স্বর্ণ দিয়েই সুনের জবাব
প্রথম দিন ৪০০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতারে স্বর্ণ হারিয়েছিলেন ম্যাক হর্টনের কাছে। তবে সুন ইয়াংয়ের দুঃখটা এখানে নয়, অস্ট্রেলিয়ার এই প্রতিযোগী তাকে দিয়েছিল ডোপ পাপীর তকমা। ২০০ মিটারে সোনা জিতে সেই খোঁটার জবাব দিলেন চীনের সাঁতারু। লন্ডন অলিম্পিকে ৪০০ ও ১৫০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে স্বর্ণজয়ী সুনের রিও অলিম্পিকে এটি প্রথম জয়। এজন্য ১ মিনিট ৪৪.৬৫ সেকেন্ড সময় নেন নিতি। দশমিক ৫৫ সেকেন্ড পেছনে থেকে রৌপ্য জেতেন দক্ষিণ আফ্রিকার চ্যাড লে ক্লস। অলিম্পিকে ছেলেদের ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে এটাই চীনের কোনো সাঁতারুর প্রথম স্বর্ণজয়। লন্ডনে অলিম্পিকে এই ইভেন্টে দ্বিতীয় হয়েছিলেন সুন। যুক্তরাষ্ট্রের কনর ডুয়াইর পেয়েছেন ব্রোঞ্জ পদক। পদক জয়ের পর সুনের উচ্ছ¡াসই বলে দিচ্ছিল জয়ের জন্য কতটা মরিয়া হয়েছিলেন তিনি। দুই বছর আগে নিষিদ্ধ উপাদান নেওয়ার অভিযোগে তাকে তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। হৃৎপিÐের চিকিৎসার জন্য তার ওই ওষুধ নিতে হয়েছিল বলে জানান সুন।
মারফির রেকর্ড
রেকর্ড যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেই ছিল। সেই ১৯৯৬ সালের আটলান্টা অলিম্পিক থেকে এই পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে স্বর্ণ ছিনিয়ে নিতে পারেনি কেউ। ১০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকের সেই সাঁতারে বজায় থাকল যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য। অলিম্পিক রেকর্ড গড়েই এবার স্বর্ণ পদক দখলে নিলেন রায়ান মারফি। এজন্য ২১ বছর বয়সী সময় নেন ৫১ দশমিক ৯৭ সেকেন্ড। ইভেন্টের ইতিহাসে যা দ্বিতীয় দ্রæততম টাইমিং। তারই স্বদেশি অ্যারন পিয়ারসলের ৫১ দশমিক ৯৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েন ২০০৯ সালে। তবে পিয়ারসলের এই রেকর্ডটি ছিল বিতর্কিত বডিসুট বৈধ থাকার সময়ে গড়া। চীনের শু জিয়াইয়ু ৫২.৩১ সেকেন্ড সময় নিয়ে রৌপ্য ও ৫২.৪০ সেকেন্ড সময় নিয়ে ব্রোঞ্জ জেতেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড প্লামার।
লৌহমানবীর দ্বিতীয় স্বর্ণ
আগে তিনটি অলিম্পিকে অংশ নিয়েও ছিলেন পদকশূন্য। রিও অলিম্পিকে প্রথম স্বর্ণ জিতেছিলেন ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত মিডলেতে বিশ্বরেকর্ড গড়ে। এবার ১০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকেও স্বর্ণ পদকটা দখলে নিলেন হাঙ্গেরির ‘লৌহমানবী’-খ্যাত কাতিনকা হোসসু। পুলের তীব্র এই লড়াইয়ে হোসসু পেছনে ফেলেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাথলিন ব্যাকারকে। এজন্য তিনি সময় নেন ৫৮.৪৫ সেকেন্ড। রৌপ্যজয়ী ব্যাকারে সময় নেন ৫৮.৭৫ সেকেন্ড। মাত্র দশমিক ০১ সেকেন্ডের ব্যবধানে যুগ্মভাবে ব্রোঞ্জ জেতেন কানাডার কাইল মেস ও চীনের ফু ইউয়ানহুই। সেরা চার জনের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ছিল মাত্র দশমিক ৩১ সেকেন্ড!
এফিমোভার কান্না
ডোপিংয়ের অভিযোগে ছিলেন নিষিদ্ধ। অলিম্পিক শুরুর আগে চালালেন আইনি লড়াই। সেই লড়াইয়ে জিতেই পা রাখেন রিওতে। তবে দর্শকারা তাকে সাদরে গ্রহণ করেননি। পুলে নামার আগেই দর্শকদের দুয়োতেই মন ভেঙে যায় রাশিয়ার সাঁতারু ইউলিয়া এফিমোভার। এই কষ্ট মনের মধ্যে চেপেই পুলে নেমে দাঁতে দাঁত লাগিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করলেন যুক্তরাষ্ট্রের লিলি কিংয়ের সাথে। তবে শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেননি। ১০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে অলিম্পিক রেকর্ড গড়া লিলির পেছনে থেকেই জিতেছেন রৌপ্য। এজন্য ১ মিনিট ৪.৯৩ সেকেন্ড সময় নেন লিলি। তারই স্বদেশি কেটি মাইলি পেয়েছেন ব্রোঞ্জ পদক। এফিমোভা চেয়েছিলেন সোনা জিতেই দর্শকদের জবাব দিতে। কিন্তু সেটা না পারায় নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে পুলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
রাগবি সেভেনে সেরা অস্ট্রেলিয়া
শেষবার রাগবির এই ইভেন্টটি ছিল ১৯২৪ প্যারিস আলিম্পিকে। নয় দশক পর ইভেন্টটির ক্ষুদ্র সংস্করণ রিওতে চালু হল ‘রাগবি সেভেন’ নামে। দুই অর্ধে সাত মিনিট করে মোট ১৪ মিনিটের ম্যাচ। প্রতি দলে থাকে সাত জন করে খেলোয়াড় থাকায় এমন নামকরণ। মেয়েদের এই ইভেন্টে প্রথম আসরেই বিজয়ী হলেন অস্ট্রেলিয়ার নারীরা। প্রতিবেশী দেশ নিউ জিল্যান্ডকে ২৪-১৭ পয়েন্টে হারিয়ে স্বর্ণ জিতেছে তারা। যুক্তরাজ্যকে ৩৩-১০ পয়েন্টে হারিয়ে ব্রোঞ্জ পদক দখলে নিয়েছে কানাডার নারীরা।
হাল ছেড়ো না
১৬তম জন্মদিনের উৎসব মিলিয়ে না জেতেই এলো দুঃসংবাদ। ডোপ টেস্টে পজেটিভ প্রমাণিত হওয়ায় সুকন্যা ¯্রসিুরাতকে করা হল দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা। ২০১১ সালের কথা। ফিরে এসে সেই সুকন্যাই রিও অলিম্পিকে থাইল্যান্ডকে এনে দিলেন ভারোত্তোলনের দ্বিতীয় স্বর্ণ পদক। স্বদেশি সিরিকায়েউ পিমসিরি পেয়েছেন রৌপ্য। নিজের অজান্তে ড্রাগ নিয়ে নিষিদ্ধ হলেও হাল ছেড়ে দেননি সুকন্যা। রিও জয়ের পর নিজের অদম্য মানসিকতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কারণ আমি হাল ছেড়ে দেইনি।’
আবেগঘন অস্কার
আবেগ যে একজন মানুষকে এতটা শক্তিশালী করতে পারে তা জানা ছিল না। পরশু সেটাই করে দেখালেন অস্কার ফিগুয়েরো। প্রথম কলম্বিয়ান পুরুষ হিসেবে অলিম্পিকে স্বর্ণ জিতলেন ৩৩ বছর বয়সী এই ভারোত্তলোক। নিজের চতুর্থ অলিম্পিকে এসে ৬২ কেজি ওজনশ্রেণির ভারোত্তলোকে স্বর্ণ জিতলেন অস্কার। শেষ পর্বে স্বর্ণ নিশ্চিত হওয়ার পর প্লাটফর্মেই নিজের জুতা খুলে ফেলে অবসরে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন তিনি। একজন লিজেন্ড হয়ে অবসরে যাওয়া কি সবার ভাগ্যে জোটে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন