সরকারি চাকরিতে থেকেও নাশকতামূলক কর্মকান্ড পরিচালনার অভিযোগ পাওয়া গেছে ঢাকা ওয়াসার এক নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। তিনি দীর্ঘদিন ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ (আরএন্ডডি) বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তার নাম মোজাম্মেল হক। গুরুত্বপূর্ণ এই পদে থেকে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে কামিয়েছেন বিপুল অর্থ। ঢাকার কলাবাগানে কিনেছেন অভিজাত ফ্ল্যাট। কেরানীগঞ্জে কিনেছেন জমি। নাশকতামূলক কমর্কান্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ঢাকা ওয়াসা তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। তার বিরুদ্ধে চলমান রয়েছে ৩টি বিভাগীয় মামলা। ঢাকা ওয়াসার বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান।
তিন মামলা ও সাময়িক বরখাস্ত থাকার পরও তার বেপরোয়া ও সরকারবিরোধী কর্মকান্ড থামছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কে এই মোজাম্মেল? তার এই অপশক্তির উৎসই বা কোথায়?
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সংস্কারপন্থী মোজাম্মেল হক এখন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল লীগ ঢাকা ওয়াসা শাখার নেতা। দায়িত্বে অবহেলা, দুর্নীতি, অসদাচরণসহ নানা কারণে ড্রেনেজ (আরএন্ডডি) বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে ৩টি বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। গত ৪ ফেব্রæয়ারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে বলা হয়, তার বিষয়ে ৩টি বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। গত বছরের ২১ অক্টোবর বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ওয়াসা ভবন পরিদর্শনে গেলে তার নেতৃত্বে বহিরাগত ও ওয়াসার কিছু শ্রমিক-কর্মচারী মন্ত্রীকে স্বাগত না জানিয়ে উল্টো বিক্ষোভ করেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে অফিসে প্রবেশের নিয়ম লঙ্ঘন, দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ ও কর্তৃপক্ষ বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া ওয়াসার প্রতিবেদনে মোজাম্মেল হকের অতীত কর্মকান্ডের বিবরণ ও বিভিন্ন শাস্তির বিবরণ তুলে ধরা হয়। বলা হয়, ২০০৯ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির কাছে তৎকালীন ওয়াসা বোর্ডেও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেন। যদিও অভিযোগ স্বীকার করে মুচলেকা দেয়ায় তখন দু’টি ইনক্রিমেন্ট স্থগিত করে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বারবার শৃঙ্খলা ভঙ্গেরও অভিযোগ আনা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা (মামলা নম্বর ৩৩/২০১৯) তদন্তে গত ৩ মার্চ অফিস আদেশ জারি করে ওয়াসা। এতে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের পরিচালক মো. মোহসেন আলী মিয়াকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। ২০ কার্যদিবসের মধ্যে তাকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু তিনি এখনো তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেননি বলে জানা গেছে।
শুধু অশালীন আচরণই নয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে মোজাম্মেল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন। অভিজাত ফ্ল্যাট কিনেছেন কলাবাগান ৪/বি, লেক সার্কাসের ৭৫ নং বাড়িতে। তার আয়কর টিন নম্বর ৫২২৮৬৩৬৪৯৩৪৬। সেখানে এটি তার বেতন-ভাতার। এর বাইরে স্ত্রী ও সন্তানদের নামে-বেনামেও রয়েছে বিপুল সম্পদ।
ওয়াসার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, মোজাম্মেল হক দীর্ঘ দিন ড্রেনেজ সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন। ঢাকা দফায় দফায় ডুবলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। অথচ ড্রেনেজ সমস্যা দূর করতে একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, দুইজন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ৫০ জন দক্ষ জনবল নিয়ে ড্রেনেজ সার্কেল গঠন করা হয়েছে। তারা এক বছরে দৃশ্যমান কোনো সফলতা দেখাতে পারেনি। শুধু ওয়াসায় বসে কাল্পনিক প্রকল্প তৈরি করে সরকারি অর্থের অপচয় করতেন। টেন্ডার করে ঠিকাদারের যোগসাজশে ওইসব টাকা আত্মসাৎ করেন।
হাজারীবাগ কালুনগর এলাকায় ওয়াসার ইউ চ্যানেল তৈরির কাজে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মোজাম্মেল। ওয়াসার মাস্টার প্ল্যানে থাকা ইউ চ্যানেলের কাজ নিয়ে অনিয়ম করায় সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে ওয়াসার বিরোধ দেখা দেয়। স্বেচ্ছাচারিতা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছি। আমি কোনো ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। ইউ চ্যানেল বা ড্রেনেজের অন্য কোনো দুর্নীতি আমার একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। ওয়াসার মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী ইউ চ্যানেলের কাজ হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন