন