বিশেষ সংবাদদাতা : রক্তাক্ত যুদ্ধে সার্বিয়া থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে কসভো স্বীকৃতি পেয়েছে ৮ বছর আগে। ২০০৮ সালে স্বাধীন হয়েও আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সদস্যপদ না পাওয়ায় দেশটি ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে করতে পারেনি প্রতিনিধিত্ব। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সদস্যপদ ২০১৪ সালে পাওয়ায় এবারই প্রথম অংশ নিয়েছে দলটি অলিম্পিকে এবং অলিম্পিকে অভিষেকেই স্বর্ণ জয়ে কসোভো করেছে ইতিহাস রচনা। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে দেশের হয়ে অংশ নিতে না পারায় আলবেনিয়ার হয়ে এসেছিলেন জুডোতে লড়তে, ৫২ কেজি ওজন শ্রেণিতে আলবেনিয়ার হয়ে সেবার জিতেছেন ব্রোঞ্জ। কষ্টটা এতোটাই পেয়েছিলেন যে, পদকটি আলবেনিয়ায় রেখে কসোভোয় এসেছিলেন কেলমেন্দি। ২৫ বছরের সেই নারী জুডোর হাত ধরেই অলিম্পিকে নিজেদের অভিষেকে বেজে উঠল কসোভোর জাতীয় সঙ্গীত।
২০১৪ বিশ্ব জুডো চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ২০১৫ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে নারী জুডোর ৫২ কেজি ওজন শ্রেণিতে শিরোপা জয়ে এই ইভেন্টের নাম্বার ওয়ান খেতাব নিয়েই রিও অলিম্পিকে কেলমেন্দি ছিলেন শীর্ষ বাছাই। রিও অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মার্চ পাস্টে দেশের পতাকা ছিল তার হাতেই। জুডোতে শুরুটাও করেছিলেন ফেভারিটের মতোই। সেমিফাইনালে জাপানের মিসাতো নাকামুরাকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেই স্বর্ণ জয়ের নেশায় হয়েছেন বিভোর এই নারী জুডোকার। রাশিয়ার নাতালিযাকে হারিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে ফাইনালে ওঠা ইতালীর ওদিতি গিওফ্রিদাকে স্বর্ণের লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ পেয়েই স্বপ্নটা ছুঁয়ে যায় তার আকাশে। তবে লড়াইটা হয়েছে প্রতিদ্ব›দ্বীতাপূর্ণ। মাত্র ১ পয়েন্ট পেয়ে স্বর্ণ জয়ের আনন্দে আবেগী হয়ে পড়েছেন কেলমেন্দি।
তার এই স্বর্ণ জয়ের দিনে আর একটি রেকর্ডও হয়ে গেছে। শততম দেশ হিসেবে এদিন অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়ে উঠে এসেছে কসভোর নাম। কসভোর হয়ে প্রথম অলিম্পিক স্বর্ণ জয়ের ইতিহাস রচনায় গর্বিত কেলমেন্দিÑ ‘আমি খুব খুশি। সত্যি কথা বলতে কি, আমি এখানে এসেছি স্বর্ণপদকের জন্য। দেশের জন্য এমন কাজ করতে পেরে আমি খুশি। এই প্রথম কসোভো অলিম্পিকের অংশ হলো, তাই এই স্বর্ণ জয় অনেক কিছু। কসভোর জনগণ এবং শিশুরা আমাকে বীর ভাববে।’ যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশটির নাগরিকদের বেঁচে থাকার লড়াইটিই যখন প্রথম, তখন দেশের জন্য এমন কিছু করতে পারার আনন্দ কেলমেন্দির কাছে অন্যরকমÑ ‘যুদ্ধে বেঁচে থাকার পর যদি কেউ কিছু একটা করতে চায়, তা তার পক্ষে সম্ভব। এমনকি অলিম্পিকে চ্যাম্পিয়ন হওয়াও সম্ভব। এমনকি আমাদের মতো ছোট্ট এবং গরীর দেশের পক্ষেও সম্ভব।’
মাত্র ১৮ লাখ মানুষের দেশ কসভোর রক্তাক্ত স্বাধীনতা যুদ্ধ, সার্বিয়ার বর্বরচিত হামলার ক্ষতবিক্ষত দেশের ইতিহাসটাও যে আর একবার মনে করিয়ে দিলেন কেলমেন্দি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন