মাদকের কারণে সমাজে নানা ধরনের অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। মাদকের উৎস খুঁজে বের করার পাশাপাশি কারবারী ও নেপথ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গত সপ্তাহে রাজধানীতে মাদক নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকায় গড়ে প্রতিমাসে মাদক সংক্রান্ত দেড় হাজার মামলা রুজু হয়। কিন্তু বেশিরভাগ মামলার তদন্তেই মাদকের উৎস খুঁজে বের করা হয় না। শুধু সরবরাহকারী বা খুচরা বিক্রেতাকে অভিযুক্ত করেই মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ করা হয়। একারণে মাদকের সরবরাহ কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না বা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। একজন সরবরাহকারী পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে মাদক ব্যবসায়ীরা অর্থের বিনিময়ে আরেকজন সরবরাহকারী নিয়োগ করে থাকে।
গতকাল ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। মাদক সরবরাহের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হলেও নেপথ্যে জড়িত বা মাদকের উৎস সব সময় খুঁজে পাওয়া যায় না। আমি আজকে একজন ক্যারিয়ারকে ধরলাম, কাল সে আরও বেশি টাকা দিয়ে আরেকজন ক্যারিয়ার ঠিক করলো। আসলে মাদকে যে ব্যক্তি বিনিয়োগ করছে তার কাছে পৌঁছাতে না পারলে শুধু ক্যারিয়ার বা বহনকারী ধরে কোনও লাভ হবে না। সেজন্যই আমরা যতদূর যেতে পারি সেটা এনসিওর করতে কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছি।
মোহা. শফিকুল ইসলাম আরো বলেন, আমরা যে কোনও মূল্যে মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে বদ্ধপরিকর। একারণে তদন্তে নতুন ডাইমেনশন আনার চেষ্ট করছি। মামলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিনিয়র অফিসার ইনভলভ হচ্ছে, ডিবির অফিসার ইনভলভ হচ্ছে। ইনভলভ হয়ে মাদক মামলার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। সে কোথায় মাদক পৌঁছে দিতে চেয়েছিল এবং কার কাছ থেকে মাদক এনেছে, রাস্তায় কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, সবগুলো বিষয় নিয়ে কাজ করছি। যেকোনও মূল্যে মাদক সরবরাহ ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনতে চাই। এ জন্য আমরা সর্বোচ্চ পদক্ষেপ গ্রহন করছি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এতদিন মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বেশিরভাগ সময় ক্যারিয়ার বা সরবরাহকারীদের ধরা হতো। এরপর মামলা হলেও ওই মাদক মামলায় মূল বিনিয়োগকারী বা মাদকের উৎসমূলে যাওয়ার প্রবণতা ছিল অনেক কম। মাদকের সঙ্গে গ্রেফতার ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয়া হতো। মাদক মামলা নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের নতুন নির্দেশনার পর তদন্তে মাদকের সঙ্গে জড়িত সব পক্ষকে শনাক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। একই ধরনের কাজ করছেন ডিএমপির সকল ডিভিশনের কর্মকর্তারা।
ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মাদক মামলায় গ্রেফতার আসামিদের জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নম্বর, নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে ক্রিমিনাল ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা সিডিএমএস, এসআইভিএস বা ফিঙ্গারপ্রিণ্ট ইত্যাদি ব্যবহার করে পরিচয় শনাক্ত করতে হবে। একইসঙ্গে সব তথ্য সিডিএমএস-এ সংযোজন করে ও ছবিসহ পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল তৈরি করতে হবে।
এছাড়া সাক্ষীদের নাম-ঠিকানার সঙ্গে মোবাইল নাম্বার ও পুলিশ সাক্ষীদের ক্ষেত্রে বিপি নম্বর সংযুক্ত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মাদক উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে ক্রেতা পর্যন্ত প্রত্যেক ক্ষেত্রে কাকে মানি লন্ডারিং ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের কোন ধারায় অভিযুক্ত করতে হবে তাও উল্লখ করে দেয়া হয়েছে নির্দেশনায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন