রোববার, ২৬ মে ২০২৪, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

গণপরিবহন খাতে অনিয়ম ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

করোনার কারণে বেশ কয়েক মাস গণপরিবহন বন্ধ থাকার ফলে সংশ্লিষ্ট সবাই গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। লকডাউন তুলে দেয়ার পর সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চলাচল শুরু হলেও এ খাতের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সরকার গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে পুরোপুরি গণপরিহন চালুর অনুমতি দিয়েছে। ফলে খাতটিতে কিছুটা হলেও গতি ফিরেছে। এ গতি ফেরার সাথে সাথে গণপরিবহনে একশ্রেণীর ট্র্যাফিক পুলিশের হয়রানির পুরনো চিত্রও ফিরে এসেছে। আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশে এ খাতে চাঁদাবাজি বন্ধ হলেও কাগজপত্র পরীক্ষার নামে একশ্রেণীর ট্র্যাফিক পুলিশের মামলাবাজি বন্ধ হয়নি। পরিবহনখাত সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও শ্রমিকদের অভিযোগ, পুলিশ জায়গায় জায়গায় বাস থামিয়ে মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পুলিশ ব্যস্ততম সড়ক থেকে শুরু করে ট্র্যাফিক সিগনালে বাস থামিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। তাদের ভাষ্য, দোষ-ত্রুটি নিয়েই গণপরিবহন চলছে। এটা সবসময়ই ছিল। ড্রাইভার-চালকদের মাস্ক না পরা কিংবা সামান্য কারণে নতুন আইনে মামলা দেয়ার কারণে তাদের হাজার হাজার টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে। কোনো বাসের বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিদিনই একাধিক মামলা দেয়া হচ্ছে। এতে বাসের সার্ভিস চার্জসহ অন্যান্য খরচ করে তাদের জীবন-জীবিকা চালানো দায় হয়ে পড়েছে। এক শ্রেণীর ট্র্যাফিক পুলিশের এই আচরণ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

গণপরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা নতুন কিছু নয়। এর শৃঙ্খলা ফেরানো নিয়ে বহু লেখালেখি হয়েছে। তাতে কোনো ধরনের উন্নতি হয়নি। ভাড়া নিয়ে বাসের কন্ডাক্টরদের সাথে যেমন যাত্রীদের নিয়মিত বচসা হয়, তেমনি ঠুনকো অজুহাতে একশ্রেণীর ট্র্যাফিক পুলিশের কথায় কথায় মামলা দেয়াও খাতটির শৃঙ্খলা ফেরানোর ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে রয়েছে। এ খাত থেকে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজির বিষয়টি পুরনো। এ চাঁদাবাজির সাথে শ্রমিক সংগঠনের একশ্রেণীর নেতা ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী যেমন জড়িত, তেমনি এর ভাগ কতিপয় পুলিশ সদস্যও পেয়ে এসেছে। চাঁদাবাজির এই অপসংস্কৃতি বন্ধ করে শৃঙ্খলা ফেরাতে বর্তমান আইজিপি আন্তরিকতার সাথে নির্দেশ দিয়েছেন। এতে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে। তবে চাঁদাবাজির মাধ্যমে যারা কোটি কোটি টাকা অবৈধ আয় করে থাকে, তারা হাল ছাড়ার পাত্র নয়। এই অর্থ আয়ের বিকল্প পথ হিসেবে ‘চাঁদাবাজি’ শব্দের পরিবর্তে ‘পরিচালন ব্যয় বা সার্ভিস চার্জ’ নাম দিয়ে তা অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা নিয়েছে। ইতোমধ্যে এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি। বিষয়টি ‘যেই কদু, সেই লাউ’-এর মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আইজিপি’র নির্দেশে তারা সব ধরনের চাঁদা তোলা বন্ধ রেখেছেন। শ্রমিক সংগঠনগুলো যদি তাদের স্বার্থে কিছু করে, তবে তার দায়দায়িত্ব তাদের। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, পরিবহন খাতের চাঁদাবাজি অব্যাহত রাখতে শ্রমিক সংগঠনগুলো হাল ছাড়তে রাজী নয়। উল্লেখ করা প্রয়োজন, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি হলে এর খেসারত দিতে হয় যাত্রী ও জনগণকে। কারণ, চাঁদাবাজির অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে বাড়তি ভাড়া যাত্রীদের কাছ থেকেই আদায় করা হয়। এখন আইজিপি’র নির্দেশে চাঁদাবাজি বন্ধ থাকলেও, একশ্রেণীর ট্র্যাফিক পুলিশের মধ্যে মামলা দেয়ার প্রবণতা ও উৎপাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারাও নাকি চাঁদাবাজি বন্ধের সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্ধ হয়ে এ কাজ করছে। তাদের এই আচরণ যে আইজিপি’র নির্দেশের পরিপন্থী, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কোনো গণপরিবহনের কাগজপত্রে ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে ট্র্যাফিক পুলিশ নিয়ম অনুযায়ী মামলা-মোকদ্দমা করতে পারে। তার পেছনে যদি হয়রানি করার মতো মানসিকতা বজায় থাকে, তবে তা কোনোভাবেই সমীচিন নয়। বলা বাহুল্য, সড়কে চলাচলকারি গণপরিবহনসহ অন্যান্য পরিবহন থেকে একশ্রেণীর পুলিশের চাঁদা আদায়ের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। এ কথাও অস্বীকার করার উপায় নেই, দেশের গণপরিবহন ও অন্যান্য যানবাহন পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত নয়। কোনো না কোনো ত্রুটি রয়েছেই। এ নিয়েই দেশের যানবাহন চলাচল করছে। এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি যদি যথাযথভাবে ধরা হয়, তাহলে ‘লোম বাছতে কম্বল উজাড়’ হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়াবে। আর এসব ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য পরিবহন সংশ্লিষ্টরা যেমন দায়ী, তেমনি বিআরটিএসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষেরও দায় রয়েছে।

গণপরিবহনের চাঁদাবাজি বন্ধে আইজিপি যে নির্দেশ দিয়েছেন, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। তিনি একটি মহৎ উদ্যোগ নিয়েছেন। তার এই উদ্যোগ যথাযথভাবে প্রতিপালিত হওয়া উচিৎ। এক্ষেত্রে চাঁদাবাজির পরিবর্তে ভিন্ন পন্থায় তা অব্যাহত থাকা এবং মামলা দেয়ার নামে একশ্রেণীর পুলিশের হয়রানিমূলক আচরণ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। আমরা আইজিপি’র নেয়া উদ্যোগ এবং নির্দেশের প্রতি আস্থাশীল। এ আশাবাদও ব্যক্ত করতে পারি, তিনি পরিবহন খাতে শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিয়ম মেনে চলার সুসংস্কৃতি চালু করার ক্ষেত্রে দৃঢ় পদক্ষেপ নেবেন। এ খাতের সব ধরনের হয়রানি, চাঁদাবাজি, ভিন্ন নামে চাঁদা আদায়ের অপচেষ্টা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন