সোনাগাজী, (ফেনী) উপজেলা সংবাদদাতা : ফেনী জেলার উপজেলা সোনাগাজীতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে।
জানা যায়, সোনাগাজীর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ও বড় ফেনী নদীর মোহনায় জেগে উঠা চরে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি স্থাপিত হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য প্রয়োজনীয় ২৫ হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে মাঠে কাজ করছে জরিপ বিভাগ। প্রথম দফায় আমিরাবাদ ও সদর ইউনিয়নে ৭ হাজার একর এলাকায় শিল্প-কারখানা স্থাপিত হবে। শিল্প স্থাপনের উপযোগী করার জন্য ইতোমধ্যে সাড়ে ৫ হাজার একর ভূমিতে কাজ শুরু হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলটি স্থাপিত হলে এখানে সৃষ্টি হবে ৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান। গড়ে উঠবে বিমান বন্দর, মিনি নৌবন্দর, বায়ু ও সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, অটোমোবাইলসহ ভারী শিল্প-কারখানা। খুলে যাবে অর্থনৈতিক নতুন দিগন্ত। স্থাপিত হবে ২শ’ শিল্প-কারখানা। প্রাথমিক পর্যায়ে এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। জেগে উঠা নতুন চর দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে থাকার পর পরিণত হতে চলছে শিল্পাঞ্চলে। ফেনী ০৩ আসনের সাংসদ সদস্য ও শিল্পমন্ত্রণালয় সম্পর্কীত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হাজী রহিম উল্যাহ জানান, বাঁকা নদী সোজা করার কারণে ও ছোট ফেনী নদীর ভাটিতে মুছাপুর রেগুলেটর স্থাপন করার ফলে সোনাগাজীর সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে জেড়ে উঠেছে সোনাগাজীর আয়তনের মত আরেকটি চরাঞ্চল। সাগর থেকে জোয়ারে আসা বালুতে ভরাট হয়ে প্রতিদিন সেখানে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন চরাঞ্চল। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্বাহী চেয়ারম্যান প্রবণ চৌধুরী ও পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন।
ফেনী জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সোনাগাজীর আমিরাবাদ সদর ইউনিয়নের ৬৯ নং থাক খোয়াজের লামছি মৌজার ১৫৪৩ একর, ৭০ নং চরখোয়াজের লামছি মৌজায় ১৮৮.৮৮ একর, ৯৪ নং খোন্দকার মৌজায় ১৯৬২ একর, ৯৪/১০৩ নং দক্ষিণ চরখোন্দকার মৌজায় ১৫৭৯ একর, ৯৩ নং বাহির মৌজায় ৬২৯ একর, ৩৩২ নং চররাম নারায়ন মৌজায় ১৩১৮ একর ভূমি নির্বাচন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৭৫০.৫৬ একর জায়গা চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ৫০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পর্কে ফেনী জেলা প্রশাসক মোঃ আমিনুল আহসান জানান, যে সব চরে এখনো জরিপের কাজ শুরু হয়নি সেগুলো পর্চা ম্যাপের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জরিপ হওয়া ভূমির মধ্যে ইতোমধ্যে প্রায় ৭০০০ একর জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার প্রস্তবা দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এলাকাটি মূলত সাগর থেকে জেগে উঠা চর। পরিবেশ ও বন সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সাধারণ মানুষ মনে করে যেখানে শিল্প গড়ে উঠে, সেখানে গাছ পালা কেটে ফেলা হয় আসলে তা ঠিক নয়। অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারণে এখানে পরিবেশের কোন ক্ষতি হবে না। এখানে শিল্প গড়ে উঠলে যাতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট না হয় সে জন্য গাছ লাগানো হবে। তৈরি করা হবে কৃত্রিম লেক। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্বাহী চেয়ারম্যান প্রবন চৌধুরী এ সময় আরো জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে এ অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। সরকারের বেধে দেয়া সময় ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্প-কারখানা নির্মাণের আশা করছি আমরা। এ দিকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিদর্শী সম্বোধী চাকমা জানান, ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব মনোয়ার হোসেন প্রস্তাবিত সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেন। বায়ু ও সৌর বিদ্যুতের জন্য ১৩৪৪ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। শিল্প অঞ্চলকে ঘিরে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে ২৪৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সোনাপুর থেকে সোনাগাজী হয়ে জোরারগঞ্জ সড়কের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে একনেক। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, সোনাগাজীর উপকূলীয় অঞ্চলে শিল্প কল-কারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণসহ যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্ন হচ্ছে। সূত্রে জানায়, সোনাগাজীতে প্রস্তাবিত শিল্প-কারখানা স্থাপন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও সোনাগাজীতে স্থাপন না করে পার্শ্ববর্তী মিরসরাই অঞ্চলে স্থাপনের একটি পাঁয়তারা চলছে বলে গুজব উঠেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন